অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যাবো , সবার মুখে শুধু সৌন্দর্যের গল্প শুনতাম এই নারকেল জিঞ্জিরা কে নিয়ে।
সেমিস্টার ফাইনাল শেষ, যে ভাবেই হোক বন্ধুরা রাজি হলো ট্যুরে যাবো। যেই কথা সেই কাজ, সব কিছু ম্যানেজ হলো। ২৭ শে ফেব্রুয়ারি রাত আট টায় আমরা ৫৪ সদস্যের দল বাসে করে রওনা দিলাম। সাথে আমাদের প্রিয় শিক্ষক সজল স্যার। সারা রাত বাস জার্নি করে সকাল ৭.০০টার কক্সবাজার পৌঁছলাম। সকালে নাস্তা করে সবাই সমুদ্র। ১২.৩০ দিকে সবাই হোটেলে ফিরে লাঞ্চ করে ৩০মিনিটের বিশ্রাম। ২ টার দিকে রওনা দিলাম ইনানি বিচের উদ্দেশ্যে। ইনানি তে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত। সেখান থেকে হিমছড়ি ঝরনা, পাহাড়। এক কথায় অসম্ভব সৌন্দর্যের লীলাভূমি।
হিমছড়ি থেকে কক্সবাজার ফিরতে ফিরতে রাত ৮ টা বেজে গেলো। সবাই চলে গেলাম শপিং করতে। আমাদের বন্ধু শাকিল ছিল সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে। রাত ১১ টা দিকে ডিনার এর সময় বলে দেয়া হলো আগামীকাল সকাল ৬ টার ভিতরে সবাইকে বাসে থাকতে হবে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার জন্য।
স্বপ্নের সেন্ট মার্টিন .........
ঠিক সময়ে সবাই হোটেলের সামনে রাখা বাসে উপস্থিত হলো,বাস ছুটে চলল টেকনাফের উদ্দেশ্যে। পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে আমাদের বাস ছুটে চলেছে টেকনাফের উদ্দেশ্যে। সবাই বাসেই সকালের নাস্তা সেরে ফেললাম। বাস দ্রুত চলছিল কারণ আমাদের সেন্ট মার্টিন যাওয়ার জাহাজ কতুবদিয়া ঠিক ৯ টায় ছেড়ে যাবে।
যাক ঠিক সময়ে পৌঁছে গেলাম জাহাজ ঘাট টেকনাফে, সম্পূর্ণ পাহাড়ি এলাকা। সবাই যার যার ব্যাগ নিয়ে জাহাজে চড়লাম। কতুবদিয়া ঠিক নয়টায় ছেড়ে দিলো, উদ্দেশ্য সেন্ট মার্টিন।
নাফ নদী দিয়ে জাহাজ এগিয়ে যাচ্ছে একটু পরেই বিশাল বঙ্গোপসাগর। জাহাজ এগিয়ে যাচ্ছে আমরা জাহাজে যে যার মত বসে, দাঁড়িয়ে বিশাল সমুদ্রকে উপভোগ করছি, কেউ বা হাতে ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলছে। হঠাৎ সবার দৃষ্টি সমুদ্র থেকে অন্য দিকে গেলো, জাহাজের পিছনের শত শত সামুদ্রিক পাখি আমাদের সাথে এগিয়ে চলছে!
সবাই ক্যামেরা নিয়ে ছবি তোলা শুরু করে দিলো, আমিও বাদ রইলাম না। জাহাজ সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে সামনে এগিয়ে চলছে , কোন কুল কিনারা না দেখা যাওয়াতে অবশ্য আমরা বুজতে পারছিলাম না জাহাজ কোন দিকে যাচ্ছে।
ঘড়িতে সময় বেলা ১২.১০। হঠাৎ চোখের সামনে কিছু একটা আবিষ্কার করলাম হাঁ এটাই সেন্ট মার্টিন দ্বীপ!
