তুমি আর আমি
১.
কোনও প্রশান্তি বা আনন্দের জন্য নয়
যাতে সেই উদ্গত কূপের ভিতর নেমে যেতে পারি
ভূমিস্পর্শে লীন ক’রে দিতে পারি এই অপচয়
তাই তোমাকে ডেকেছি
তুমি শুধু ধুলা বর্ষণ করো আমার উপরে
সমস্ত শরীর ধীরে ধীরে ঢেকে যাক গভীর আচ্ছাদনে
প্রতিটি রোমে যে-তড়িৎকণা স্ফূরিত হবার কথাছিল
সেই অজাত সন্তানদের শোকে বিলাপ অশালীন
সত্য উন্মোচনে তুমি স্তম্ভিত হয়ো না
স্তম্ভিত হয়ো না পুনরুত্থানের স্বপ্নে
তোমার কাছে সোপর্দ করি যাচ্ছি আমার মায়াবীলন্ঠন
২.
মরা রোদের আলো সহসা এসে পড়ল তোমার মুখে
ঘাসে ঢাকা কত লেভেলক্রসিং পেরিয়ে এলাম
পিছনে পড়ে রইল নগর সংকীর্তনের দল
বালিগোলা আর পাঁউরুটি কারখানা আর
ছোট ছোট দোকানের পাশ দিয়ে আঁকাবাঁকা মফস্বলের রাস্তা
কোনও গন্তব্য ছিল না আমার, যাচ্ছিলাম
হাওয়ায় উড়ে আসা এক চিরকুটে তুমি লিখেছিলে, শাস্তি
নাকের ডগায় ফড়িং নিয়ে ঘুমিয়েও পড়েছি অবেলায়
পরিকল্পিত দুঃস্বপ্ন, না কি স্বপ্নে পাওয়া কল্পনা
এই নিয়ে তর্কের মধ্যে
ঘামে ভেজা তোমার মুখ একবার দেখলাম, অস্পষ্ট
৩.
পথ বলে কি কিছু আছে? সবই প্রান্তর
দিগন্ত অবধি কুয়াসা বা হাহা রৌদ্র
দিগন্ত কই? কেবলই পিছিয়ে যাওয়া একটি রেখা
তবু, পায়ে পায়ে মানুষ নানাদিকে গিয়েছে, তুমিও গিয়েছ
পায়ে পায়ে তোমারও কি নিজস্ব পথ রয়েছে একটা
চোখের ওপর হাত আড়াআড়ি রেখে ভালো ক’রে নজর করি
দূর দূর দিক অবধি তাকিয়ে ঠাহর করতে চাই তোমার পথ
তুমি বল, পথ না-বানালে নাকি পথিক হওয়া যায় না
আমি কি পথিক হতে চেয়েছি?
না কি হাঁটতে চেয়েছি শুধু
যেভাবেই হোক, পৌঁছাতে চেয়েছি তোমার কাছে
তুমি তো জান মাটির নিচে ঠিক কোথায় আছে জল
অথচ আভাসেও জানালে না সেকথা
এটা একটা নৈতিকতা হয়তো, এক ধরনের বিচারপদ্ধতি
এই সরলতা থেকে শূন্য হাতে আমাকে ফিরে যেতে হয়
হয়তো না-বুঝেই নিজেকে সঁপে দিই
মাংসকাটা একটা যন্ত্রের সামনে
উচ্চবাচ্য কর না
কর না যে, সেটা লক্ষ করি তবু। কেন!
প্রত্যাশা মরে না। কেন!
তোমাকে অবিশ্বাস করার জন্য এত যে উস্কানি দাও
আমার চোখমুখের চেহারাটা দেখেছ তুমি?
হাল্কা একটা সুতোর উপর দিয়ে দৌড়ে গেলে তুমি
পড়ে রইল তোমার পায়ের ছাপ
রোদে জলে ঝড়ে সেটাও থাকবে না এক সময়
তবু, কিছুক্ষণের জন্য যে রইল, তা-ই বা মন্দ কী
ফিরে ফিরে দেখি সেই ছাপ, ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখি
মনে হয় নিজেকেই দেখি ওই পায়ের ছাপের করুণারভিতর
যদি না যেতে, দেখা হত না সেসব
একটা নগ্ন সুতো টাঙানো থাকত আকাশের গায়ে
মুরুব্বিরা বলতেন, হাঁ ক’রে কী দেখছ
ওই হল সময়
৬.
তুমি হচ্ছ উদারপন্থার একশেষ
কোনওদিন বাতাসের মধ্যেও চালালে না তোমার অঙ্কুশ
অন্তত সাপের মতো একটা নীল রঙের আলো জ্বলে কি না,দেখা যেত
হিশ্ ক’রে একটা শব্দ হয় কি না...
সব কি আর বই পড়ে জানা যায়!
আমার পক্ষে তো চমৎকার হ’ত ব্যাপারটা
আর এইখানটাতেই যত রাজ্যের তাত্ত্বিক আপত্তি তোমার
অথচ তুমিই বল কিনা
তত্ত্ব দিয়ে জীবনকে ব্যাখ্যা করা যায় না
দেখেছ তো, কেমন স্ববিরোধিতা ধরে ফেললাম তোমার
সত্যি ক’রে বলো, এবার একটু একটু রাগ হচ্ছে কি না
জানি, গোস্বা হলেও দেখাবে না, মহত্ত্ব কমে যাবে তাতে
একটু যদি কমই হ’ত মহত্ত্ব
কোরান-পুরাণ কী এমন অশুদ্ধ হ’ত তাতে
অন্তত মাঝে মাঝে তোমায় ধরতে ছুঁতে পেতাম
৭.
নিশ্বাসের সাথে তুমি যে বাতাস টেনে নিচ্ছ অবলীলায়
তাতে কি ঝুঁকি নেই ভেবেছ?
আর কিছু না হোক, হঠাৎ ক’রে গুচ্ছের পরাগরেণু
তোমার শ্বাসনালিতে ঢুকে ধুন্ধুমার কাণ্ড তো বাধিয়ে দিতে পারে একটা
উদাহরণ বাড়িয়ে লাভ নেই
বাঘ যেখানে জল খেতে আসে, আসতে হয় হরিণকেও
কে বাঘ, কে হরিণ, সেকথা অবান্তর
কথা যত বাড়তে থাকবে, বাড়তে থাকবে ঝুঁকি
তুমি কি তাই বলে মুখে কুলুপ এঁটে থাকতে বল নাকি চিরটাকাল!
অলঙ্করণঃ নাজিব তারিক