অনেক সময়েই মানুষের কথা শুনে কিংবা পরিবেশের কথা বিবেচনা করে অথবা সমাজে মান সম্মানের কথা ভেবে আমরা নিজেদের মনের ওপর নানা চাপ নিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করে থাকি। এতে করে নিজের প্রতি বলতে গেলে একপ্রকার অন্যায়ই করে থাকি আমরা। যেখানে যেমনটা হওয়া উচিৎ ঠিক তেমনটা না হয়ে বাধ্য হই অন্য কারো মতানুসারে চলতে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্যের খুশির জন্য এই ধরণের কাজ করা সম্ভব, কিন্তু সবক্ষেত্রে সম্ভব নয়।
যেখানে নিজের উপর অন্যায় করা হচ্ছে সেখানে আমাদের নিজেদের কথাটি একটু হলেও বিবেচনা করা উচিৎ। বন্ধ করা উচিৎ নিজেদের প্রতি এই অন্যায় করা।
নিজেকে অন্যের কথামতো সাজিয়ে নেয়া
নিজের সত্ত্বাকে বিসর্জন দিয়ে আরেকজনের কথা মতো নিজেকে তৈরি করার মতো অন্যায় আর হতে পারে না। প্রত্যেকটি মানুষ ও মানুষের সত্ত্বা একেবারেই আলাদা ধরণের। আপনি আজকে যার জন্য পরিবর্তন হচ্ছেন তিনিই কিছুদিন পর আপনার পরিবর্তিত রূপের বিপরীতে কথা বলবেন। তাহলে কেন শুধুশুধু নিজের কষ্ট বাড়াচ্ছেন? হারাচ্ছেন কেন নিজেকে? নিজের প্রতি এই অন্যায় করা বন্ধ করুন।
অতীতের ভুলের জন্য বারবার নিজেকে দোষারোপ করা
অতীতে যা হয়ে গিয়েছে তা হয়ে গিয়েছে। আপনি যতোই চেষ্টা করেন না কেন তা কোনো ভাবেই ফিরিয়ে আনতে পাড়বেন না। শুধুমাত্র পাড়বেন তা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতটাকে সুনিশ্চিত করতে। কিন্তু আপনি যদি অতীতের ভুলের জন্য বারবার নিজেকে দোষারোপ করতে থাকেন তাহলে আপনি নিজের প্রতি অন্যায় করছেন। এতে কোনো লাভই নেই। তাই দয়া করে নিজের প্রতি এই অন্যায়টি করা থেকে বিরত থাকুন।
অন্যের মধ্যে নিজের খুশি খোঁজা
হাসি, খুশি ও শান্তি সম্পূর্ণই মানুষের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। অনেক বড় কোনো ঘটনার চাইতে ছোট ছোট অনেক ঘটনাই মানুষের মনে সুখের ছাপ ফেলতে পারে। মানুষ নিজের কর্মকাণ্ডের খুশি থাকে। অন্য একজনের কাজে খুশি হয়ে থাকে। কিন্তু যখন অন্য একজনের খুশির ওপর নিজের সুখ শান্তি নির্ভর করে তখন নিজের মনের সাথে অন্যায় করা হয়। আপনি নিজে খুশি হতে পারছেন না , তাই অন্য আরেকজনের মধ্যে নিজের খুশি খুঁজে চলেছেন। এটি আপানার নিজের জন্য অনেক ক্ষতিকর এবং সেই সাথে একটি অন্যায় কাজ।
অন্য একটি মানুষের মতো হওয়ার চেষ্টা করা
অনেকেই নিজেকে নিয়ে খুশি থাকেন না। মনে করেন অন্য একজনের অনুকরণে নিজেকে তৈরি করে নিতে পারলে সকলের নজরে পড়া যাবে এবং এতে করে খুশি থাকা যাবে চিরকাল। এটি অনেক বড় একটি ভুল কাজ। প্রতিটি মানুষই আলাদা, প্রতিটি মানুষই ইউনিক। আপনি নিজেকে বিসর্জন দিয়ে অন্য একজনের মতো হতে চেষ্টা করছেন, এতে আপনি নিজের সত্ত্বার সাথে অন্যায় করছেন। নিজেই নিজেকে অপমান করছেন।
নিজেকে অন্যের কাছে উপস্থাপনের আপ্রাণ চেষ্টা
এমন অনেক মানুষের সাথেই আপনার পরিচয় হবে যিনি আপনাকে একেবারেই বুঝতে পারেন না বা বুঝতে চেষ্টা করেন না। তার কাছে নিজেকে বোঝানোর এবং উপস্থাপনের আপ্রাণ চেষ্টা করা শুধুই সময় নষ্ট এবং নিজের প্রতি অবিচার করা। কারণ যিনি আপনাকে বুঝবেন তাকে আপনার বোঝানোর কোনোই দরকার পড়বে না, তিনি নিজে থাকেই আপনাকে বুঝে নেবেন। আর যিনি বুঝবেন না তাকে বোঝাতে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, কারণ আপনি শত বোঝালেও তিনি আপনাকে বুঝতে পাড়বেন না।