প্রাচীন মিশরীয়দের তৈরি পিরামিডের ভারী পাথরের ব্লকগুলো মরুভূমির মধ্যে দিয়ে অদ্ভুত এক কলের(স্লেড) মাধ্যমে ঠেলে স্থানান্তর করা হত। আর এজন্য মরুভূমির নির্দিষ্ট পথে স্লেডের সামনে শুকনো বালিগুলোকে প্রথমে পানিতে ভিজিয়ে নেয়া হত। এভাবেই তারা বিশালাকার একেকটি পিরামিডকে স্থানান্তরে সক্ষম ছিল।
অনুসন্ধানে ইউনিভার্সিটি অব অ্যামস্টারডামের পদার্থবিজ্ঞানী উল্লেখ করেন, একটি কৌশল অবলম্বন করে ভারী অবজেক্টগুলোকে মরুভূমির বালির উপর স্লেডের মাধ্যমে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হত। আর এই কৌশলটি হল স্লেডের সামনের শুষ্ক বালিগুলো পরিমাণ মতো পানিতে ভিজিয়ে নিলে ভেজা বালি এই আদিম ডিভাইস স্লেডের ঘর্ষণ কমিয়ে দিয়ে এর চলার পথ খুব সহজ করে দেয়।
ফলশ্রুতিতে একটি অন্যতম ঐতিহাসিক রহস্যের স্থায়ী সমাধান মিলে যায়- কীভাবে মিশরীয়রা অসম্ভব(আপাতদৃষ্টিতে) এই পিরামিড তৈরি করল!
তাদের এই আবিষ্কারটি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে গবেষকরা প্রাচীন মিশরীয়দের কাছে থেকেই সূত্র খুঁজে পান। ডিজেহুটিহোটেপের পুরনো এক মন্দিরের দেয়ালে আঁকা একটি ছবি আবিষ্কার করা হয়। যার গায়ে খোদাই করে তারিখ লেখা খ্রিষ্টপূর্ব ১৯০০। ছবিতে একটি বিশালাকার পরিবহণের ভাস্কর্যে ১৭২ জন লোককে স্লেডের সাথে বাঁধা রশি টানতে দেখা যায়। একই সাথে ছবিটিতে স্লেডের সামনে একজন লোককেও বালির উপর পানি ঢালতে দেখা যায়।
ইউনিভার্সিটি অব অ্যামস্টারডামের পদার্থবিজ্ঞানের প্রফেসর ও গবেষণা প্রধান ড্যানিয়েল বন বলেন,‘মিশর-বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী এটা কেবল একটা আনুষ্ঠানিক রীতির প্রকাশ পায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কেন এটা করতেন?’
বন ও তার সহকর্মীরা একটি ছোট স্লেড তৈরি করে বালির ট্রের উপর একটি বড় অবজেক্টকে ঠেলে পরীক্ষা করে দেখেন। তারা লক্ষ্য করেন, যখন শুকনো বালির উপর স্লেডটি টানছিলেন, এই অদ্ভুতদর্শন কলের সামনে একটি বালির ডেলা তৈরি হয়ে যায়, যাকে ঠেলে নিতে আরও অত্যধিক শক্তির প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
বালির সাথে পানি মিশালে স্লেডের দৃঢ়টা বাড়ে, স্লেডটি এবার আগের চেয়ে সহজেই ভূমির উপর গড়াতে পারে। এর কারণ, এই পানির ফোঁটা বালির কণাগুলোকে পরস্পরের সাথে আঁটসাঁট করে ফেলে। এই একই কারণে স্যান্ডক্যাস্টেলেও শুকনো বালি ব্যবহারের চেয়ে ভারী বালির ব্যবহার সুবিধাজনক।
কিন্তু এখানেও গবেষকরা একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্যের প্রয়োজনীয়তা খুঁজে পান । শুকনো বালি ব্যবহার করা হলে এটা খুব ভালো কাজ করবে না, কিন্তু বালি খুব ভারী হয়ে গেলে, এটাও ভালো কাজ দেবে না । এখানে বালির একটি পরিমিত পরিমাণ দৃঢ়টা থাকতে হয় । বালির ধরণের উপর নির্ভর করে সাধারণত বালির আয়তনের ২ থেকে ৫ পার্সেন্ট পানি যোগ করার প্রয়োজন হয় ।
বন আরও বলেন ‘ছবিটি এই ব্যাখ্যা দেয় যে, মিশরীয় মরুভূমির ভেজানো বালি কিছুটা হলেও ঘর্ষণ কমায় । তখন শুকনো বালির তুলনায় ভেজা বালির উপর স্লেড টানতে আগের চেয়ে অর্ধেক কম লোকের দরকার হয় ।’