বিয়ে যে কোন মানুষের জীবনেই একটি বিশাল সিদ্ধান্তের নাম। এই সিদ্ধান্তটি আপনাকে আপনার পরবর্তী জীবনের ভালো, মন্দ সব কিছুই নির্ধারণ করে দেয়। যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন, তাকে হয়তো আপনি ভালো করেই চেনেন অথবা চেনেন না। প্রেমের বিয়ে হোক বা অভিভাবকের পছন্দে, বিয়ে মানেই দুজনের যৌথ এক জীবনের সূত্রপাত, যার সাথে জড়িয়ে আছে দৈনন্দিন সুঁই-সুতো থেকে শুরু করে বড়সড় সিদ্ধান্তও! তাই জটিলতা এড়াতে বিয়ের আগেই সঙ্গীর সাথে কয়েকটি বিষয়ে কথা বলে নিন ভালোভাবে।
জেনে নিন সেই জরুরী বিষয়গুলো যা বিয়ের আগে আলোচনা করে নিতে ভুলবেন নাঃ
১। অতীতের প্রেমের সম্পর্কঃ
এ জিনিসটা লুকোবেন না। প্রত্যেকের জীবনেই প্রথম প্রেম বলে একটা বিষয় থাকে।
এটা লুকাবেন না। কেননা আপনার স্বামী/স্ত্রী কোন না কোন দিন এটা জেনে যাবেনই! তাই বিয়ের আগেই খোলাখুলি বলে দিন এবং আপনার সঙ্গীর অতীত সম্পর্কেও জানতে চান। স্বচ্ছতা দিয়েই শুরু হোক আপনাদের নতুন জীবন।
২। অর্থনৈতিক দিকঃ
এটা কিন্তু মোটেই অবহেলা করার জিনিস না। আপনাদের আয়-ব্যয়, সঞ্চয় নিয়ে পরিকল্পনা করুন। কে কতখানি কার বাবা মাকে দেবেন সেটি নিয়েও কথা বলুন খোলাখুলি। যদি আগের কোন ঋণ থাকে, তাহলে দুজন মিলে কত জলদি সেটা মিটিয়ে ফেলা যায়, সে ব্যাপারেও কথা বলুন। কেননা আপনারা তো দুজন দুজনের জীবনটাই ভাগাভাগি করতে যাচ্ছেন। তাই না?
৩।সন্তান ও লালন পালনঃ
বিয়ের পরবর্তী বিষয় অবশ্যই সন্তান। তাই কথা বলে নিন আপনার সঙ্গীর সাথে। কেননা হয়তো আপনি কয়েক বছর পর ক্যারিয়ার গুছিয়ে সন্তান চাইছেন, কিন্তু আপনার সঙ্গী চাইছেন বিয়ের পর পরই সন্তান নিতে। এক্ষেত্রে বিবাহ পরবর্তী মনোমালিন্য এড়াতে আগেই এ নিয়ে কথা বলুন।
৪। আবাসন ও অন্যান্যঃ
বিয়ের পর কোথায় থাকবেন আপনারা। আপনই হয়তো চাইছেন আপনার বাবা মায়ের সাথে থাকতে আর আপনার সঙ্গী চাইছেন আলাদা থাকার জন্যে। সেক্ষেত্রে দুজন মিলে আগেই আলোচনা করে নিন। আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধানই তো করা সম্ভব তাই না?
৫। ক্যারিয়ার ও জীবনের লক্ষ্যঃ
আজকাল শিক্ষিত পরিবারে স্বামী স্ত্রী দুজনেই চাকরি করেন। এতে পরিবারে যেমন অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য বজায় থাকে, তেমনি নিজেদের ব্যক্তিত্ব ও ইচ্ছের ভূমিকাটাও এতে অনেক বেশি। তাই নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলুন। আপনি কি করছেন, ভবিষ্যতে কি করতে চান ও কেন এসব কিছু নিয়েই কথা বলে নিন। এতে পরবর্তীতে আপনি বাড়তি আকাঙ্ক্ষা, উচ্চাশা ও হতাশা থেকে মুক্তি পাবেন।
৬। বয়স্ক বাবা মাঃ
বয়স্ক বাবা মায়ের যাতে কোন ভাবেই অবহেলা না হয়। আপনি স্বামী হোন বা স্ত্রী, কখনোই নিজের বা অপরের বাবা মা কে দায়িত্বের বাইরে ভাববেন না। তাই বিয়ের আগে এটি নিয়েও কথা বলুন। এতে লজ্জার কিছু নেই। সন্তান হিসেবে এটি আপনার সততা ও দায়িত্বের পরিচয় দেয়। নিজের বাবা মায়ের দায়িত্ব শক্ত হাতে না নিতে পারলে আপনি আরেকজন মানুষের সারা জীবনের দায়িত্ব নেয়ার অঙ্গীকার কিভাবে করবেন!
৭। কাজের ভাগাভাগিঃ
একটি পরিবারে কাজের দায়ভার কম নয়। আপনার স্ত্রী যদি গৃহিণীও হয়ে থাকেন, তবুও সব কাজ তার দিকেই ঠেলে দেবেন না। এটি নিয়ে আলোচনা করুন। কাজের ভাগাভাগি দাম্পত্যকে ক্লান্তিকর করে না বরং এর মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ দাম্পত্য জীবন গড়ে ওঠে।
৮। বন্ধু বান্ধবঃ
কাছের বন্ধু বান্ধবদের ব্যাপারে কথা বলে নিন। বিপরীত লিঙ্গের বন্ধু বান্ধব থাকলে সেটি নিয়ে আরো ডিটেইলসে কথা বলুন, প্রয়োজনে একদিন দেখা করিয়ে দিন। বিয়ের পর ঝামেলা কম হবে।
৯। সুখে, অসুখেঃ
সুখটুকুই নয়, জীবন্সঙ্গীর সাথে শেয়ার করতে হবে অসুখটুকুও। অসুখ বিসুখ থাকা দোষের কিছু নয়, কিন্তু সেটি লুকোনো দোষের। আপনার কোন দীর্ঘমেয়াদী রোগ, যেমন এজমা, ব্লাড প্রেশার, হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস এ জাতীয় কিছু থাকলে তা বলে দিন সঙ্গীকে। যিনি আপনার মনকে ভালোবাসেন, তার জন্যে এগুলো কোন বাধাই নয়!
১০। নাম, পরিচয়ঃ
আপনার স্ত্রী যদি ভালোবেসে আপনার নামের শেষাংশ তার নামে ব্যবহার করতে চান, তবে ঠিক আছে। কিন্তু তিনি যদি না চান, দয়া করে তার ওপর চাপিয়ে দেবেন না। তিনি আপনার জীবনসঙ্গী, কেনা সম্পত্তি নন। তাই এটি নিয়েও কথা বলে নিন।
প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো রইলো এখানে। আর বাকীটুকু আপনারাই ভেবে নিন। দাম্পত্যজীবন হোক সুন্দর।