পারফিউম বা বডিস্প্রে আমরা সবাই কমবেশি ব্যাবহার করি। হাল আমলে মিডিয়াগুলোতে পারফিউমের ভাঁড়ামিপূর্ন বিজ্ঞাপন দেখে ও অনেকে পারফিউম ব্যাবহারে আগ্রহী হয়। প্রায় সব পারফিউমেই দেখানো হয় যে আপনি ছেলে হলে মেয়েরা আপনার উপর ঝাঁপিয়ে পরবে আর মেয়ে হলে তো কথাই নাই, একটা এলাহি হাউজফুল কাণ্ড ঘটে যাবে। বাস্তবে এমনটি দেখিনি তবে কিছু মানুষের ব্যবহৃত পারফিউমের গন্ধ এতই উৎকট হয় যে তার চেয়ে ঘামের গন্ধ অনেক ভাল। তবে পারফিউম যেমনই হোকনা কেন সব সস্তা পারফিউমই মুলত উচ্চ বায়ুচাপে কিছু সুগন্ধি মিশ্রিত বোতলজাত অ্যালকোহল ।
আর আপনি যদি উচ্চাভিলাষী হন তাহলে কম অ্যালকোহলিক দামি পারফিউম ব্যাবহার করে দেখতে পারেন। মেসোপটেমিয়া এবং মিশরে পারফিউম শিল্পের সুচনা হলেও পারফিউম শিল্প বিকাশে রোমান ও পারসিয়ান সাম্রাজ্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে এযাবতকালের সবচেয়ে পুরোনো পারফিউম প্রত্নতাত্ত্বিকেরা সাইপ্রাসে পেয়েছেন যা ৪০০০বছরেরও বেশি পুরোনো। তবে ভারতীয় উপমহাদেশে পারফিউম কিন্তু শুধু গায়ে মাখা নয় খাবার কাজেও ব্যাবহার হত। পান মশলায়, গোলাপ জলে, জাফরানি মশলায় কৃত্রিম পারফিউমের ব্যাবহার ভারতীয় খাবারকে সারা পৃথিবীজুড়ে খ্যাতি এনে দিয়েছিল।
উপমহাদেশে শুরুতে খাবারে ব্যাবহৃত হত নাকি শুরুতে পারফিউম গায়ে ব্যাবহৃত হত এটা নিয়ে বিতর্কের অন্ত নেই। তবে সর্বসাধারনের কাছে পারফিউম জনপ্রিয় হয় মুঘল আমলে। এই ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় পারফিউমের স্থানিয় নাম আতর।
তবে আতর বলুন আর পারফিউম বলুন বর্তমানে এসব সুগন্ধি উচ্চচাপে বোতলজাত করে বাজারে ছাড়া হয়। মজার ব্যাপার হল এইসব বডিস্প্রে বা পারফিউম যখন আপনি স্প্রে করবেন তখন লক্ষকরে দেখবেন শরীরের যেখানে স্প্রে লাগছে সেখানে খুব ঠান্ডা মনে হয়, মনে হয় এই বোতলের ভেতর যেন বরফকুচি দেয়া আছে। লক্ষ করুন বোতলের গ্যাস ছিল উচ্চচাপে আর আপনি বোতলের ছিপি চেপে সেই গ্যাসকে অপেক্ষাকৃত নিন্মচাপ অঞ্চলে ছেড়ে দিলেন। উচ্চচাপে রাখা কোন গ্যাস কে যদি নিন্ম চাপ বিশিষ্ট কোন কক্ষে ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে তার ঐ গ্যাসের আয়তন বেড়ে যায় এবং সে চারপাশ থেকে শক্তি শোষণ করে । তাপগতিবিদ্যায় এই প্রক্রিয়াকে জুল থমসন ইফেক্ট বলে। দেখুন কোন গ্যাস যখন একটি আবদ্ধ পাত্রে সংকুচিত করে রাখা হয় তখন গ্যাসটির আয়তন কমে যায় তথা পারিপার্শ্বিক চাপে গ্যাসটি সংকুচিত হয়ে যায়।
কাচের পারফিউমের বোতলে দেখবেন ভেতরে সব তরল (গ্যাস ও পারফিউমের মিশ্রণকে একত্রে তরলিকৃত করা হয়েছে) কিন্তু বাটন চাপলেই গ্যাস বেরোয়। এই গ্যাস যখন বেরোয় তখন তা সংকোচন থেকে প্রসারিত হয় । আর এই প্রসারন তো এম্নি এম্নি হয় না, এর জন্য শক্তি লাগবে তো তাইনা? তো আপনি যখন আপনার গায়ে পারফিউম অথবা বডিস্প্রে স্প্রে করেন তখন ওই স্প্রেটুক আপনার ত্বকের তাপটুক শক্তি হিসেবে শুষে নেয় ফলে ত্বকের যেসব যায়গাতে স্প্রে লাগে সেসব যায়গাতে ঠান্ডা অনুভূত হয়। বিজ্ঞানী জুল এবং থমসনের নামে এই প্রক্রিয়াকে জুল থমসন ক্রিয়া বলা হয়।