সাময়িকী.কম
আরিফুর রহমান : জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও স্টেশন, অনলাইন পোর্টাল, ব্লগ ও ফেসবুকের সব ধরনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সম্প্রচার নীতিমালা শুধুু টেলিভিশনের জন্য প্রযোজ্য হলেও এবার দেশের অন্য সব গণমাধ্যমের কর্মকাণ্ড সরাসরি তদারকি করবে তথ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, গণমাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের তথ্য প্রকাশিত হয় না, বরং বেশি বেশি নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করা হয়; যা সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ ও ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করে। তাই এখন থেকে গণমাধ্যমে যেসব টক শো, খবর, ব্যক্তিগত মতামত, ভাবনা এবং অভিমত প্রকাশিত হবে- সবই তথ্য অধিদপ্তর কঠোরভাবে নজরদারি করবে। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্লগ ও সংবাদপত্রে যেসব নিবন্ধ পরিবেশিত হবে, সেগুলোও পর্যবেক্ষণ করা হবে।
আরিফুর রহমান : জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও স্টেশন, অনলাইন পোর্টাল, ব্লগ ও ফেসবুকের সব ধরনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সম্প্রচার নীতিমালা শুধুু টেলিভিশনের জন্য প্রযোজ্য হলেও এবার দেশের অন্য সব গণমাধ্যমের কর্মকাণ্ড সরাসরি তদারকি করবে তথ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, গণমাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের তথ্য প্রকাশিত হয় না, বরং বেশি বেশি নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করা হয়; যা সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ ও ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করে। তাই এখন থেকে গণমাধ্যমে যেসব টক শো, খবর, ব্যক্তিগত মতামত, ভাবনা এবং অভিমত প্রকাশিত হবে- সবই তথ্য অধিদপ্তর কঠোরভাবে নজরদারি করবে। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্লগ ও সংবাদপত্রে যেসব নিবন্ধ পরিবেশিত হবে, সেগুলোও পর্যবেক্ষণ করা হবে।
মিডিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, এসব বিষয় বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করে তা সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। সরকার সেসব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। ১৯৯৫ সালের বেইজিং প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশনের (বিপিএফএ) আলোকে সরকার গণমাধ্যমের ওপর এ মনিটরিং করতে পারে বলে দাবি করেছেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এর মাধ্যমে গণমাধ্যমে ভুল তথ্য পরিবেশন কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তথ্যসচিব মর্তুজা আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। গণমাধ্যমের কার্যক্রম নজরদারি করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই বলেও জানান তিনি।
জানা যায়, গণমাধ্যমের কার্যক্রম তদারকি করার জন্য ‘তথ্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কার্যক্রম সমন্বয় ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যোগাযোগ শক্তিশালী করা’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এ অর্থের জোগান দেওয়া হবে। এটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্পের ওপর সব মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়ার জন্য আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর বৈঠক ডেকেছে কমিশন। ওই বৈঠকে সবার মতামত নেওয়ার পর তা পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। এর পরই এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
এর আগে গত ৪ আগস্ট স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠন ও জনস্বার্থে বিদ্রোহ, নৈরাজ্য ও হিংসাত্মক ঘটনা সম্প্রচার না করার বিধান রেখে ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪’ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। ওই নীতিমালা নিয়ে সারা দেশে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। টিআইবি ও সম্পাদক পরিষদসহ গণমাধ্যমকর্মীরা ওই নীতিমালার কঠোর সমালোচনা করেন। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সম্প্রচার নীতিমালা গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করবে। পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রকাশের চেয়ে নেতিবাচক সংবাদ বেশি পরিবেশিত হয়। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় সরকার সাধারণ মানুষের আবেগ ধরতে পারে না। এ জন্য সরকারের সঙ্গে সাধারণ মানুষের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। জনগণ মনে করে, সরকার তাদের নিয়ে ভাবে না। তাই সরকার ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব কমাতে মিডিয়াকে তদারকি করা জরুরি বলে মনে করে মন্ত্রণালয়। আবার অনেক সময় গণমাধ্যমে খবর পরিবেশিত হওয়ার কারণে সরকার তার আগের সিদ্ধান্তও পরিবর্তন করতে পারে, যা সরকারের ইমেজ আরো শক্তিশালী করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, অনেক ক্ষেত্রে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া প্রকৃত তথ্য ও ছবি পরিবেশন করে না। এতে দেশের সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। অনেক নেতিবাচক সংবাদের কারণে সাধারণ মানুষ ও পুরো দেশ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে। এসব কারণে দেশের সব গণমাধ্যমের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও মনিটরিংয়ের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রতিদিন সংবাদপত্রে যেসব খবর, অভিমত ও নিবন্ধ প্রকাশিত হয়, এখন থেকে সেগুলো মনিটর ও সংরক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে প্রতিদিন যেসব টক শো হয়, সেগুলোও সংরক্ষণ করা হবে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন ব্লগ, ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিদিন সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের নেতিবাচক সংবাদ দেওয়া হয়, যা পুরোপুরি মিথ্যা। এমন বাস্তবতায় পত্রিকা, টেলিভিশন, রেডিও স্টেশন, ব্লগ ও ফেসবুকের কার্যক্রম সরকারের নজরদারিতে আনা জরুরি। সে জন্য এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা।
ওই প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সব ধরনের কার্যক্রম তদারকির জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হবে, যার মাধ্যমে গণমাধ্যমের সংবাদ পর্যবেক্ষণ করা হবে। এটি তৈরিতে মোট ব্যয় হবে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। অন্যান্য খাতে ব্যয় হবে আরো তিন কোটি টাকা। সচিবালয়ের ৯ নম্বর ভবনের (ক্লিনিক ভবন) দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় কার্যালয় স্থাপন করে সেখানে বসে মিডিয়ার ওপর নজরদারি করা হবে। এসব কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য সরকার বিসিএস ক্যাডারের এক কর্মকর্তাকে পরিচালক পদে নিয়োগ দেবে। অন্য পেশা থেকেও পরিচালক পদে নিয়োগ দিতে পারবে সরকার। পরিচালকের পাশাপাশি একজন উপপরিচালকও থাকবেন। এর পাশাপাশি একজন আইটি বিশেষজ্ঞও থাকবেন।
মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মিডিয়া নজরদারি নতুন কোনো বিষয় নয়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে লন্ডনে প্রথম সংবাদপত্রের ওপর তদারকি শুরু হয়। এরপর বিংশ শতাব্দীতে এসে রেডিও ও টেলিভিশনের ওপরও নজরদারি শুরু হয়। সে হিসাবে বাংলাদেশে অনেক পরে গণমাধ্যমের ওপর নজরদারি শুরু হচ্ছে বলে জানান কর্মকর্তারা। এ ছাড়া দেশে প্রায় প্রতিদিনই অনেক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। গণমাধ্যম কিভাবে এসব জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ পরিবেশন করে, এখন থেকে তা দেখা হবে। সংবাদমাধ্যমের তথ্য পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন এবং জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি সরকারকে অবহিত করতে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব অনেকটা কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। সূত্র : দৈনিক কালের কন্ঠ