সাময়িকী.কম
কুচবিহারে বিএসএফের ১৮১ ব্যাটালিয়নের সদরদফতরের সোনারি ক্যাম্পে আদালত বসে- বিবিসি বাংলা |
বাংলাদেশের কিশোরী ফেলানি খাতুন হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সদস্য অমিয় ঘোষকে বিএসএফের নিজস্ব আদালতে আবারও খালাস দেওয়া হয়েছে। এ রায় প্রত্যাখ্যান করেছে ফেলানীর পরিবার।
এ রায়ে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরু জানান, দুই দফা সাক্ষ্য দেয়ার পরও তার মেয়ের হত্যার ন্যায্য বিচার পাননি তিনি। তিনি এ রায় প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তিনি বলেন, অমিয় ঘোষের ফাঁসি হওয়া উচিৎ ছিল। তা না করে ভারত সরকার বিচারের নামে তামাশা করেছে আমাদের সাথে। আমি ন্যায় বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে যাব।
ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেন, আমার মেয়ে যে বিএসএফ সদস্য নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করল ভারত সরকার তার বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমার মেয়েতো মারা গেছে কিন্তু তার আন্তার শান্তি পাওয়া হলোনা। আমরা গরীব বলে আমাদের ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার নেই।
কুড়িগ্রাম ৪৫ ব্যাটালিয়ন বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল জাকির হোসেন এ ব্যাপারে বলেন, আমরা গণমাধ্যম মারফত জানতে পেরেছি আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দিয়েছে আদালত। ২০১৩ সালের ১৩ আগষ্ট ভারতের বিশেষ আদালতে এই হত্যা মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। অভিযুক্ত বিএসএফ হাবিলদার অমিয় ঘোষের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধি ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুন এবং বিএসএফ আইনের ১৪৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর এ মামলার প্রথম রায় প্রদান করেন সিপি ক্রিবেদীর নেতৃত্বাধীন প্যানেল অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন। বৃহস্পতিবারও (২ জুলাই) একই বিচারক প্যানেল এই রায় দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, আদালতের রায় এখনও অফিসিয়ালি ভাবে আমরা পাইনি। পেলে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।
কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই রায় ভারতীয় বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এর ফলে সীমান্ত হত্যার ক্ষেত্রে বিএসএফ আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে। যা সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সংকট তৈরী করবে। এই রায় মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
তিনি জানান, ভারতীয় সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধ আপিল করতে পারেন। পাশাপাশি ফেলানীর বাবা এই রায়ের বিরুদ্ধে ভারতের উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সহায়তা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে ফেরার সময় ভারতের চৌধুরীহাট বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্য অমিয় ঘোষ ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানীকে গুলি করে হত্যা করে।
এ ঘটনার দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট কোচবিহার জেলার সোনারী এলাকায় ১৮১ বিএসএফ ব্যাটালিয়ন সদর দফতরে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স কোর্টে ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হয়। ওই বিচারে বিএসএফ সদস্যকে নির্দোষ ঘোষণা করে রায় দেয়া হয়।
এই রায় প্রত্যাখ্যান করে ফেলানী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ দাবি করে ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনারের কাছে আবেদন করেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরু। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি পুনর্বিচারের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসএফ কর্তৃপক্ষ।
ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম গত বছরের ১৭ নভেম্বর দ্বিতীয় বারের মতো সাক্ষ্য দেন ভারতের ওই বিশেষ আদালতে। কয়েকদিন আদালত চলার পর গত ২০ নভেম্বর আদালত মূলতবী হয়ে যায়। ২৫ মার্চ পুনরায় বিচার কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দেয় আদালত।
এরপর ২৬ মার্চ আসামী অমিয় ঘোষ এবং আইজীবীর অসুস্থতার কারণে আদালত আবারো ২৯ জুন পর্যন্ত মুলতবি হয়ে যায়। পরে ৩০ জুন আদালত শুরু হয়ে তিনদিন ধরে চলে বিচারিক কার্যক্রম। এরপরই বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) মধ্যরাতে এ রায় ঘোষণা করা হয়।