স্মৃতিশক্তি নিয়ে সমস্যা আমাদের সবারই। সারা বছর পড়াশুনা করেও পরীক্ষার সময়ে কিছুই মনে আসতে চায় না। চাবিটা কোথায় রেখেছি তা বেমালুম ভুলে যাই। আর বয়স বাড়লে তো কথাই নেই, জুতোর ফিতে পর্যন্ত বাঁধতে মনে থাকে না। অবশ্য ভুলে যাওয়ার এই প্রক্রিয়া একেবারেই স্বাভাবিক, এমনকি আমাদের জন্য বেশ জরুরিও বটে। যে স্মৃতি আমাদের এতো মাথাব্যাথার কারণ, তার ব্যাপারে আমরা কতটুকু জানি? আসুন, আজ জানা নাক স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে বিচিত্র কিছু অজানা কথা।
দরজার কারণে নষ্ট হয়ে যায় স্মৃতি
অনেক সময়ে এমন হয়ে থাকে, একজন মানুষ নিজেকে আবিষ্কার করে একটি ঘরের মাঝে, অথচ এই ঘরে ঢোকার কোনো স্মৃতিই তার মনে নেই! গবেষকদের মতে, এক্ষেত্রে দোষ হলো ওই দরজার, যার মধ্য দিয়ে মানুষটি ঘরে প্রবেশ করেছেন। দরজা দিয়ে প্রবেশ করার ব্যাপারটায় মস্তিষ্ক মনে করে সে একটা নতুন পরিস্থিতির মাঝে যাচ্ছে এবং তখন মস্তিষ্ক স্মৃতিগুলোকে “রিফ্রেশ” করে। ফলে আমরা ঘরে ঢোকার আগের স্মৃতি ভুলে যাই। এমনকি একটি ঘরে আপনি কি করেছিলেন এবং কি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, অন্য একটি ঘরে গিয়ে সেসব মনে করাটাও কঠিন হয়ে পড়ে এই একই কারণে।
তবে এই ব্যাপারটি যে পুরোই খারাপ এমনটা মনে করা যাবে না মোটেই। আমাদের স্মৃতিগুলোকে গুছিয়ে রাখে এই প্রক্রিয়া। এছাড়া কোনো একটি বিশেষ অবস্থানে গিয়ে বিশেষ স্মৃতি মনে করার ব্যাপারটাও অনেক সময়ে কাজে লাগে।
স্মৃতি মুছে দেয় যেসব কাজ
দুর্লভ হলেও, এমন কিছু কাজ আছে যারা মাঝে মাঝে আমাদের স্মৃতি মুছে দিতে পারে। স্মৃতির ধোঁয়াশাও অনেক সময়ে দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, শারীরিক মিলনের দোলে অনেক সময়ে মানুষ আগের দিন কি করেছে তা ভুলে যায়। একে বলা হয়ে থাকে “ট্রানসিয়েন্ট গ্লোবাল অ্যামনেশিয়া”। এটা মানুষের তেমন কোনো ক্ষতি করে না, কয়েক ঘন্টার মাঝেই এর প্রভাব চলে যায়। তবে এটা কিভাবে হয় সে ব্যাপারে কিছু জানা যায় না।
আমাদের মনে না থাকলেও স্মৃতি কিন্তু ঠিকই বেঁচে থাকে
ভুলে যাওয়া গানগুলো কি এখনও আমাদের মস্তিষ্কের ভেতরে রয়ে গেছে?
Frontiers in Neurology জার্নালে একটি অদ্ভুত ব্যাপার প্রকাশিত হয়। একজন নারী হ্যালুসিনেশনে একটি গান শুনতে পান যা তিনি চিনতে পারেননি, কিন্তু তার আশেপাশের অন্যরা ঠিকই চিনতে পারে। এ থেকে ধারনা করা হয়, ওই গানের স্মৃতি আসলে তার মস্তিষ্কে রয়ে গেছিলো, কিন্তু এই স্মৃতির কিছু মূল অংশ মুছে যাওয়ায় তিনি গানটি মনে করতে পারছিলেন না।
মস্তিষ্ক ইচ্ছে করেই শৈশবের স্মৃতি মুছে ফেলে
একেবারে শিশুকালের স্মৃতি আমরা কেউই মনে রাখতে পারি না। বিশেষ করে ৩/৪ বছর বয়সের আগের স্মৃতি। একে বলে ইনফ্যান্টাইল অ্যামনেশিয়া। ধারণা করা হয় মস্তিষ্ক সে সময়ে বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে যায় এবং এ কারণে আগের স্মৃতি মুছে ফেলে।
মস্তিষ্কে আঘাতের ফলে স্মৃতি মুছে যায়
দুর্ঘটনার পর তার আগের স্মৃতি মানুষ অনেক সময়ে ভুলে যায়। শুধু তাই নয়, মস্তিষ্কে কোনো ক্ষত থাকলে নতুন স্মৃতিও তৈরি হতে পারে না। মস্তিষ্কে জমা হবার আগেই তারা মুছে যায়।