গরম এলেই ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে। হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া-আক্রান্ত নানা বয়সের রোগীর ভিড়। আর দুই বছরের নিচে শিশুদের ডায়রিয়ার প্রধান কারণ হলো, রোটা ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। চারদিকে ভয়াবহ গরমে যখন গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়, ঠিক এই সময় চোখের সামনে যে ঠান্ডা পানীয় পাক না কেন, তা দিয়ে গলা ভেজানোতেই মন পাগল হয়ে যায়। দেখার সময় থাকে না তা বিশুদ্ধ বা দূষিত কি না? এভাবে এই খাদ্য ও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে।
এই বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, গরমে প্রচণ্ড পিপাসায় অনেকেই রাস্তাঘাটের শরবত, পানি, পানীয়, বিভিন্ন ফল ইত্যাদি পান বা খেয়ে থাকেন। কিন্তু রাস্তাঘাটের অধিকাংশ খাবার দূষিত থাকে, তাই গরমে এই দূষিত খাবার খেয়েই অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। একটু সচেতন হলে এটি এড়ানো যায়। এই যেমন হাত পরিষ্কার করে খাবার খেলে। বাসি, পচা খাবার না খেলে।

ডায়রিয়া কী
সাধারণত পরিপাকতন্ত্রে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমণের কারণেই ডায়রিয়া হয়ে থাকে। আমাদের দেশে এ সময় ব্যাপক হারে ডায়রিয়ার প্রধান কারণ রোটা ভাইরাস, কখনো কখনো নোরো ভাইরাস। তবে পাতলা পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে বা প্রবল জ্বর দেখা দিলে তা ভাইরাস নয়, বরং ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমণের কারণে হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।

কেন এটি হয়
অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, যেখানে-সেখানে ও পানির উৎসের কাছে মলত্যাগ, সঠিক উপায়ে হাত না ধোয়া, অপরিচ্ছন্ন উপায়ে খাদ্য সংরক্ষণ এবং ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে এ সময় দোকান, রেস্তোরাঁ বা বাসায় ফ্রিজের খাবারে পচন ধরা ইত্যাদি ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ।

ডায়রিয়া হলে কী করবেন
ডায়রিয়া হলে শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়ে যায় এবং রক্তে লবণের তারতম্য দেখা দেয়। এ দুটোকে রোধ করাই ডায়রিয়ার মূল চিকিৎসা।
প্রাথমিক পরিচর্যা
 প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর বয়স অনুযায়ী পরিমাণমতো খাবার স্যালাইন পান করাতে হবে।
 জন্ম থেকে দুই বছর: ১০-২০ চা চামচ (৫০-১০০ মি.লি.)
 দুই বছর থেকে ১০ বছর: ২০-৪০ চা চামচ (১০০-২০০ মি.লি.)
 ১০ বছর বা তার বেশি বয়সে: যতটুকু খেতে পারে।
 খাবার স্যালাইন ছাড়াও ঘরে তৈরি তরল খাবার যেমন ডাবের পানি, ভাতের মাড়, চিড়ার পানি, তাজা ফলের রস ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে।
 স্বাভাবিক খাবারও পাশাপাশি চালিয়ে যেতে হবে।
 বুকের দুধ খাওয়া শিশুরা খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি বুকের দুধও খাবে।
এ ছাড়া পাতলা পায়খানার সঙ্গে রক্ত, জ্বর, প্রচণ্ড পেটব্যথা বা কামড়ানো, পিচ্ছিল মল, মলত্যাগে ব্যথা ইত্যাদি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে। যথেষ্ট প্রস্রাব হচ্ছে কি না লক্ষ করতে হবে। প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, চোখ গর্তে ঢুকে যাওয়া বা জিভ ও ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া পানিশূন্যতার লক্ষণ। এসব লক্ষণ দেখা দিলে বা বমির কারণে পর্যাপ্ত স্যালাইন না খেতে পারলে হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয়
 রাস্তাঘাটের শরবত, পানি, খাবার ইত্যাদি পান পরিহার করতে হবে।
 পচা-বাসি খাবার খাওয়া যাবে না।
 হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করে খাবার খেতে হবে।
 ছয় মাসের কম বয়সী শিশুকে শুধু মায়ের দুধ ও স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
 যদি সম্ভব হয় তবে শিশুকে অসুস্থ লোক বা রোগী থেকে দূরে রাখতে হবে।
 খাবার তৈরির আগে, শিশুকে খাওয়ানোর আগে এবং পায়খানার পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।
 সব সময় সেদ্ধ ঠান্ডা পানি ব্যবহার করতে হবে।
 বোতলের দুধ পান করানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
 ছোট বাচ্চাদের খাওয়ানোর সময় চামচ ব্যবহার করতে হবে।
 পাকা পায়খানা ব্যবহার করতে হবে।
গ্রন্থনা: মো. শরিফুল ইসলাম
বিভাগ:

Author Name

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.