- আগামি মঙ্গলবার কিন্তু আমার
বার্থ ডে!
- জানলাম।
- সেদিন এক অনাড়ম্বরপূর্ণ
অনুষ্ঠান হবে । শহর থেকে দূরে কোথাও, যেথা সবুজ শ্যামলিমায় ছেঁয়ে থাকবে চারপাশ আর
অদূরে থাকবে ছোট্ট নদী। যে নদীতে খেলা করবে সতেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতার উল্লিখিত
সেই পানকৌড়ি; সেখানে থাকবে না কেউ, শুধু থাকব তুমি আর আমি আর থাকবে প্রকৃতির ঐ
নিটোল দেশ।
কথাটি বলেই সুস্মিতা আমার হাত
চেপে ধরে। ভারি মিষ্টি মেয়ে। বয়স একুশ ছুই ছুই করছে। এলোচুল কিন্তু বেশ লম্বাটে। অনেকটা
আলাওলের পদ্মাবতী উপাখ্যানের নায়িকা পদ্মাবতীর মত। স্বর্গের আবির মাখা ঠোঁট। যুগের
চাহিদার রঙ তুলির নিটোল ক্যানভাসে ওর কপোল জুড়ে খেলা করে ব্ল্যাকহোলের গোপন
রহস্য! দৃষ্টির সীমানা জুড়ে কোন লোকালয় নেই, যেন কেবলি ঘন অরণ্য আর কাশফুলের শুভ্রতা। আমি ওর ঘনকালো চোখের দিকে
তাকাই। মনে হল সহস্র বছরের পুঞ্জত পুঞ্জত স্বপ্নগুলো পিপীলীকার মত সারি বেঁধে ওর
চোখ দিয়ে যেন অবলীলায় নেমে আসছে। সে স্বপ্ন জুড়ে কোন উন্মাদনা নেই। নেই হরতালের
মত নৈরাজ্য! নেই বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মত সেশনজট! প্রস্ফুটিত ফুলের মতই সে
স্বপ্নগুলো সতেজ, সুরভিত। শরতের শুভ্রতার সাথেও যেন তার অনাদিকালের মিতালি। কাশফুলের
নরম ছোঁয়ার মতই তার দৃষ্টির ভাবাবেগ। ওর সেই শুভ্রতা লোলুপ চোখের দিকে তাকিয়ে
বলি- বেশ তাই হবে।
মঙ্গলবার। বিকেল বেলা।
সূর্যের তেজস্ক্রীয়তা তেমন একটা নেই বললেই চলে। আমি চলে গেলাম আমাদের পরিচিত সেই
শহরতলীর পরিচিত খেয়াং নদীর ধারে। প্রায় শত বছরের পুরনো এই নদী। তবুও এই শরতের স্বপ্নিল
মুহূর্তের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উষ্ণতা নিয়ে এখানে আসলে মনে হয় এ যেন চির নতুন! নদীর
দু’তীর জুড়ে ঘন কাশফুল। মনে হবে বিস্তৃত পরিসর জুড়ে হয়ত কোন সৌখিন ভদ্রলোক
কাশফুলের চাষ করেছে! ফুরফুরে বাতাস বইছে। বাতাসে কাশফুলগুলো নুইয়ে পড়েছে একটি
আরেকটির গায়। প্রেমিক জুটি অন্তরঙ্গ মুহূর্তে যেমন থাকে তেমনি আর কি! আমি ঘড়ির
দিকে তাকাই। প্রায় চারটা বাজে। সুস্মিতা এখনো আসছে না। অবশ্য ওর তিনটাতেই আসার
কথা। মনের মধ্যে অজানা শঙ্কা আঁচর কাটতে থাকে। ভাবী স্বপ্নের প্রলেপ দিয়ে সে
শঙ্কাকে দূর করি। কিন্তু কত ক্ষণ আর পারা যায়! ধৈর্যের বাঁধ প্রায় ভেঙ্গে আসছে।
হঠাৎ অপরিচিত নাম্বারে কল আসে। আমি হ্যালো বলতেই অপর দিকে নীরব। আমিও নীরব। এভাবে
প্রায় আধা মিনিট পর কান্নাজড়িত স্বরে ভদ্রমহিলা বলল- আমি সুস্মিতার মা। আমি সালাম
দেই। জিজ্ঞেস করি সে কোথায়? তিনি উত্তরে শুধু বললেন- আজ আড়াইটার দিকে বাসা থেকে
সেজেগুজে ও বের হওয়ার পথে এলাকার চিহ্নত বখাটে পঙ্কজ তার মুখে অ্যাসিড মেরেছে। সুস্মিতা
এখন বার্ন ইউনিটে!
ভাবী স্বপ্নের মৃত্যুতে আমার
শরীর হিম হয়ে আসে। হাত-পা কাঁপতে থাকে। চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে। বাম হাত দিয়ে চোখ
মুছতে মুছতে শুধু বললাম- আসছি!
মুনশি আলিম
টিলাগড়, সিলেট