সাময়িকী.কম
দেশের ফেসবুক ও ওয়েবসাইটগুলোর মাঝে ‘বাঁশেরকেল্লা’ একটি পরিচিত নাম। ইন্টারনেটে নিয়মিত ব্রাউজ করা যেকেউ নামটা শুনলেই বুঝে যাবে, বাঁশেরকেল্লা সাধারণত কী করে। যুদ্ধাপরাধের ফাঁসির দাবিতে, তথা কাদের মোল্লার প্রথম বিতর্কিত রায়ের পর তার ফাঁসির দাবিতে দেশের মানুষ যখন ফুঁসে উঠেছে, তখন থেকেই এই নামটা আলোচনায় চলে আসে। গণজাগরন মঞ্চ থেকে শুরু করে যুদ্ধাপরাধের ফাঁসির দাবিতে যাবতীয় আন্দোলনকে বিতর্কিত করে দিতে প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালানো হয় এই ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেইজ থেকে। অবশেষে এই বাঁশেরকেল্লার রহস্য উন্মোচিত হল।
জানা গেছে, ‘বাঁশেরকেল্লা’র নেপথ্যে রয়েছে জমির টেলিকম! সম্প্রতি অনলাইন তথ্য অনুসন্ধানে বাঁশেরকেল্লার রেজিস্ট্রান্ট হিসেবে লন্ডনপ্রবাসী জমির টেলিকমের হেড অব টেকনিক্যাল সাপোর্ট সারওয়ার আলমের নাম থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। বর্তমানে সেই বাঁশেরকেল্লা ওয়েবসাইটের লিংক বন্ধ থাকলেও ফেসবুক পেজ এখনও চালু রয়েছে। একই সঙ্গে সারওয়ার আলমের ফেসবুক টাইমলাইনে ব্যক্তিগত পছন্দের তালিকায় ‘কিক লতিফ সিদ্দিকী আউট’ নামে একটি ফেসবুক পেজের লিংক দেওয়া হয়েছে, যেখানে জমির টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বক্তব্যসংবলিত বিভিন্ন ওয়েবসাইটের লিংকসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অসংখ্য বিকৃত পোস্ট ও কার্টুন রয়েছে।
তবে এবিষয়ে সারওয়ার আলম বলেন, বাঁশেরকেল্লা নামে কোনো অনলাইনের নাম তিনি আগে কখনও শোনেননি, এর সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টিও অবান্তর। বাঁশেরকেল্লার রেজিস্ট্রান্ট হিসেবে যে সারওয়ার আলমের নাম আছে, সেটা তার নয় বলেও তিনি জানান।
তিনি বলেন, ফেসবুক টাইমলাইনে তার নাম ‘সারওয়ার আলম’ থাকলেও তার প্রকৃত নাম সারওয়ার ই আলম এবং দাফতরিক যেকোনো কাজে তিনি এই নাম ব্যবহার করেন। যেহেতু বাঁশেরকেল্লার রেজিস্ট্রান্ট সারওয়ার আলমের নামের ক্ষেত্রে ‘ই’ অক্ষরটি নেই, এ কারণে ওই নামটিও তার নয়।
তিনি দাবি করেন, জমির টেলিকমের কোনো পর্যায়ের কেউই বাঁশেরকেল্লার সঙ্গে জড়িত নন। ২০০৮ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানে চাকরির অভিজ্ঞতায় তিনি এ ব্যাপারে নিশ্চিত। ‘কিক লতিফ সিদ্দিকী আউট’ নামে ফেসবুক পেজে তার ‘লাইক’ থাকার কথা তিনি স্বীকার করেন। তবে পেজটি কারা খুলেছে, সেটি তিনি জানেন না।
একটি জাতীয় দৈনিকের সুত্রে জানা গেছে, লন্ডনপ্রবাসী সারওয়ার আলমের ফেসবুক টাইমলাইনে ব্যক্তিগত তথ্যের তালিকায় তার পদবি দেওয়া আছে হেড অব টেকনিক্যাল সাপোর্ট, জমির টেলিকম। আবার বাঁশেরকেল্লার ডোমেইন-সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যে দেখা যায়, এ সাইট রেজিস্ট্রি করা হয়েছে সারওয়ার আলমের নামে। ডোমেইন খোলার তারিখ ২০১৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫। ঠিকানা দেওয়া হয়েছে- ৬৫ রবার্ট স্ট্রিট, রিজেন্ট পার্ক এস্টেট, লন্ডন, ক্যামডেন।এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, আইটি প্রধান হিসেবে সারওয়ার আলমের নামে বাঁশেরকেল্লার ডোমেইন রেজিস্ট্রান্ট হলেও তিনি এ সাইট পরিচালনার সঙ্গে ছিলেন না। মূল সাইট পরিচালনায় ছিলেন জমির টেলিকমের অন্য কয়েকজন কর্মকর্তা। বাংলাদেশেও ৮-১০ জনের একটি গ্রুপের কাছে বাঁশেরকেল্লা ওয়েবসাইটের এন্ট্রি পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়। ফলে বাংলাদেশ থেকেও অসংখ্য বিকৃত ছবি ও তথ্য এখানে দেওয়া হয়। একই সময়ে ফেসবুকে বাঁশেরকেল্লা পেজ খোলা হয়। জমির টেলিকমের সংশ্লিষ্টরা প্রথমে লন্ডন থেকে বাঁশেরকেল্লার মূল সাইটে ভুয়া তথ্য ও বিকৃত ছবি আপলোড করতেন এবং পরে দেশে ছাত্রশিবিরের একটি বড় বাহিনী ফেসবুকে খোলা বাঁশেরকেল্লা পেজে এসব তথ্য ও ছবি শেয়ার করত। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের পর বাঁশেরকেল্লা অনলাইনটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। তবে ফেসবুকে বাঁশেরকেল্লা পেজ চালু থাকে। বর্তমানে বাঁশেরকেল্লা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে একইভাবে অপপ্রচার চলছে। একই সঙ্গে ফেসবুকে খোলা হয়েছে ‘কিক লতিফ সিদ্দিকী আউট’ নামে আরেকটি পেজ। সারওয়ার আলমের ফেসবুক টাইমলাইনে তার পছন্দের ফেসবুক পেজের তালিকায় এ পেজটিও আছে। পেজটির প্রতিটি পোস্ট বর্তমান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে কটাক্ষ এবং কঠোর সমালোচনা করে লেখা। পেজটিতে টেলিযোগাযোগ খাতে বর্তমান সরকারের দুর্নীতির অভিযোগ করে জমির টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নওফেল জমিরের দেওয়া সাক্ষাৎকারও আছে।