মান্ডু বা মান্ধবগড় বর্তমানে একটি বিলুপ্ত শহর। ভারতের মধ্যপ্রদেশের পশ্চিমাংশে মালওয়া অঞ্চলে এটি অবস্থিত। জেলাশহর ধর থেকে এর দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। বিন্ধ্যপর্বতমালার শিখরে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক দুর্গনগরী মান্ডুই ছিলো একসময় পৃথিবীর বৃহত্তম দুর্গ। ঐতিহাসিকদের মতে ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথম দিকে নির্মিত হয়েছিলো মান্ডু দুর্গ। প্রথমে এর নাম ছিল মণ্ডপ দুর্গ। মণ্ডপ থেকে হয় মাণ্ডব। তারপর মান্ডু।
দুর্গটি প্রায় ৪৫ বর্গমাইল জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। রয়েছে ১২টি প্রবেশদ্বার। প্রধান প্রবেশদ্বারটি দিল্লি দরওয়াজা, এরপরেরটি আলমগির দরওয়াজা আর শেষেরটির নাম ভাঙ্গি দরওয়াজা৷ অসাধারণ নির্মানশৈলীর সাক্ষ্যবহনকারী সুন্দর এই দুর্গকে মুসলমান ঐতিহাসিক গুলাম ইয়াজদানি অভিহিত করেছিলেন 'শারাংপুর' বা 'আনন্দের শহর' বলে।
যুগের পর যুগ ধরে সুলতান, সম্রাট, রাজা, মহারাজারা তাদের রাজত্বকালে মান্ডুকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। নির্মাণ করেছেন একের পর এক অসামান্য স্থাপত্যকীর্তি। ৭৫টি ঐতিহাসিক সৌধ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে মান্ডুর নানান জায়গায়। মান্ডুতে ইতিহাস ও ঐতিহ্য এখনো ধরে রেখেছে বিভিন্ন স্থাপনা। আগেই বলেছি ১২ টি দরওয়াজা রয়েছে এই দুর্গের। প্রধান প্রবেশদ্বারটি দিল্লি দরওয়াজা। দরওয়াজা বা গেইটগুলো বহন করছে সে সময়ের নির্মাণশৈলীর স্বাক্ষর।
মান্ডুর সেরা স্থাপত্যকীর্তি হচ্ছে জাহাজমহল। ১৩৬৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন সুলতান গিয়াসউদ্দিন খিলজী৷ সুলতান গিয়াসুদ্দিন খিলজী তৈরি করেন জাহাজমহল। মহলের দুই দিকে দুই জলাশয়- একদিকে মুঞ্জ তালাও ও অন্যদিকে কাপুরতালাও৷ দ্বিতল বিশাল প্রাসাদের টেরেসে দাঁড়িয়ে দুপাশে দুটি লেকের জলে তাকালে মনে হবে একটি জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে আছেন । এই দুই লেকের জলে নোঙর করা জাহাজমহল ছিলো হেরেমখানা।
হিন্দোলা মহল হচ্ছে একটি দেওয়ানি দরবার হল। স্লোপিং দেওয়াল এবং পিলারের কারসাজি দেখে দেখে মনে হবে মহলটি দোদুল্যমান। তাই এর নাম হিন্দোলা মহল। স্যান্ড স্টোনের অপূর্ব কাজ মহলটিকে করেছে দৃষ্টি নন্দন।
হোসং শাহের সমাধিক্ষেত্রটি অসাধারণ। মার্বেলের তৈরী সূক্ষ আফগান স্থাপত্য। মনোমুগ্ধকর এর স্থাপত্যশৈলী।
রয়েছে প্রখ্যাত জামি মসজিদ। এটি দামাস্কাসের বিখ্যাত মসজিদের অণুকরণে বানানো । বাজ বাহাদুর বানিয়েছিলেন তাঁর প্রিয়তমা পত্নী রূপমতীর জন্য রেওয়াকুণ্ড। দেখার আছে বাজবাহাদুরের প্রাসাদ এবং রূপমতী প্যাভিলিয়ন ।
রয়েছে প্রখ্যাত জামি মসজিদ। এটি দামাস্কাসের বিখ্যাত মসজিদের অণুকরণে বানানো । বাজ বাহাদুর বানিয়েছিলেন তাঁর প্রিয়তমা পত্নী রূপমতীর জন্য রেওয়াকুণ্ড। দেখার আছে বাজবাহাদুরের প্রাসাদ এবং রূপমতী প্যাভিলিয়ন ।
মান্ডু যেতে হলে কোলকাতা যেতে হবে। সেখান থেকে যেতে হবে ইনদৌর। হাওড়া থেকে ইনদৌর ১৭৫৩ কিলোমিটার। ইনদৌর থেকে মান্ডু সড়কপথে প্রায় ১০০ কিলোমিটার। সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে মান্ডু চলে যাওয়া যায় ।
যেতে চাইলে গরমে না যাওয়াই ভালো। খুবই গরম সেখানে। বেছে নিন বর্ষার সময় অথবা শীতকাল। সেপ্টেম্বর খুব ভালো সময় ভ্রমণের জন্য। বর্ষায় মান্ডু অপরূপ প্রাকৃতিক রূপে সাজে।