তানভীর আশিক
গ্রিক পুরাণ এক আলো-অন্ধকারের জগত। প্রেম-ঘৃণা, আবেগ-বাসনার এই জগতের বর্ণিত ঘটনাগুলো খুবি আকর্ষণীয়। গ্রিক পুরাণে উল্লিখিত হয়েছে বিশ্বের সৃজন এবং বহু দেবদেবী, যোদ্ধা, নায়িকা ও অপরাপর পৌরাণিক জীবের বিস্তারিত বিবরণী। সেখান থেকে তিন দেবীর কথা জানতে পারেন এখানে যদি না জানা থাকে।

হেরাঃ

গ্রিক মিথলোজির এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হেরা। হেরা মূলত জন্ম ও নর নারীর মিলনের দেবী। জিউসের স্ত্রী এবং সহোদরা হেরা। ক্রোনোস এবং রিয়ার তৃতীয় সন্তান হেরার জন্ম এক অনাকাঙ্খিক ঘটনার ফল। ক্রোনাসের স্ত্রী রিয়া গর্ভবতী হলে ক্রোনাসের হঠাৎ মনে পড়ে তার পিতৃ অভিশাপের কথা। অভিশাপ ছিলো- স্বীয় পুত্রদের দ্বারা ক্রোনাস একদিন সিংহাসনচ্যুত হবে। পিতা ইউরেনাসের ভয়ে ভীত ক্রোনাস প্রতিবারই রিয়ার সন্তান জন্মগ্রহণের সাথে সাথে গিলে ফেলতো। রিয়ার কৌশলে কনিষ্ঠ পুত্র জিউসকে বাঁচিয়ে রাখে। কালক্রমে জিউস বড় হয়ে ক্রোনাসের উদর থেকে ভাই-বোনদের উদ্ধার করে এবং তাদের ভেতর থেকে অনিন্দ্যসুন্দরী হেরাকে বিয়ে করেন। হেরা হয়ে ওঠেন স্বর্গের রানী। জিউসের ঔরসে তিনজন দেব-দেবীর জন্ম হয় হেরার গর্ভে। এরা হলেন- এ্যারিজ, হিফ্যাস্টস ও হেবে । কারো কারো মতে- হেরা একবার একটি দৈব ফুল স্পর্শ করার পর গর্ভবতী হন এবং এ্যারেস ও এর জমজ বোন এরিসএর জন্ম দেন। একইভাবে লেটুস গাছ স্পর্শ করার ফলে হেবে জন্মলাভ করেন। একইভাবে জন্মগ্রহণ করেছিল- হিফাস্টাসও। জিউস বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নারীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। ফলে জিউসের উপর তিনি নজরদারী করতেন। জিউসের এই প্রেম-ঘটিত বিষয়ের সাথে জড়িত নারীদের ইনি কঠোর শাস্তি দিতেন। এর মধ্যে রয়েছেন- ইনাকাসের কন্যা আইও, এ্যাপোলোর মা লিটো, ক্যালিসটো ইত্যাদি। এছাড়া জিউসের সন্তান হার্কিউলেসও তাঁর মায়ের কারণে হেরার প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিলেন। রোমান উপকথায় হেরাকে জুনো নামে ডাকা হয়

এথিনা:

এথিনা যুদ্ধ আর শিল্পকলার দেবী। জিউসের প্রথম স্ত্রী মেটিসের গর্ভে জন্ম এথিনার। জিউস যেমন তার পিতা ক্রোনাসকে হত্যা করেছিল তেমনি ভবিষ্যতবাণি ছিল জিউসের ব্যাপারে। তাই সে গিলে ফেলে মেটিসকে। মেটিস জিউসের শরীরে ভিতর তার গর্ভে থাকা এথিনার জন্য একটা ধাতব শিরোস্ত্রাণ বানায়। এ শিরোস্ত্রান তৈরিতে প্রচুর শব্দ হয় ফলে জিউস মাথায় ব্যথায় উন্মাদ হয়ে যেত। হেফেস্টাস তাই জিউসের মাথা চিড়ে ফেলে আর তা থেকে পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় জন্ম নেয় মায়ের দেয়া শিরোস্ত্রান পরিহিত দেবী এথিনা। এথিনার প্রিয় শহর এথেন্স। জলপাই তার বৃক্ষ আর পাখি পেঁচা। এথিনা ছিলো কুমারী দেবী।

আফ্রোদিতেঃ

আফ্রোদিতে গ্রীক সীমানা ছাড়িয়ে পুরা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া এক দেবী। আফ্রোদিতি প্রেমের দেবী। গ্রীক ভষায় আফ্রোস শব্দের অর্থ ফেনীল ঢেউ। মায়ের অনুরোধে টাইটান ক্রোনাস তার পিতা ইউরেনাসকে নির্বীর্য করে দিলে ইউরেনাসের অন্ডকোষ সিথেরার সমুদ্রে পতিত হয়। মুহূর্তের মাঝে সমুদ্র উতাল হয়ে ওঠে। তরঙ্গে তরঙ্গে ফেটে পড়তে থাকে সমুদ্রের উচ্ছ্বসিত ফেনা। ইউরেনাসের অন্ডকোষ আবরিত হয় সেই ফেনপুঞ্জে। এবং সেই রক্ত ফেনপুঞ্জের মাঝে আবির্ভূত হয় বিচিত্র বর্ণশোভিত একটি ঝিনুক এবং ঝিনুকের ওপরই স্ফুটযৌবনা আফ্রোদিতে। এই ফেনা থকেই জন্ম হয় বলে তার নাম রাখা হয় আফ্রোদিতে। জিউস সবসময় ভয়ে থাকতেন এই বুঝি অলিম্পাসের দেবতারা নিজেদের মাঝে যুদ্ধে নেমে যায় আফ্রোদিতের জন্য। আফ্রোদিতে বিয়ে করেন দেবতা হেফেস্টাসকে। শুধু হেফেস্টাসকে নিয়েই সুখী ছিলেননা বা সন্তুষ্ট ছিলেন না আফ্রোদিতে। তাই তার সাথে প্রেম হয় অনেক দেবতা আর মানুষের। আফ্রোদিতের বিখ্যাত মানুষ প্রেমিক হল এডোনিস। রোমান পুরানে আফ্রোদিতের নাম ভেনাস।
বিভাগ:

Author Name

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.