যে সময়টাতে বাঙালি জাতি কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে যায়, যে সময়টাতে বাসার ছাদে গেলে মনে হবে বাংলাদেশ হচ্ছে আর্জেন্টিনা অথবা ব্রাজিলের উপনিবেশ, যার মাঝে ভাগ বসিয়েছে আরও কয়েকটি দেশ, যে সময়টাতে চায়ের কাপের আড্ডায়, অফিসে অথবা ভ্রমনে যে যেখানে থাকুক গায়ে জ্বর লেগেই থাকে। সে সময় চলে এসেছে। আর মাত্র ৩৯ দিন বাকি "দ্যা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ" বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৪ শুরু হতে।
প্রায় সবাই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিশ্বকাপ জ্বর মোকাবেলা করার। প্রিয় দলের জার্সি কেনা শুরু করেছেন অনেকে। বিশাল আকৃতির পতাকা তৈরির অপেক্ষায় দর্জিরা। আমাদের জীবনে এরকম একটি আনন্দঘন ও উত্তেজনায় ভরপুর সময় ৪ বছরে একবারই আসে। স্থায়ী হয় এক মাস। আবার যখন বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যায়, অনেককে দেখা যায় মনমরা হয়ে বসে থাকতে। হ্যাঁ, আমরা বাংলাদেশী- এতটাই ফুটবল ভালোবাসি, এতটাই ক্রেজি হয়ে যাই বিশ্বকাপের সময়! শুধু আমরাই নই বিশ্বব্যাপী ১২ জুন দিবাগত রাত (বাংলাদেশ সময়) থেকে সমগ্র বিশ্বে শুরু হবে ফুটবল উন্মাদনা।
এবারের উত্তেজনা ও আকর্ষন আরও বেশি হওয়ার কারন- খেলা যে হবে ব্রাজিলে! ব্রাজিল সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। সাম্বার তালে তালে হবে এবারের বিশ্বকাপ, উপভোগ করবে সারা বিশ্ব।
বরাবরের মত এবারের বিশ্বকাপেও রয়েছে ৮টি গ্রুপ। প্রতি গ্রুপে ৪টি করে মোট ৩২টি দল অংশ নিচ্ছে এই ফুটবল যজ্ঞে। বাদ পড়েছে সুইডেনের মত দল, খেলবেন না তেভেজ, ইব্রাহিমোভিচের মত ফুটবলার। তবে বিশ্বকাপ ফুটবলে তারকার কমতি হবে না। মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, নেইমার, স্যামুয়েল এতো, পিরলো, রুনি, জাভি, ইনিয়েস্তারা দ্যুতি ছড়াবেন মাঠে- এটাই সবার প্রত্যাশা।
গ্রুপ এ: ব্রাজিল, ক্রোয়েশিয়া, মেক্সিকো, ক্যামেরুন
গ্রুপ বি: স্পেন, নেদারল্যান্ডস, চিলি, অষ্ট্রেলিয়া
গ্রুপ সি: কলাম্বিয়া, গ্রীস, আইভরি কোস্ট, জাপান
গ্রুপ ডি: উরুগুয়ে, কোস্টারিকা, ইংল্যান্ড, ইটালি
গ্রুপ ই: সুইজারল্যান্ড, ইকুয়েডর, ফ্রান্স, হন্ডুরাস
গ্রুপ এফ: আর্জেন্টিনা, বসনিয়া হার্জেগোভিনা, ইরান, নাইজেরিয়া
গ্রুপ জি: জার্মানি, পর্তুগাল, ঘানা, যুক্তরাষ্ট্র
গ্রুপ এইচ: বেলজিয়াম, আলজেরিয়া, রাশিয়া, কোরিয়া রিপাবলিক
গ্রুপ বি: স্পেন, নেদারল্যান্ডস, চিলি, অষ্ট্রেলিয়া
গ্রুপ সি: কলাম্বিয়া, গ্রীস, আইভরি কোস্ট, জাপান
গ্রুপ ডি: উরুগুয়ে, কোস্টারিকা, ইংল্যান্ড, ইটালি
গ্রুপ ই: সুইজারল্যান্ড, ইকুয়েডর, ফ্রান্স, হন্ডুরাস
গ্রুপ এফ: আর্জেন্টিনা, বসনিয়া হার্জেগোভিনা, ইরান, নাইজেরিয়া
গ্রুপ জি: জার্মানি, পর্তুগাল, ঘানা, যুক্তরাষ্ট্র
গ্রুপ এইচ: বেলজিয়াম, আলজেরিয়া, রাশিয়া, কোরিয়া রিপাবলিক
আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে গ্রুপ ডি হচ্ছে এবারের ‘গ্রুপ অফ ডেথ’ এবং অন্যদিকে গ্রুপ ই সবচেয়ে সহজ গ্রুপ। এসবের হিসবে আপনারা করতে থাকুন, ফলাফল দেখা যাবে খেলার মাঠে।
মাঠের প্রসঙ্গ যখন আসলো- ব্রাজিলের ১২টি শহরের ১২টি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে এবারের বিশ্বকাপের খেলা। দেখে নেয়া যাক একে একেঃ
১। এস্তাদিও মিনিয়েরাও: শহরটির নাম "বেলো হরিজন্টে" ব্রাজিলের ঐতিহাসিক ফুটবল স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে এটি একটি। এর দর্শক ধারন ক্ষমতা ৫৭ হাজার ৪শ’ ৮৩। এখানে একটি সেমিফাইনালসহ অনুষ্ঠিত হবে ৬টি খেলা।
