সাময়িকী.কম
সুরের দেবতা এ্যাপোলো ও মিউজ ক্যাল্লোপির পুত্র অর্ফিয়ুস ছিলো মহান কবি ও শিল্পী। তার গানে দেবতা, মানুষতো বটেই পশু-পাখিও মুগ্ধ হয়ে যেতো। তন্ময় হয়ে শুনতো অর্ফিয়ুসের গান, মন কেমন করা সুরে মোহিত হয়ে যেতো সব। সেই অর্ফিয়ুস একবার প্রেমে পড়লো সুন্দরি নিম্ফ কন্যা ইউরিডিসির। কী সুন্দর আর মোহনীয় তার রূপ। দেখে চোখ ফেরাতে পারে না অর্ফিয়ুস। যে করেই হোক তার ইউরিডিসিকে চাই। ইউরিডিসিকে না পেলে এ জন্ম ব্যর্থ, ভাবে সে। ইউরিডিসির মন জয় করতে অর্ফিয়ুস তার সমস্ত হৃদয় গলে তৈরি করলো মন ভোলানো এক সুর। আর সেই সুরে হৃদয়ের সব কথায় গাইলো এমন এক গান, যে গানে মুগ্ধ হয়ে ইউরিডিসি তার মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবেসে ফেললো অর্ফিয়ুসকে। তারা সিদ্ধান্ত নিলো যে বিয়ে করবে।
হ্যাঁ। এখন অর্ফিয়ুস ও ইউরিডিসির অমর প্রেমের যে গল্পটা আপনাদের জানাবো সেটার সাথে আমাদের বেহুলা-লখিন্দরের গল্পের অনেক মিল রয়েছে। আবার গল্পে ফিরে যাই-
মহা ধুমধামে বিয়ে হলো অর্ফিয়ুস ও ইউরিডিসির। বিয়ের দেবতা হাইমেনাস তাদের আর্শিবাদ করলো। বিশাল বাগানে বিয়ের আয়োজনে খুব উৎসব হলো। বিয়েতে সবাই পেট ভরে খেলো, পান করলো সোমরস, প্রাণ খুলে গাইলো আর নাচলো। তারপর রাত গভীর হলে অতিথিরা বাড়ি ফিরে গেলো একে একে। অতিথিদের বিদায় জানিয়ে শেষে বাড়ি ফিরছিলো ইউরিডিসি অর্ফিয়ুসের বাহুলগ্ন হয়ে। কিন্তু তারা জানতো না ঝোঁপের আড়ালে লুকিয়ে আছে মেষপালক এরিস্তায়াস। যে কিনা চুপচাপ ভালোবাসতো রূপসী ইউরিডিসিকে। কখনো বলার সাহস হয়নি । আর কোথা থেকে অর্ফিয়ুস এসে জয় করে নিয়েছে তার এতোদিনের ভালোবাসার ধন ইউরিডিসিকে। এ সে সহ্য করতে পারে না।
আজ রাতেই অর্ফিয়ুস আর ইউরিডিসি মিলিত হবে, এটা কিছুতেই হতে দিতে চায় না এরিস্তায়াস। সে একটা ছোরা হাতে বসে থাকলো ঝোঁপের আড়ালে। সুযোগ মতো অবস্থানে পেলেই বসিয়ে দেবে হাতের ছোরা অর্ফিয়ুসের বুকে আর ছিনিয়ে নেবে ইউরিডিসিকে। অর্ফিয়ুস ইউরিডিসিকে জড়িয়ে নিয়ে হেঁটে হেঁটে আসছিলো। ঝোঁপটার কাছে আসতেই এরিস্তায়াস যখন বের হয়ে এলো ছোরা হাতে ঝোঁপের আড়াল থেকে তখন ইউডিসির হাত ধরে দৌড়ে পালাতে চায়লো অর্ফিয়ুস। সেতো শিল্পী যোদ্ধা নয়। সবাইকে সে ভালোবাসতে জানে, আঘাত করতে জানে না। তাই সে এরিস্তায়াসকে আঘাত না করে ইউরিডিসি আর নিজেকে বাঁচাতে চাইলো পালিয়ে গিয়ে। দৌড়াতে লাগলো ঘন অরণ্যের ভেতর দিয়ে। যেখানে গভীর জোছনাও ঢুকতে পারে না। অন্ধকার জমে আছে সেই বনে। প্রাণপণ ছুটে যাচ্ছিলো তারা। কিন্তু হঠাৎ পা ফসকে ইউরিডিসি পড়ে গেলো এক সাপের গর্তে। আর তার পায়ের আঘাতে মারা যায় সেই গর্তে থাকা সাপের বাচ্চা। সাপ এতে রেগে গিয়ে দংশন করে বসে ইউরিডিসিকে। সাপের বিষে নীল হয়ে মারা যায় ইউরিডিসি।
