যানজটে আটকে থাকা বাসের ভেতরে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে নেমে গেলেন রাস্তায়। গরমে অতিষ্ট হয়ে উঠছে শরীর। তাই কতক্ষণ আর থমকে থাকা বাসে বসে থাকা যায়। এবার হেঁটেই যাচ্ছেন গন্তব্য। এদিকে মাথার উপর প্রখর রোদ। রোদের তাপে শরীর থেকে দরদর করে ঝরছে ঘাম। গাছের ছায়ায় একটু জিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই পথে। ইট-পাথরের এই শহরের রাস্তায় তো গাছই নেই! তৃষ্ণায় ফেটে যাচ্ছে গলা। হাঁটতে হাঁটতেই পথের পাশে আখের রসের একটা রিকশাভ্যান পাওয়া গেল। আখ ছেঁচে রস বের করে বিক্রি করছে বিক্রেতা। গরম থেকে একটু তৃপ্তি পেতে অনেকেই ভিড় করছে সেখানে। আপনিও এগিয়ে গেলেন গলা ভেজাতে, তৃষ্ণা মেটাতে। এক গ্লাস ঠাণ্ডা আখের রস খেয়ে যেন ভেতরটা কিছু হলেও শীতল একটা খবর জানান দিল। কিন্তু একবার ভেবে দেখছেন কী, এই রসের কারণে আপনার ভেতরে রোগবালাই বাসা বাঁধতে পারে।
একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, ভ্যানের উপর রাখা মিষ্টি আখে মাছি ভনভন করছে। ফুটপাতে ময়লা ও মানুষের বর্জ্যে যে মাছিগুলো বিশ্রাম নেয়! সেগুলোই বিশ্রাম শেষে আখের গাদায় স্বাদ নিতে চলে আসছে। কিন্তু এসব চোখেই পড়ছে না কারো।
আখগুলো প্রথমে মাটির উপরেই পরিষ্কার করা হচ্ছে। এরপর সেগুলো ছেলা হচ্ছে সেখানেই। তারপর যে পানি দিয়ে আখ ভিজিয়ে রাখে দীর্ঘক্ষণ, সেই পানির বিশুদ্ধতার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আবার বেশিরভাগ সময়েই পানি সরবরাহের সুবিধা থাকে না। তাই ছোট বালতিতে থাকা সামান্য পানি দিয়েই সবার খাওয়া গ্লাসটা ধুয়ে আখের রস খেতে দেয় খদ্দেরদের।
তপ্ত রোদের মাঝে সবাই চায় আখের রসটুকু ঠাণ্ডা খেতে। এজন্য বরফ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বরফের চাঁইটুকু কোথা থেকে আনা হয় কিংবা কোন ধরণের বরফ দেওয়া হয়, তাও জেনে রাখা ভালো। দুই ধরণের বরফ কিনতে পাওয়া যায়। একটা মাছের জন্য, অন্যটা খাওয়ার জন্য। মাছের জন্য তৈরি বরফটা কতটা নোংরা পানির তৈরি তা বর্ণনা না করাই শ্রেয়। অন্যদিকে খাওয়ার জন্য তৈরি বরফ মোটামুটি ভালো পানি দিয়ে তৈরি করা হয়। যদিও এর নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু মাছে দেওয়ার জন্য বরফের দাম বাজারে কম। তাই আখের রস বিক্রেতারা সাধারণতা এই বরফটাই কিনে থাকে। কেননা কোনটা মাছের জন্য আর কোনটা খাওয়ার জন্য বরফ, তা বোঝার উপায় নেই। তাই এই ঠাণ্ডা আখের রস যথেষ্ট ক্ষতিকর।
এছাড়া অনেকেই মনে করেন, আখের রস জন্ডিসের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। কিন্তু বিষয়টা পুরোই উল্টো। ভুল ধারণা নিয়ে সবাই আখের রস খাচ্ছেন। কিন্তু জন্ডিসের সঙ্গে আখের রসের কোনোও সম্পর্ক নেই। বাজারে ধুলাবালি আর মাছি বসা যে আখের রস সবাই খাচ্ছেন, তা কোনোভাবেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এসব খেলে একজন সুস্থ মানুষ অসুস্থ্য হয়ে পড়ার সম্ভবনা শতভাগ। জন্ডিস ভালো হওয়া তো দূরের কথা বরং শরীরের অপকারটাই বেশি হবে। এছাড়া এই আখের রস থেকে পেটের পীড়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ইনফেকশন হতে পারে। এ থেকে লিভারের অসুখ যেমন হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস-ই হতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে হলে রাস্তায় বিক্রি হওয়া আখের রস থেকে দূরে থাকতে হবে।