আপনি কি জানেন, বেশীর ভাগ মানুষই তাদের দিনের একটি বড় সময় ব্যয় করে ফেসবুকিং-এর পেছনে? হয়তো আপনার মনে হচ্ছে আপনি এর বাইরে। কিন্তু হিসেব করে দেখুন তো! সকালে অফিস বা ক্লাসে যাবার সময়ে, ক্লাসের বা কাজের ফাঁকে, লাঞ্চ ব্রেকে, এমনি এমনি, ফেরার পথে, আড্ডার মাঝে, রাতে ঘুমুতে যাবার আগে, সব মিলিয়ে মোট কতটা সময় আপনি ফেসবুকে থাকেন? হিসেব করলে সময়টা দেখে আপনি আঁতকে উঠবেন নিশ্চিত। অন্য সময়ে এটি আপনাকে বেশ আনন্দে রাখলেও আপনি কি জানেন, ঘুমুতে যাবার আগে ৫ মিনিটের ফেসবুকিং ঠিক ততটাই ক্ষতিকর?
জেনে নিন কিভাবে এটি আপনার জন্যে ক্ষতির কারণ হতে পারে।
১। আপনি নিজেকে মানসিকভাবে আহত করছেনঃ
সাধারণত আমরা ফেসবুক ব্যবহার করে থাকি সবার সাথে সামাজিক ভাবে সংযুক্ত থাকার জন্যে। কে কী করলো না করলো সেটা জেনে প্রায়শই ভালো লাগে। কিন্তু মুদ্রার উল্টোপিঠে অন্য কিছুও থাকে। এমন কেউ, যাকে আপনি পছন্দ করেন না, তার সাফল্যও আপনার মনে ঈর্ষা তৈরী করবে, আপনি যাকে একতরফাভাবে পছন্দ করেন, তার কিছু কর্মকান্ডও ফেসবুকে দেখে আপনার খারাপ লাগতে পারে। আর রাতে আরামের ঘুম নষ্ট করে মানসিক অশান্তিতে পুড়তে থাকার জন্যে ৫ মিনিটের ফেসবুকিংই যথেষ্ট!
২। ভালোবাসার মানুষটির সাথে কথা বলুন, একটিভিটি দেখার চেয়েঃ
ভালোবাসার মানুষটি সারাদিন কী করলো না করলো সেটা দেখার জন্যে হয়তো রাতে ঘুমোবার আগে শেষবারের মত চোখ রাখলেন ফেসবুকে। কিন্তু আপনার কোন অপছন্দের মানুষের ছবিতে তার লাইক, কমেন্ট অথবা অন্যকিছু দেখে মাজাজটাই গেলো বিগড়ে। সারারাতের ঘুমটাই মাটি। এর চেয়ে প্রিয় মানুষটির সাথে ফোনে কথা বলুন দু মিনিট। তারপর ভালোলাগার অনুভূতি নিয়ে ঘুমুতে যান।
৩। মস্তিষ্কের জন্যে ক্ষতিকরঃ
ফেসবুকে বিভিন্ন পেজে অনেক সময় নানা ধরনের সহিংস তথ্য বা ছবি দেয়া থাকে, যেগুলো আপনার হোমপেজে আসার কারণে আপনার চোখে পড়বে। সেগুলো দেখে আপনার মস্তিস্কে এক ধরনের চাপ পড়বে। যা অবদমন করেই হয়তো আপনি ঘুমুতে যাবেন। কিন্তু অবচেতন ভাবেই মস্তিষ্ককে সে চিন্তা বিশ্রাম নিতে দেবে না। ফলে ঘুম থেকে জেগে উঠেও আপনি সারাদিন থাকবেন ক্লান্ত ও খিটখিটে।
৪। দুঃখবোধ, রাগ ও অস্থিরতাঃ
ফেসবুকে সব সময় ভালো ভালো ঘটনাই মানুষ শেয়ার করে তা কিন্তু নয়। খুব খারাপ কিছু ঘটনাও আপনার চোখে পড়তে পারে। ফলে রাতে ঘুমুবার সময়ও আপনি দুঃখবোধ, রাগ ও অস্থিরতা নতুন করে গ্রহণ করে ঘুমুতে যাচ্ছেন, শরীরের জন্যে এটা মোটেই ভালো কিছু নয়।
৫। হীনম্মন্যতা কি ঘুমুতে দেবে আপনাকেঃ
অনেক সময় ফেসবুকে অন্য কারো সাফল্য আপনার মনে তৈরী করতে পারে হীনম্মন্যতা। আর দিনশেষে ক্লান্ত শরীরে আপনার মস্তিষ্ক এর পজিটিভ বিশ্লেষণ করতে নাও পারে। তাই, এক ধরনের হীনম্মন্যতাবোধ নিয়েই ঘুমুতে যান আপনি।
৬। অনিদ্রা রোগের সূত্রপাত হতে পারেঃ
ঘুমুবার আগে হয়তো ভাবলেন যে, দু মিনিট ফেসবুকে ঘোরাঘুরি করেই ঘুমিয়ে পড়বেন। কিন্তু কখন যে সেটা ২-৩ ঘন্টায় চলে যায়, তা হয়তো আপনার খেয়ালও থাকে না। আর এভাবেই রোজ রাতে দেরী করে ঘুমুতে ঘুমুতেই অনিদ্রা রোগী বা ইনসমনিয়াক হয়ে যেতে পারেন আপনি।
ঘুমোতে যাবার আগে যতটা সম্ভব সব চিন্তাভাবনা মুক্ত হয়ে ঘুমোতে যান। শুনতে পারেন হালকা মিউজিকের কোন গান, পড়তে পারেন দু একটা কবিতা, প্রিয়জনের সাথে কথা হতে পারে ৫ মিনিট! এর বেশি কিছু নয়। ভুলে যাবেন না, রাতের ভালো ঘুমই আপনাকে আগামী একটি সুন্দর দিন উপহার দিতে পারে!