জাহাজ ধীরে ধীরে সেন্ট মার্টিনের একমাত্র জেটিতে গিয়ে থামলো। আমরা আসতে ধীরে জেটিতে নামলাম। সবাই বিশেষ করে আমি সেন্ট মার্টিনের পানি দেখে অবাক হলাম একদম নীল রং-এর পানি, তেমন ঢেউ নেই। সামনে বিশাল নারকেল বাগান মনে হচ্ছে। সবাই অনেক ক্লান্ত , আসতে আসতে হাঁটা শুরু করলাম জেটি পেরিয়ে ঢুকে পড়লাম মূল দ্বীপে। একটা ছোট বাজার ,পাকা সিমেন্টের রাস্তা। আমাদের সামনে এগিয়ে গেলাম। একটু পরেই পেয়ে গেলাম আমাদের হোটেল ‘ প্রিন্স হেভেন’। হোটেলের মুখ সমুদ্রের দিকে, ২০ পা সামনে গেলেই সমুদ্র।
আমরা কয়েক জন কোন মতে নিজেদের ব্যাগ রুমে রেখে দিলাম দৌড়, এক দৌড়ে পানিতে! যেতেই থাকলাম, কোমরপানি পর্যন্ত গিয়ে থামলাম। আস্তে আস্তে সবাই চলে এলো সমুদ্রে। প্রচণ্ড লাফালাফি, ছোটাছুটি। একটু পরে আহাদ নিয়ে এলো একটা ফুটবল। ব্যাস, বুকের সমান পানিতে শুরু করে দিলাম চোর-পুলিশ খেলা আমরা প্রায় ২৫ জন।
একটু পর মেয়েরাও আমাদের সাথে যোগ দিলো, এবার স্যার সহ সবাই নতুন ফুটবল পাস খেলা শুরু করলাম আমরা ৫৪ জন।
দেড় ঘণ্টা খানেক খেলে সবাই তীরে আসলাম, এবার সেকশন বীচ ফুটবলে সবাই মেতে উঠলাম। ২ টার দিকে আবার হোটেলে ফিরে গোসল করে দুপুরের খাবার খেতে যাই। খাবারের আইটেম যাই খাও মাছ থাকবেই। সাথে শুটকি ভর্তা, সবজি ও ডাল।
এবার রেস্ট। বিকেল ৩.৩০ সবাই যে যার মত গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে বের হলাম দ্বীপ ঘুরে দেখতে। আমি জাকির , দিপা , নিশি গেলাম হুমায়ুন আহমেদ স্যার এর বাড়ীর সন্ধানে। সমুদ্রের পার দিয়ে যাওয়ার সময় দ্বীপের কিছু বাচ্চার সাথে দেখা হয়, সবার হাতে ছোট ছোট প্রবাল। এক পিস ৫ টাকা। কিনলাম একটা। যাক এগিয়ে চললাম, কিন্তু যেতে যেতে সূর্যাস্ত ! সবাই সূর্যাস্ত দেখতে ব্যস্ত সাথে ছবি তোলা। যেখানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখছিলাম ঐ জায়গাটা ছিল অনেক অনেক প্রবাল। অনেক ভালো লাগছিলো ঐ সময় টাতে।
যাক হেঁটে চললাম, সামান্য সামনে যেতেই পেয়ে গেলাম হুমায়ুন আহমেদ স্যার এর স্বপ্নের সমুদ্র বিলাস বাড়ী টি। বাড়ীর সামেন দাঁড়িয়ে স্যার এর স্মৃতি গুলো স্মরণ করলাম, ছবি তুললাম ।
রাত হয়ে গেছে তাই দ্রুত হোটেলের উদ্দেশ্য এগিয়ে যাচ্ছি,সমুদ্রের গর্জন অনেক ভালো লাগছিলো, সাথে বন্ধুদের গান।
পথে একটা দোকানে চা পাওয়া গেলো। একেবারে সমুদ্রের পারে। আমরা চেয়ার হাতে নিয়ে পানির কাছে গিয়ে বসে চা খেলাম। তারপর হোটেলের দিকে আবার চলা শুরু করলাম। সেন্টমার্টিনের আকাশে ঝলমলে তারা ছাড়া সব দিক ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার। যাক কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা পৌঁছে গেলাম হোটেলে।
এস.এম. ইমরান
বিবিএ (৫ম ব্যাচ)
হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা ।
বিভাগ:

Author Name

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.