মোঃশরীয়ত-উল্লাহ
সাময়িকী.কম
নেদারল্যান্ডস থেকে : আমরা মানুষ। আমরা আসলেই খারাপ। না হলে আমাদের জন্য জান্নাত জাহান্নাম দুটোরই ব্যবস্থা থাকতোনা। মাঝে মাঝে আমরা হতাশ হোয়। অন্যরা সেই হতাশ মানুষটাকে নিয়ে আরো তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে তাদের কথায়, কর্মে তার জীবনকে আরো বিষময় করে তোলে। বুঝতে শেখায় এ জীবনের কোন মূল্যই নেই। শুধু শুধু অনর্থক একটা জীবনকে বয়ে নিয়ে চলেছো। এর তো কোন মূল্য নেই। জীবনটাকে মূল্যহীন মনে হতে থাকে। এই সময়গুলোতে দরকার মানসিক সাপোর্ট। কিছু কথা সারা জীবনেও বলা যায়না কাউকে। অথবা সমাজটাই এমন করে রেখেছে, তুমি বলতে চায়লেই গলা টিপে মেরে ফেলার থেকেও বড় বেশি যন্ত্রনা পেতে হবে তোমাকে।
আমি এখনো মনে করতে পারি, আমার কিছু দূর অবস্থার সময়, যখন জীবনটাকে অনর্থক ভাবতে শুরু করতাম। খুব ভেঙ্গে পড়তাম। মরে যেতে চাইতাম, ঠিক তখন কনক ভাই আমার রুমের দরজা বেশিক্ষনের জন্য বন্ধ দেখলেই রুমে নক করে খোজ নিতো মাঝে মাঝেই। আফসার স্যার মাঝে মাঝেই কাছে বসিয়ে বোঝাতো। সেলিম ভাই যাকে আমি কখনো দেখিইনি, সেও আমাকে বাচতে শিখিয়েছে প্রতিটা মূহূর্তে। সুজন ভাই বিনা বাক্য ব্যায়ে শুনতো আমার কথাগুলো, আমার যা ইচ্ছা তাই বলে ফেলতাম সুজন ভাইকে। উনি বোঝাতে চাইতেন উনার তার সাধ্যমতো। আমি বাচতে শিখতাম। এখন আর সহজে দূঃখ পাইনা। অবস্থাগুলোকে মানতে শিখছি। মোকাবেলা করতে শিখছি। ঐ সময় আমার খুব প্রিয় এক ভাই আমাকে বুঝিয়ে ব্যার্থ হয়ে, খুব বিরক্ত হয়ে যোগাযোগই বন্ধ করে দিলো। এখনো যে অনেক বাজে অভিজ্ঞতা হয়না তা না। ইউরোপিয়ানদের কাছেও অনেক বাজে ব্যবহার পেয়েছি। অনেকেই অনেক কথা বলেছে। আমি বুঝিনা পৃথিবীর সব মানুষই পিছনে বলতে ভালোবাসে তাও খুব জঘন্য ভাবে। আমি দু এক দিন কেদেছিও। আমার অস্ট্রিয়ান বন্ধু লেনার্ট শেখাতো কিভাবে বাচতে হয়, কিভাবে মোকাবেলা করতে হয় কিছু পরিস্থিতির। তারপর বুঝতে শিখেছি পৃথিবীতে কিছু মানুষ থাকে যারা আমার আপন। যারা আমার বিপদে পাশে দাঁড়াবে। তাদেরকে খুজে আলাদা করি এখন যদিও পৃথিবীর সব মানুষকে আমি অন্তর থেকে ভালোবাসি। সবাইকে ভালোবাসি বলেই হয়তো কারো কাছে জঘন্য কিছু আশা করতে পারিনা। তবু মানুষতো, তাদের জঘন্য কিছু দিক থাকবেই যা দিয়ে নখের ডগায় ফেলে উকুন মারার মতো ছেচবে। হয়তো এই ভালোবাসার জন্যই কষ্ট পাই বেশি।সময় সব থেকে বড় হিলার। সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যায়। মানুষ সব ভুলে আবার বাচতে শেখে সুন্দর এই পৃথিবীতে।
আজ হঠাতই আমার ফেলে আসা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীর আত্মহত্যার কথা শুনলাম। খুব খারাপ লাগে এই সংবাদগুলো পড়লে। ও হয়তো জীবনটাকে অনর্থক ভাবতে শুরু করেছিলো, বলতে পারেনি নিজের কথাগুলো কাউকে। না বলার যন্ত্রনা নিয়েই শেষ করে দিয়েছে নিজেকে যেনো আর কখনো কষ্ট না পেতে হয় , আর না হতে হয় অন্যের গলগ্রহ।
এরকম অনেককেই পাবেন আপনার আশেপাশে। আপনার বন্ধু, ভাই-বোন বা আপনার নিজের সন্তানও হতে পারে। প্লিজ তার হতাশার সময়গুলোতে পাশে দাড়ান। কখনো বকাঝকা বা বাকা কথায় কষ্ট দিয়ে নয়, ঠিক বন্ধুর মতো। তাকে বোঝান জীবনের অর্থ। যদি মানতে আপনার কষ্ট হয় প্লিজ চাপাচাপি করে তার কথাগুলো বের করে আনার চেষ্টা করবেন না। কারন আমাদের সমাজ বা আপনি নিজেও অনেক কিছুই মানতে শেখেন নি এখনো। কিছুটা সময় একটু কষ্ট করেন তার মানসিক শক্তি যোগানোর। দেখবেন কিছুটা সময় গেলে এমনিতেই সব ঠিক হয়ে যাবে, ও মানসিক শক্তি পাবে বাচার। শুধু দরকার কিছুটা সময় গড়ানোর, তার মনের মধ্যে জমে থাকা ঐ ভারটা কাটার জন্য। সময় মহৌষুধ। সেই সব ঠিক করে নেবে আপন গতিতে । আপন মানুষগুলোর জন্য একটু হলেও কষ্ট করে ধৈর্য্যের পরীক্ষাটা না হয় দিলেনই। তবু দয়া করে এভাবে অকালে চলে যেতে দেবেন না আর একটিও প্রান।