ইয়াহিয়া ছিলেন জাকারিয়ার পুত্র। তিনি ছিলেন তরিকাবন্দীদাতা। মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলার অপরাধে বাদশাহ হেরোদ তাকে বন্দী করেছিলেন। ইয়াহিয়ার কথা শুনতে পছন্দ করতেন হেরোদ। তাই মাঝে মধ্যেই তার কথা শোনার জন্য নিজের কাছে নিয়ে আসতেন। হেরোদ তার ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়াকে বিয়ে করেছিলেন।
ইয়াহিয়া এই বিষয়ে হেরোদকে বলে যে, ভাইয়ের স্ত্রী হেরোদিয়াকে বিয়ে করা হেরোদের উচিত হয় নি। এই কথাটা হেরোদিয়ার ভালো লাগেনি। তাই সে ইয়াহিয়াকে অপছন্দ করতো। সে চেয়েছিলো ইয়াহিয়াকে হত্যা করতে। কিন্তু হেরোদ ইয়াহিয়াকে পছন্দ করতেন বলে কিছু করতে পারছিলো না। হেরোদ জানতেন, ইয়াহিয়া ঈশ্বর ভক্ত ভালো লোক। হেরোদ নানা বিষয়ে ইয়াহিয়ার সাথে কথা বলতেন। হেরোদিয়ার সেটা ভালো লাগতো না। তার মনে ভয় ছিলো, ইয়াহিয়া হয়তো একদিন হেরোদকে ঠিকই বুঝিয়ে ফেলবে হেরোদিয়াকে বিয়ে করাটা অন্যায় হয়েছে। কিন্তু হেরোদিয়া চায় বাদশাহ’র স্ত্রী হয়ে থাকতে। কোন নারী চায়বে না বাদশাহ’র স্ত্রী হতে?
যাইহোক, বাদশাহ হেরোদের জন্মদিন উপলক্ষে বিশাল ভোজসভার আয়োজন করা হলো। ভোজসভায় বড় বড় রাজকর্মচারী, সেনাপতি ও গালীল প্রদেশের প্রধান লোকেরা উপস্থিত ছিলো। সুস্বাদু মাংস আহারের পর উৎকৃষ্ট আঙুরের তৈরি পানীয় পান করতে করতে বাদশাহ অতিথিদের নিয়ে নাচ-গান উপভোগ করছিলেন। হেরোদিয়ার মেয়েও নাচলো। বাদশাহ আর অথিতিরা হেরোদিয়ার মেয়ের নাচ দেখে সন্তুষ্ট হলেন। মেয়েটির নাম ছিলো সালোম। তখন বাদশাহ সালোমকে বললেন, “তোমার নৃত্যে আমি খুব সন্তুষ্ট হয়েছি। তুমি যা চাও আমি তোমাকে তাই দেব।” তারপর বাদশাহ কসম খেয়ে বললেন, “তুমি যদি আমার আধেক রাজ্যও চাও, তবে তাও আমি দেব। তুমি কী চাও?” মেয়েটি তার মা হেরোদিয়ার কাছে গিয়ে জানতে চাইলো, মা, আমি বাদশাহ’র কাছে কী চাইবো? হেরোদিয়া এই সুযোগ নষ্ট করতে চাইলো না। সে মেয়েটিকে শিখিয়ে দিল ‘তারকাবন্দীদাতা ইয়াহিয়ার মাথা’ চাইতে। মেয়েটি তখনই গিয়ে বাদশাহকে বললো, “একটা থালায় করে আমি এখনই তরিকাবন্দীদাতা ইয়াহিয়ার মাথা চাই।”
এই কথা শুনে হেরোদ খুব দুঃখিত হলেন। কিন্তু এত এত মানুষের সামনে তিনি কসম খেয়েছেন বলে মেয়েটিকে ফিরিয়ে দিলেন না। জল্লাদকে হুকুম করলেন ইয়াহিয়ার মাথা কেটে আনার জন্য।
জল্লাদ ইয়াহিয়াকে গিয়ে বললো, বাদশাহ আপনার মাথা কেটে নেয়ার হুকুম দিয়েছেন। ইয়াহিয়া শান্ত ভাবে নিজের কুর্তাটা খুলে মাথাটা কাটার জন্য এগিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করলেন। তিনি জানতেন, তাঁর মৃত্যু ঈশ্বর এ ভাবেই রেখেছেন। জল্লাদ ইয়াহিয়ার মাথা কেটে থালায় করে নিয়ে এসে বাদশাহকে দিলো। বাদশাহ সেটা দিলেন মেয়েটাকে। আর মেয়েটা নিয়ে গিয়ে দিলো তার মা হেরোদিয়াকে।
বাইবেলের এই ঘটনার উপর বেশ কিছু চিত্রকর্ম আছে ‘Salome with the head of St. John the Baptist’ শিরোনামে। তবে ইতালির বিখ্যাত চিত্রকর Caravaggio এর আঁকা পেইন্টিংটিই সবচেয়ে বেশি খ্যাতি অর্জন করে। এটি লন্ডনের ন্যাশনাল গ্যালারিতে সংরক্ষিত আছে।