কিডনি ফেইলিওরের অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস। মেডিসিন বা অন্য চিকিৎসার পাশাপাশি কিডনি ফেইলিওরে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিডনির কার্যকারিতা ও অকার্যকারিতার ধাপ এবং অন্যান্য অঙ্গের ফাংশন নিরূপণ করে উপযুক্ত খাদ্যতালিকা অনুযায়ী সুষম খাবার খেলে কিডনি রোগীরা প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।
কিডনি রোগীর ডায়েট কেন প্রয়োজন
* পুষ্টিমান বজায় রাখা
* ইউরিয়া, নাইট্রোজেনের বিষাক্ততা কমিয়ে রাখা
* শরীরে প্রোটিন ভেঙে যেতে বাধা দেওয়া
* রোগীর শরীর ভালো লাগানো এবং কিডনি ফেইলিওরের বর্তমান অবস্থা থেকে রোগী যেন আরও খারাপ না হয়
* ডায়ালাইসিসের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে আনা।
চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, এ রোগীদের ভালো মানের প্রোটিন দিতে হবে, যেমন ডিম ও দুধ। যেসব প্রোটিন শরীরে জমা হয়ে ইউরিয়া নাইট্রোজেন তৈরি করে সে সব প্রোটিন গ্রহণ সীমিত করতে হবে।
খাদ্যশক্তি
পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালোরি দিতে হবে। পর্যাপ্ত ক্যালোরি না দিলে শরীরের টিস্যু ভেঙে রক্তে ইউরিয়া এবং পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। শ্বেতসার বা শর্করা খাদ্যশক্তির প্রধান উৎস এবং প্রোটিনের সঙ্গে একসঙ্গে খেতে হবে। খাদ্যশক্তির জন্য প্রোটিন খাওয়া যাবে। শ্বেতসার এবং পরিমাণ মতো ইলেকট্রলাইট সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে রোগী পর্যাপ্ত ক্যালোরি পাবে।
প্রোটিন
শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য প্রোটিন ০.৬ গ্রাম খেলে নাইট্রোজেনের ভারসাম্য ভালো থাকে। যে রোগীদের ডায়ালাইসিস হয়নি তারা এর চেয়ে বেশি প্রোটিন খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করলে শরীর শুকিয়ে যায়। কম প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার (২৫ গ্রামের কম) এসেনশিয়াল এমাইনো এসিড ও কিটো এসিড খেলে কিডনি ফেইলিওর রোগীদের নাইট্রোজেন ব্যালেন্স ভালো হয়। হিমোডায়ালাইসিসের রোগীকে প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য ১.০ গ্রাম প্রোটিন দিতে হবে। এতে হিমোডায়ালাইসিসে ক্ষতি হওয়া প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয়।
তেল বা চর্বি
ক্রনিক বা দীর্ঘদিনের কিডনি ফেইলুরে সাধারণত লিপিড প্রোফাইল বাড়ে। সুতরাং ট্রাইগ্লিসারাইড ও কলস্টেরলের মাত্রা কম রাখতে হবে এবং পলিআনসেচুরেটেড তেল বেশি খেতে হবে।
পটাশিয়াম
অতিরিক্ত বা কম পটাশিয়াম দুটোই রোগীর জন্য খারাপ। ক্রনিক কিডনি ফেইলিওরে সাধারণত পটাশিয়াম বৃদ্ধি পায়। ডায়ালাইসিস হয়নি এমন রোগীদের ১ হাজার ৫০০ মিলিগ্রাম থেকে ২ হাজার মিলিগ্রাম পটাশিয়াম দিতে হবে।
হিমোডায়ালাইসিস রোগীকে প্রতিদিন ২ হাজার ৭০০ মিলিগ্রাম এবং পেরিটনিয়েল ডায়ালাইসিস হলে ৩ হাজার মিলিগ্রাম থেকে ৩ হাজার ৫০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম দিতে হবে।
সোডিয়াম
শরীরে রস, উচ্চ রক্তচাপ ও হার্ট ফেইলিওর নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য লবণ পরিমাণ মতো গ্রহণ করতে হবে।
ডায়ালাইসিস লাগেনি এমন উচ্চ রক্তচাপসম্পন্ন রোগীকে দৈনিক এক গ্রাম সোডিয়াম দেওয়া যেতে পারে। সোডিয়ামের অভাব থাকলে ২ গ্রাম দেওয়া যায়। ডায়ালাইসিস নিয়মিত করছেন এমন রোগীদের সোডিয়াম নিয়ন্ত্রণ করার দরকার নেই। রক্তচাপ কম হলে সোডিয়াম দিতে হবে।
ক্যালসিয়াম
কিডনি ফেইলিওরে সাধারণত ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে যায় এবং কিডনির ক্ষতি হয়। প্রোটিন ও ফসফরাসসমৃদ্ধ খাবার সীমিত করার কারণে ক্যালসিয়ামও কমে যায়। এজন্য সেরাম ক্যালসিয়াম লেবেল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট করতে হবে।
ট্রেস খনিজ : শুধু সুষম খাদ্য গ্রহণে আয়রন এবং ট্রেস মিনারেলসের চাহিদা পূরণ হয় না। সুতরাং খনিজ সাপ্লিমেন্ট করতে হবে। কিডনি ফেইলিওরে খাওয়ার অরুচি হয়। এ ক্ষেত্রে জিংক সাপ্লিমেন্ট করলে রুচি ফিরে আসে।
ভিটামিনস
ডায়ালাইসিসের সময় ভিটামিন ‘সি’ ও ‘বি’ শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এ ভিটামিনগুলো এমনিতেই কম খাওয়া হয়। কারণ কাঁচা শাকসবজি সীমিত পরিমাণ গ্রহণ করা হয় এবং খাদ্য পানির মধ্যে মিশিয়ে রান্না করা হয়। এ লক্ষ্য হচ্ছে খাদ্যে পটাশিয়ামের মাত্রা যেন কম থাকে। ফলিক এসিড এবং পাইরিডক্সিনের প্রয়োজনও বেশি হয়। কিডনি ফেইলিওর হওয়া রোগী ভিটামিন ‘ডি’কে অ্যাকটিভ অবস্থায় নিতে পারে না বলে ভিটামিন ‘ডি’-এর বিপাক ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। সুতরাং সব ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট করতে হয়।
পানি
ক্রনিক কিডনি ফেইলিওর রোগীর পানি গ্রহণ নিবিড়ভাবে মনিটর করতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ বা পা ফোলা না থাকলে রোগীর প্রতিদিন যে পরিমাণ প্রসব হয় তার সঙ্গে দৈনিক ৫০০ মিলিলিটার পানি যোগ করে খেতে হয়। দৈনিক দেড় থেকে তিন লিটার পর্যন্ত পানি দেওয়া যেতে পারে। ডায়ালাইসিস হচ্ছে এমন রোগীদের ওজন দৈনিক এক পাউন্ড পর্যন্ত বাড়তে দেওয়া যেতে পারে। 

ডা. মো. মোস্তফা কামাল
নিউট্রিশনিস্ট অ্যান্ড বায়োকেমিস্ট
বিভাগ:

Author Name

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.