আধুনিক বাংলা সাহিত্যের দিকপাল মহাকবি মাইকেল মধুসুধন দত্তের ১৪০ তম মৃত্যুবার্ষিকী ৩০ জুন। ১৮৭৩ সালের এই দিনে কলকাতার আলীপুর হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মাইকেল পড়াশুনা করেন প্রথমে কলকাতা হিন্দু কলেজে এবং পরে ১৮৪৮ সাল থেকে পিতার অর্থ সাহায্য বন্ধ হলে মাদ্রাজ চলে যান। সেখানে ইংরেজ নারী রেবেকা ম্যাক্টাভিসের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৮৫৪ সালে তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী গ্রহণ করেন। ১৮৫৬ সালে তিনি রেবেকাকে ত্যাগ করে এক ফরাসি নারী হেনরিয়েটাকে বিয়ে করে কলকাতায় ফিরে আসেন। ১৮৪৯ সালে তিনি ইংরেজি কাব্য'The Captive Ladie' রচনা করেন। ১৮৫৮ সালে রচনা করেন নাটক 'শর্মিষ্ঠা'। ১৮৬০ সালে 'একেই কি বলে সভ্যতা' ও 'বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ' নামক দুটি প্রহসন লেখেন। এ সময় তিনি সর্বপ্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখেন 'তিলোত্তমা সম্ভব' কাব্য। এরপর ১৮৬১ সালে রচনা করেন তার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি'মেঘনাদবধ কাব্য'। এরপর লেখেন ব্রজাঙ্গনা কাব্য (১৮৬১), বীরাঙ্গনা কাব্য (১৮৬২)।
পরবাস জীবনে তাঁর দু’টি অসাধারন সনেট ‘বঙ্গভাষা’ এবং ‘কপোতাক্ষ নদ’ উপস্থাপন করা হলোঃ
‘বঙ্গভাষা’
হে বঙ্গ, ভান্ডারে তব বিবিধ রতন;-
তা সবে,(অবোধ আমি) অবহেলা করি,
পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।
কাটাইনু বহু দিন সুখ পরিহরি!
অনিদ্রায়,অনাহারে সঁপি কায়, মনঃ
মজিনু বিফল তপে অবরেণ্যে বরি;-
কেলিনু শৈবালে,ভুলি কমল-কানন!
স্বপ্নে তব কুললক্ষ্নী কয়ে দিলা পরে,-
''ওরে বাছা, মাতৃকোষে রতনের রাজি,
এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি?
যা ফিরি,অঞ্জান তুই, যা রে ফিরি ঘরে।"
পালিলাম আঞ্জা সুখে; পাইলাম কালে
মাতৃভাষা-রূপ খনি, পূর্ণ মণিজালে।
কপোতাক্ষ নদ
সতত, হে নদ তুমি পড় মোর মনে
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে।
সতত যেমনি লোক নিশার স্বপনে
শোনে মায়া যন্ত্র ধ্বনি তব কলকলে
জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে।
বহু দেশ দেখিয়াছি বহু নদ দলে
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মেটে কার জলে
দুগ্ধস্রোতরূপি তুমি মাতৃভূমি স্তনে।
আর কি হে হবে দেখা যত দিন যাবে
প্রজারূপে রাজরূপ সাগরেরে দিতে
বারি রূপ কর তুমি এ মিনতি গাবে
বঙ্গজ জনের কানে সখে-সখারিতে।
নাম তার এ প্রবাসে মজি প্রেমভাবে
লইছে যে নাম তব বঙ্গের সঙ্গীতে।