এ অবস্থা দেখে এরিস্তায়াস পালিয়ে যায়। প্রিয়তমা ইউরিডিসিকে জড়িয়ে অর্ফিয়ুস ভেঙ্গে পড়ে কান্নায়। তার কান্নার করুন সুরে আকাশ-বাতাসে হাহাকার ওঠে। অর্ফিয়ুস কী করে বাঁচবে ইউরিডিসিকে ছাড়া! এ্যাপোলো সান্তনা দিলো। কিন্তু কিছেুতেই শান্ত হতে পারে না অর্ফিয়ুস। যে কোন কিছুর বিনিময়ে তিনি ফিরিয়ে আনতে চান তার ভালোবাসার মানুষকে। তিনি ছুটে চলেন মৃত্যু দেবতা হেইডিস এর কাছে। পাতালে যাওয়ার সুযোগ করে দিলেন এ্যাপোলো। ইউরিডিসিকে নিয়ে হাজির হলেন দেবতা হেইডিসের দরবারে। সিংহাসনে বসেছিলেন পাতালরাজ হেইডিস পাশেই তার রানী পারসেফোনি। সব শুনে হেইডিস বললেন, শুনেছি তুমি নাকি খুব ভালো গান করো। গানে যদি তুমি আমাদের মুগ্ধ করতে পারো তবেই পাবে তোমার প্রিয়তমা ইউরিডিসির প্রাণ। অর্ফিয়ুস হৃদয় নিঙরে শোনালো তার বুকের ভেতরের হাহাকার করুন সুরে। সমস্ত পাতাল বেদনায় স্থবির হয়ে গেলো সেই সুর শুনে। রানী পারসেফোনি কাঁদলেন, হেইডিসের চোখেও জল চলে এলো। হেইডিস ইউরিডিসির প্রাণ ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সম্মত হলেন। তবে শর্ত দিলেন- সূর্যের আলো ইউরিডিসির শরীরে না পড়া পর্যন্ত সে ইউরিডিসির দিকে তাকাতে পারবে না। সে শর্ত মেনে নিয়ে খুশি মনে ইউরিডিসিকে নিয়ে ফিরে চললো অর্ফিয়ুস।
পাতালের পথ পারি দিয়ে মর্তে প্রবেশের পূর্বে সূর্যের আলো দেখার সাথে সাথে সে অধীর হয়ে তাকালো প্রিয়তমা ইউরিডিসির দিকে। কিন্তু হায়! ভুল হয়ে গেছে সূর্য তো কেবল অর্ফিয়ুসের শরীরে পড়েছিলো তখনো ইউরিডিসির শরীরে পড়েনি।
এই সামান্য ভুলে হারাতে হলো ইউরিডিসিকে সারা জনমের জন্য। ইউরিডিসির শোকে পাগলের মতো হয়ে গেলো অর্ফিয়ুস। দেবতারা তাকে স্বর্গরাজ্যে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করলো। কিন্তু সে যাবে না ইউরিডিসির নিঃশ্বাস ছোঁয়া বাতাসের পৃথিবী ছেড়ে। শোকে ধুঁকে ধুঁকে একদিন মারা গেলেন অর্ফিয়ুস। তার লাশ ভেসে গেলো লেসবস দ্বীপে। তাই এখনো কখনো কখনো সেখান থেকে গভীর রাতে বাতাসে কান্নার হুহু সুর ভেসে আসে। অর্ফিয়ুস এখনো কাঁদে ইউরিডিসির জন্য।

বিভাগ:

Author Name

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.