২। এস্তাদিও ন্যাসিওনাল দি ব্রাসিলিয়া: ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়াতে অবস্থিত এই স্টেডিয়াম এবারের বিশ্বকাপের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্টেডিয়াম। এর ধারন ক্ষমতা ৬৮ হাজার ৯। এখানে অনুষ্ঠিত হবে ৭টি খেলা, যার মধ্যে রয়েছে একটি কোয়ার্টার ফাইনালের খেলা।
৩। এরিনা প্যানটানাল: স্টেডিয়ামটি কুইয়াবা শহরে অবস্থিত। দৃষ্টিনন্দন এই স্টেডিয়ামের ধারন ক্ষমতা ৪২ হাজার ৯ শ’ ৬৮।
৪। এরিনা দা বাইক্সাডা: কুরিটিবা শহরে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামের নির্মান কাজ শেষ হয় ১৯৯৯ সালে। এর ধারন ক্ষমতা ৪০ হাজার ৯শ’ ৮২ এবং এখানে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপের ৪টি খেলা।
৫। এস্তাদিও কাস্তেলাও: ফরটালেজা শহরের এই স্টেডিয়াম বেশ পুরনো। তৈরি হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। এবারের বিশ্বকাপের জন্য নতুন করে সাজানো হয়েছে স্টেডিয়ামটি। এর ধারন ক্ষমতা ৬৪ হাজার ৮শ’ ৪৬।
৬। এরিনা অ্যামাজনিয়া: নাম শুনেই বুঝতে পারছেন এটি সুবিশাল অ্যামাজন রেইন ফরেস্টের আশে পাশে কোথাও অবস্থিত একটি স্টেডিয়াম। শহরটির নাম মানাউস। মজার ব্যাপার স্টেডিয়ামটি রক্ষনাবেক্ষণের জন্য যে পানি ব্যবহার করা হয়ে থাকে তার বেশিরভাগই বৃষ্টির পানি। আঁচ করতে পারছেন নিশ্চই? বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এই মাঠে খেলা চলাকালীন সময়ে। এর দর্শক ধারন ক্ষমতা ৪২ হাজার ৩শ’ ৭৭। গ্রুপ পর্যায়ের ৪টি খেলা এখানে অনুষ্ঠিত হবে।
৭। এস্তাদিও দাস দ্যুনাস: ১৯৭২ সালে নাটাল শহরে স্থাপিত হয় এই স্টেডিয়ামটি তবে বিশ্বকাপের জন্য সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয় এটিকে। এর ধারন ক্ষমতা ৪২ হাজার ৮৬।
৮। এস্তাদিও বিইরা-রিও: গুইয়াবা নদীর কোল ঘেঁষে পোর্টো অ্যালেগ্রে তে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামের ধারন ক্ষমতা ৫১ হাজার ৩শ’। রাউন্ড অফ সিক্সটিনের খেলা সহ মোট ৫টি খেলা অনুষ্ঠিত হবে এখানে।
৯। এরিনা পারনামবুকো: শহরটির নাম রেসিফ। এটি ব্রাজিলের নর্থ রিজিওনে অবস্থিত এবং উত্তর দিকের সবচেয়ে বড় মেট্রোপলিটান এরিয়া। পারনামবুকো স্টেডিয়ামটি তৈরি শেষ হয় ২০১০ সালে, এর ধারন ক্ষমতা ৪৬ হাজার ১শ’ ৫৪।
১০। এস্তাদিও দো মারাকানা: এটি ব্রাজিলের সবচেয়ে ব্যাস্ত শহর রিও ডি জেনেরিও তে অবস্থিত। এবারের বিশ্বকাপে এটিই সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম। এর ধারন ক্ষমতা ৭৬ হাজার ৯শ’ ৩৫। এখানে এবারের বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা সহ অনুষ্ঠিত হবে মোট ৭টি খেলা।
১১। এরিনা ফন্টে নোভা: শহরটির নাম সংক্ষেপে সালভাদোর। পুরো নাম "সালভাদোর দা বাহিয়া দে টোডোস ওস সান্তোস" যার অর্থ "City of the Holy Saviour of the Bay of all Saints"। এ শহরে অবস্থিত ফন্টে নোভা স্টেডিয়ামটির নির্মান কাজ ২০১০ সালে শেষ হয়। এর ধারন ক্ষমতা ৫৬ হাজার। এখানে অনুষ্ঠিত হবে একটি কোয়াটার ফাইনালসহ মোট ৫টি খেলা।
১২। এরিনা দি সাও পাওলো: স্টেডিয়ামের নামের সাথে মিশে আছে শহরটির নাম। সাও পাওলো। ২০১৪ সালে মাত্র কয়েকদিন আগে এর কাজ শেষ হয়। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী খেলায় ব্রাজিল বনাম ক্রোয়েশিার খেলা অনুষ্ঠিত হবে এই মাঠে। এর ধারন ক্ষমতা ৬৮ হাজার।
বেশিরভাগ স্টেডিয়ামগুলো নতুন। বিশ্বকাপ ২০১৪ কে সামনে রেখে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং বেশ কিছু পুরনো স্টেডিয়াম সংস্কার করা হয়েছে। কোন স্টেডিয়াম টি আপনার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে?
সবার মত আমরাও (প্রিয় টিম) বিশ্বকাপ ফুটবল জ্বরে আক্রান্ত হয়েছি। কিন্তু আপনাদের সাথে থাকব সবসময়। বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে আরও আর্টিকেল পড়তে চোখ রাখুন নিয়মিত।