'খারাপ ডাক্তার-খারাপ ইঞ্জিনিয়ার-খারাপ সাংবাদিক’ বলে কিছু নেই, আছে “খারাপ মানুষ”। এরাই বিভিন্ন প্রফেশনকে কলুষিত করে।
আমি নিশ্চিত; তাদেরকে, সেই প্রফেশনের ভাল-মানুষেরাও ঘৃণা করে। এই ঘৃণিত খারাপ মানুষদের ঠিক করার দায়িত্ব, সেই প্রফেশনের ভাল মানুষদেরকেই নিতে হবে; নাহলে ব্লেইম, ভালোদের উপরেই এসে পড়বে।
দুটো গল্প বলি-
একবার একটি অফিসিয়াল ইস্যু নিয়ে আমার কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে সামান্য ঝামেলা হয়েছিল। পরে অবশ্য খুব ডিপ্লোমেটিক ভাবে বিষয়টা আমি মেনেজ করি। বিষয়টার সুরাহা হবার পরে, আমি সাংবাদিকদের সাথে কোলাকুলি করে বিদায় নিয়ে চলে আসি।
পরের দিন দুই পত্রিকার দুইজন সাংবাদিক এটা নিয়ে রিপোর্ট করে, একজন লেখেন যে, “আমি অত্যন্ত ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যের সহিত অভিযোগকারীকে বুকে জড়িয়ে ধরি”
আর আরেকজন সাংবাদিক লেখেন যে, “আমি নাকি চাপা দিয়ে ওরে মেরে ফেলতে উদ্যত হয়েছিলাম”... সে নাকি কোনও মতে আমার কাছ থেকে পালিয়ে বেঁচে এসেছে।
বাপ আমার... সাইজে একটু বড় হতে পারি তাই বলে আমি তো আর হনুমান না… বা, তুই কমলালেবু না, যে ইচ্ছা থাকলেই তোরে আমি চিপে জুস বের করে দিতে পারি।
কেউ কোনও দিন শুনেছে যে একজন একজনকে এভাবে চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছে??
আমার বড় মেয়ের জন্মের পর পর একটা মাইনর (tongue tie) সার্জারি করতে হয়েছিল, বয়স তখন তার ১১ দিন।
ঢাকা শহরের এক নামকরা প্রাইভেট হাসপাতালের সার্জন সে। মেয়েকে ওটিতে ঢুকানোর আগে, আমি একা তার রুমে গেলাম দেখা করতে। হাসিখুশি মানুষ... আমি প্রচন্ড রকমের ইম্প্রেসড।
ইম্প্রেস না হলে আমি অবশ্যই আমার ১১ দিনের মেয়েকে তার হাতে তুলে দিতাম না
তার রুম থেকে বের হওয়ার আগে তিনি আমাকে বললেন, “ব্রাদার ওটির নিচে যখন নিচ্ছিই, একবারে মুসলমানীটাও করে ফেলি তার... কি বলেন?”
আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো... বলে কি ডাক্তার! আমার কন্যার মুসলমানী করে ফেলবে!!!!
আমাদের প্রবলেম হলো; “আমরা যখন কারো সম্পর্কে বলি, তখন খারাপটাই আগে বলি” ... এটা হলো আমাদের অভ্যাস।
পরে কিন্তু সেই ডাক্তারই আমার মেয়ের সার্জারিটা করেছিলো... এবং অত্যন্ত সফল ভাবে করেছিলো।
সেটা কিন্তু আমি আগে বললাম না... শেষের দিকে এসে, এক লাইনে কোনও মতে কাজ সেরে ফেললাম।
ঠিক যেমন আমরা যখন রাস্তায় জ্যামে পড়ি, তখন ট্রাফিককে গালি দিয়ে উদ্ধার করি... কিন্তু যেদিন জ্যাম থাকে না, সেদিন কিন্তু গাড়ি থামিয়ে তাকে থ্যাংক ইউ দেই না। সে ‘থ্যাংকস’ আশাও করে না।
তেমনি কোনও ডাক্তারও আশা করে না যে প্রত্যেকটা সাকসেসফুল কেইসের পর রোগীর আত্মীয়স্বজন তার চেম্বার, মিষ্টি দিয়ে ভরে ফেলবে।
কোনও সাংবাদিকও আশা করে না। প্রত্যেকটা সাকসেসফুল কেইসের স্টাডির পর তাকে নিয়েই সংবাদপত্রে, সংবাদ হবে। তারা যা করে মন থেকেই করে।
যারা মন থেকে করে না, তারা ‘খারাপ ডাক্তার’ বা ‘খারাপ সাংবাদিক’ না ... তারা “খারাপ মানুষ”।
একজন সাংবাদিক, কোনোদিনই রিপোর্ট করে একজন খারাপ ডাক্তারকে লাইনে আনতে পারবে না বা একজন ডাক্তারও কোনও দিনই, ধরে বেঁধে সেন্স ফিরে পাওয়ার ইনজেকশন পুশ করে একজন সাংবাদিককে সেন্সেবল বানাতে পারবে না।
“এই ঘৃণিত খারাপ মানুষদের ঠিক করার দায়িত্ব, সেই প্রফেশনের ভাল মানুষদেরকেই নিতে হবে”
তা না হলে ভালোদের উপরে, ব্লেইম এসে পড়বেই...এবং পড়তেই থাকবে