প্রচন্ড মানসিক ও কাজের চাপ দেহ, মন ও অবস্থার উপর প্রভাব ফেলে। বয়স বাড়তে থাকলে এই প্রভাবে নানান শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে যেমন- উচ্চ রক্ত চাপ, ডায়বেটিস এবং হৃদযন্ত্রের অসুবিধা। গবেষণায় দেখা গেছে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসোল (stress hormone cortisol) মস্তিষ্কের কিছু নির্দিষ্ট নিউরণ নষ্ট করে ফেলে যার ফলশ্রুতিতে বয়সকালে মনে রাখা এবং শেখার ক্ষমতায় ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে । এ কারণেই লোমা লিন্ডা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা স্মরণ শক্তির সাথে ঐ কর্টিসোল হরমোনের সম্পর্ক এবং হাসি ও কৌতুক এর মাধমে কর্টিসোলের দ্বারা ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভাব্যতা নিয়ে গবেষণা করে আশাজনক ফল পেয়েছেন।
এই গবেষণায় যুক্ত ডঃ গুরবিন্দার সিং বেইন এবং অন্যরা একদল সুস্থ এবং বয়স্ক ব্যক্তিকে ২০ মিনিটের একটি হাসির উদ্রেগকারী ভিডিও দেখান। একই সাথে একদল ডায়বেটিস আক্রান্ত বয়স্ক ব্যক্তিদেরকেও ভিডিও চিত্রটি দেখানো হয়। ভিডিও চিত্রটি দেখা শেষে উভয় দলকেই এক ধরণের স্মরণশক্তি যাচাই প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করানো হয় যার মাধ্যমে তাদের শেখার, মনে করার এবং দেখে চেনার ক্ষমতা- এই তিনটি দক্ষতা পরিমাপ করা হয়। অতঃপর তাদের দক্ষতাকে একই ধরণের যাচাই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী আরেকটি দলের সাথে তুলনা করা হয়। এই দলটিকে অবশ্য যাচাই পক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করানোর পূর্বে হাসি উদ্রেগকারী ভিডিও চিত্রটি দেখানো হয়নি। সব দলের ক্ষেত্রেই প্রত্যেকের কর্টিসোল হরমোণের অবস্থা পরীক্ষার শুরুতে এবং শেষে নির্ণয় ও লিপিব্ধ করা হয়।
যে দু'টি দল ভিডিও চিত্রটি দেখেছিলো তাদের ক্ষেত্রে লক্ষ্যনীয় ভাবে কর্টিসোল হরমোনের পরিমাণ কমে গিয়েছিলো। যারা ভিডিও দেখেছিল তারা স্মরণ শক্তি যাচাই পরীক্ষার প্রায় সবগুলোতেই যারা ভিডিও দেখেনি তাদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে ভালো করেছিলো। তাছাড়া ডায়াবেটিস ছিল এমন দলের লোকদের ক্ষেত্রে আবার কর্টিসোল এর লেভেল সবচেয়ে বেশি পরিমাণ কমে গিয়েছিলো। অন্যদিকে ভিডিও চিত্র দেখা সুস্থ ব্যক্তিদের দল স্মৃতি শক্তি পরীক্ষায় লক্ষ্যনীয় ভাবে ভালো ফলাফল করেছিলো।
এই গবেষণার সহ-গবেষক এবং সাইকো নিউরোইমিউনোলজি হিউমার গবেষক ডঃ লি বার্ক এ সম্পর্কে বলেন, ‘এটা খুবই স্বাভাবিক যে মানসিক চাপ যত কম হবে স্মরণ শক্তি তত ভালো হবে। কৌতুক ক্ষতিকর স্ট্রেস হরমোণ যেমন কর্টিসোল এর পরিমাণ কমিয়ে দেয়, এই হরমোণ মেমোরি হিপ্পোক্যাম্পাল নিউরণ কমিয়ে দেয়, রক্তের চাপ কমিয়ে দেয় ও রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয় এবং মানসিক অবস্থা নিয়ন্ত্রন করে। হাসির কোন কাজ বা খুব সরল কোন কৌতুক বা মজার কিছু উপভোগ-মস্তিষ্কে এন্ড্রোফিন এবং ডোপামাইন নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়, যা আনন্দদায়ক একটি অনুভূতি সৃষ্টি করে। পর্যায়ক্রমে এই ধনাত্মক এবং উপকারী নিউরোক্যামিকাল পরিবর্তন ইমিউনি সিস্টেম কে ভালভাবে কার্যক্ষম রাখে। তাছাড়া ব্রেইন ওয়েভ একটিভিটিতেও পরিবর্তন ঘটে যাকে বলা হয় গামা ওয়েব ব্যান্ড ফ্রিকয়েন্সি। এটিও স্মৃতি ও স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি করে । আর তাই পরিশেষে বলতে হয় , হাসিই কেবলমাত্র উত্তম ঔষধই নয়, বরং হাসি হলো উন্নত জীবনের জন্য একটি স্মরন শক্তি বৃদ্ধিকারক উপাদান।’
বার্ধক্যে মানুষের স্মৃতি শক্তি, স্মরণ শক্তি এবং শেখার ক্ষমতা এমনেতেই বার্ধক্য জনিত কারণে কমে যেতে থাকে। তাই যদি তাদেরকে হিউমার থেরাপির মাধ্যমে তাদের স্মৃতি শক্তি, স্মরণ শক্তি এবং শেখার ক্ষমতার উন্নতি ঘটানো যায় তবে নিশ্চিত তাদের জীবর আরও অনন্দঘন হবে।
মামুন ম. আজিজ