স্পোর্টস ডেস্ক
সাময়িকী.কম
কোহলিকে আউট করার পর রুবেলকে নিয়ে টাইগারদের উল্লাস

আম্পয়ারদের বেশক'টি প্রশ্নবোধক সিদ্ধান্তে কোয়ার্টার ফাইনালেই শেষ হলো বাংলাদেশের একাদশ বিশ্বকাপ অভিযান। গতকাল মেলবোর্ন স্টেডিয়ামে পুরো ম্যাচে আম্পায়ারদের ভুলে কোণঠাসা হয়ে ভারতের কাছে ১০৯ রানে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে মাশরাফি বাহিনী। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে রোহিত শর্মার সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে ৩০২ রান করে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত। জবাবে ৪৫ ওভারে ১৯৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।

হারা ম্যাচেও বাংলাদেশের প্রাপ্তি অনেক। আম্পায়ারদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের 'বলি' না হলে ম্যাচের ফলাফল অন্যরকম হওয়া বিচিত্র ছিল না। এই জয়ে ভারত উঠেছে সেমিফাইনালে। 

টস জিতে ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলে শুরু থেকে কোন কিছুই তার পক্ষে ছিল না। বাংলাদেশ দল ত্রিশতম ওভার পর্যন্ত আক্রমণাত্মক বোলিং করে ভারতকে রান তোলার ক্ষেত্রে চাপের মধ্যে রাখে। কিন্তু যখনই টাইগাররা একটু রক্ষণাত্মক হয়েছে, তখনই চড়াও হয় ভারতের ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট। ওপেনার রোহিত শর্মা একটা প্রান্ত আগলে রাখলেও স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারছিলেন না। অনেকটা সময় খোলসের মধ্যে থাকার পর হাত খোলার সুযোগ পান তিনি। ৮০ বলে যেখানে রোহিতের রান ছিল ৬০, সেখানে ইনিংস শেষে দেখা যায় তার স্কোর ১২৬ বলে ১৩৭ রান। অথচ ব্যক্তিগত ৯০ রানে তিনি রুবেলের বলে পরিষ্কার ক্যাচ আউট হলেও লেগ আম্পায়ার পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দার নো বল ডেকে মূল আম্পায়ার ইংল্যান্ডের গোল্ডকে সংকেত দেন। পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় উচ্চতার দিক দিয়ে বলটি নো ছিল না। অর্থাৎ রোহিত পরিষ্কার ক্যাচ আউট। এমন একটি সিদ্ধান্ত পক্ষে যাওয়ায় উজ্জিবীত রোহিত সেঞ্চুরি করে ভারতের বিশাল স্কোরে বড় ভূমিকা রাখেন। 

ম্যাচের শুরুতে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের চাপের মধ্যে রেখে বাংলাদেশ দল প্রমাণ করেছে, বোলিং এবং ফিল্ডিংয়ে তাদের হেলা করার দিন শেষ। কিন্তু আম্পায়ারদের কল্যাণে দিনের শেষে সবকিছু যায় ভারতের পক্ষেই। বাংলাদেশের বোলিং ডিপার্টমেন্টের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে সুরেশ রায়না ৫৭ বলে খেলেন ৬৫ রানের ইনিংস। শেষদিকে রবিন্দ্র জাদেজার ব্যাট থেকে ১০ বলে আসে ২৩ রান। সব মিলিয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহটা দাঁড়ায় ৩০২ রানে। জবাবে তামিম ইকবাল শুরুটা ভালোই করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের আগে খেলা গ্রুপ পর্বের ছয় ম্যাচে প্রতিপক্ষের ৬০টি উইকেট শিকারের মধ্য দিয়ে তেঁতে থাকা ভারতীয় বোলিং ডিপার্টমেন্টের জন্য ৩০২ রান ছিল অনেক বড় পুঁজি। বাংলাদেশকে অলআউট করার মধ্য দিয়ে ভারতের বোলিং ডিপার্টমেন্ট চলতি বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষের ৭০টি উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখাল। সেই সঙ্গে অধিনায়ক হিসেবে ধোনির জেতা হয়ে গেল ১০০টি ওডিআই ম্যাচ। 

