‘অনিন্দ্যসুন্দর’ কথাটা সুন্দরবনের বেলায় অবলীলায় মিলে যায়। নদী, খাল ও সমুদ্র, এর সঙ্গে লাখ লাখ সবুজ গাছপালা। এত কিছু বুকে নিয়ে জেগে থাকা মায়াবী রূপের এমন ভূপ্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতি সহজেই মানব প্রজাতির মন কাড়ে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তসীমা ও বঙ্গোপসাগরের প্রায় সমতলে গড়ে উঠেছে এ ম্যানগ্রোভ অরণ্য। সাগরের প্রান্ত ছুঁয়ে জেগে ওঠা এই স্রোতজ বন বা প্যারাবনের উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে বৃক্ষ, লতা, গুল্ম, ঘাস ও পরগাছা।
১৯০৩ সালে জীববিজ্ঞানী ডেভিড প্রেইন সুন্দরবন ও তার আশপাশের এলাকার ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালার তালিকা তৈরি করেন। সুন্দরবনের প্রধান গাছপালার মধ্যে অন্যতম সুন্দরী, গেওয়া, গড়ান, পশুর, বাইন, হেঁতাল, গোলপাতা, খামু, লতা সুন্দরী, কেওড়া, ধুন্দুল, আমুর, ছৈলা, ওড়া, কাঁকরা, সিংরা, ঝানা, খলশি ইত্যাদি। কিন্তু সুন্দরবনের নামের সমার্থক হিসেবে যে তরুটি জড়িয়ে আছে, সেটি সুন্দরীগাছ। এই গাছের নামানুসারেই এ বনের নাম ‘সুন্দরবন’ হয়েছে বলেই জনশ্রুতি আছে।
সুন্দরী মাঝারি গড়নের চিরসবুজ গাছ। বাকল কালচে ধূসর বা বাদামি। উচ্চতায় সাধারণত ১৫ থেকে ১৯ মিটার হয়ে থাকে। পাতা একান্তর, চিরসবুজ। মধ্যে শিরা স্পষ্ট। সুন্দরবনের সাধারণত কম লবণাক্ত এলাকার মাটিতে এটি ভালো জন্মে। এ গাছের জন্য উঁচু ভূমি ও স্বাদু পানির প্রয়োজন হয়। সুন্দরীর বৈজ্ঞানিক নাম Heritiera fomes। পরিবার Sterculiaceae।
সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে সুন্দরীগাছের সংখ্যা ও ঘনত্ব বেশি। বলেশ্বর, গড়াই, শিবসা ও রূপসা নদীর মিলিত মিঠাপানির প্রবাহের কারণে এ এলাকায় লবণাক্ততা কম। সুন্দরীগাছে সাধারণত এপ্রিল থেকে ফুল আসা শুরু করে। পুরো গাছ ভরে যায় ফুলে ফুলে। রং সোনালি-হলুদ। তার সঙ্গে লালচে আভা থাকে। ফুলে পাপড়ি নেই। বৃতি পাঁচটি।
লবণাক্ততা, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, আগা-মরা রোগ, মিঠাপানির প্রবাহ কমে যাওয়ার ফলে সুন্দরীগাছও বিশ্বের বিপন্ন উদ্ভিদগুলোর একটি। আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থার (আইইউসিএন) ২০১২ সালে প্রকাশিত রেড ডেটা বইয়ে (বিশ্বের বিপন্ন, বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ ও প্রাণীবিষয়ক বই) সুন্দরীগাছের কথা রয়েছে।