বাংলাদেশের ১০৯ রানের পরাজয়ে আম্পায়ারদের ভূমিকাটা উপেক্ষা করার কোন উপায় নেই। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে ৪.৩ ওভারে ৪১ রান সংগ্রহ করে কেবলই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন রোহিত এবং রায়না। এ সময় রুবেল হোসেনের একটা ফুলটস বলে রোহিত মিড উইকেটে ক্যাচ দেন। লেগ আম্পায়ার আলিমদার সবাইকে বিস্মিত করে দিয়ে বলটাকে 'নো' ডাকেন। রিপ্লেতে দেখা গেছে বলটা রোহিতের কোমর সমান উঁচুতে থাকলেও রোহিত তখন নিজের স্বাভাবিক ক্রিজে ছিলেন না। এছাড়া বলটা তখন নিচু হয়ে যাচ্ছিল। শুধু তাই নয়, এরকম একটা পরিস্থিতিতে প্রয়োজন পড়ে অনেক বেশি সতর্কতার। কিন্তু ফিল্ড আম্পায়াররা থার্ড আম্পায়ারের সঙ্গে কোনরূপ শলাপরামর্শ না করেই অনেকটা তড়িঘড়ি 'নো' বলের সিদ্ধান্ত দেন। 

জীবন পাওয়ার সময়ে রোহিতের সংগ্রহ ছিল ১০১ বলে ৯০ রান। আর ৪০তম ওভারে তখন ভারতের সংগ্রহ ১৯৬ রান। শেষ দশ ওভারে বাংলাদেশ দল ক্রিজে ধোনি এবং রবিন্দ্র জাদেজাকে পেতে চেয়েছিল। কেননা, তারা এই মুহূর্তে ঠিক ফর্মের মধ্যে নেই। আম্পায়ারিং দুর্বলতায় এর পরিবর্তে রোহিতের ব্যাট থেকে বাংলাদেশ দল দেখল বেশ কিছু স্ট্রোক। ৩৫তম ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে ভারতের সংগ্রহ যেখানে ছিল ১৫৫ রান, ১৫ ওভার পরে অর্থাৎ নির্ধারিত পঞ্চাশ ওভার শেষে ওটা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। 

তবে বাংলাদেশ দল চেষ্টার ত্রুটি করেনি। প্রথম উইকেটে ভারতীয়রা ৭৫ রানের জুটি গড়লেও এর জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৭তম ওভার পর্যন্ত। দলীয় ৭৫ রানে শিখর ধাওয়ানকে ফেরানোর চার রান পরই ভারতের ইনফর্ম ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলিকে ফিরিয়ে ম্যাচের মধ্যে বেশ ভালোভাবেই টিকেছিল টাইগাররা। ২৮তম ওভারে দলীয় ১১৫ রানে তৃতীয় উইকেট হিসেবে আজিঙ্কা রাহানেকে ফেরানোর মধ্য দিয়ে ভারতের ওপর বড়সড় একটা আঘাতও করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এর পরই আর নিয়ন্ত্রণ থাকেনি। 

মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের মতো বড় মাঠে তিনশ'র বেশি রান তাড়া করে জয় পাওয়াটা মনস্তাত্তি্বকভাবেই বাংলাদেশের জন্য ছিল বড় রকমের চাপ। এই মাঠে সর্বোচ্চ ২৯৭ রান তাড়া করে জয় পাওয়ার রেকর্ড আছে। সেখানে বাংলাদেশের জন্য টার্গেট ছিল আরও ছয় রান বেশি। সামনে ছিল ভারতের হঠাৎ জেগে ওঠা বোলিং ডিপার্টমেন্ট। ফলে মূলত চাপের কাছেই আত্মসমর্পণ করে বাংলাদেশের ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট। তামিম ইকবাল বেশ কয়েকটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ২০০৭ সাল ফিরিয়ে আনার ইংগিত দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ২৫ বলে ২৫ রানের ইনিংস খেলে ফিরে যাওয়ার পর বড় কোন জুটি গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয় টাইগাররা। ওয়ানডাউন ব্যাটিং পজিশনে বাংলাদেশের সৌম্য সরকার নিজেকে মানিয়ে নেয়ার ইংগিত দিয়েছেন ২৯ রানের ইনিংস খেলে। এত চাপের মাঝেও শেষদিকে ৩৪ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলেছেন নাসির হোসেন। ত্রিশ রান এসেছে সাবি্বরের ব্যাট থেকেও। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে বলার মতো ব্যক্তিগত সংগ্রহ এটুকুই। ভারতের হয়ে উমেশ যাদব চারটি, মোহাম্মদ শামি ও রবিন্দ্র জাদেজা দুটো করে এবং মোহিত শর্মা একটি উইকেট লাভ করেন। ক্রিকইনফো/টাইমস অফ ইন্ডিয়া। সূত্র : দৈনিক সংবাদ 
বিভাগ: ,

Author Name

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.