অর্পিতা ঈষৎ
লজ্জারাঙা হাসি দিয়ে বলল- “এই তোমার তো চুল পড়ে যাচ্ছে। খুব অল্পতেই না আবার টাকলু হয়ে যাও!” আমি স্মিত হেসে তার দিকে তাকাই। নাতিদীর্ঘ দেহ কিন্তু সাদা গোলাপের মতই শুভ্র
তার মুখ। রবি ঠাকুরের
অঝর কবিতার মতই তার কণ্ঠস্বর। স্বর্গের আবির মাখা ঠোঁট। ওর চোখের ভাঁজে ভাঁজে
খেলা করে পৃথিবীর সব সাজানো সুন্দর। ওর দৃষ্টির অলিতে গলিতে ঘর বাঁধে সুন্দর
আগামি। সুউচ্চ নাকের ভাঁজে ভাঁজে গদ্য শিল্পের খেলা। তার কপোলের সুশ্রী প্রান্তরের কৃত্রিম আল্পনায় হার মানে পিথাগোরাসের সব
উপপাদ্য! সুউচ্চ গ্রীবা।
সুগঠিত দেহের মাঠ জুড়ে সুন্দরের উদ্যান- যেন এক জীবন্ত শিল্প!
আমি বলি- যদি টাকলু হয়ে
যাই?
-তাহলে কিন্তু...
কথাটি সে শেষ
করতে পারে না। আমার হৃদয়ের কোথায় যেন অশনি সংকেত আঁচর কাটতে থাকে। ভেতরে ভেতরে
কুকরাতে থাকি। চুল পড়া এক জটিল সমস্যা। যাদের পড়ে সেই বুঝে এ পড়ার কী কষ্ট! আমি তাকে যেমন হারাতে চাই না, তেমনি চুলগুলোকেও। অজ্ঞাত কোন সমাধানের আশায়
অনেকটা শঙ্কিত দৃষ্টি নিয়ে আমি তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকাই। আমার চাহনি জুড়ে পৃথিবীর সব নিরীহ প্রকৃতির ছাপ
অবলীলায় খেলা করে। অর্পিতা বুঝে ফেলল আমার চোখের ভাষা। সে বলল- “তুমি কালই যাও ডাক্তারের কাছে”।
- বেশ। তুমিও কি
আমার সাথে যাবে?
-কখন যাবে?
-বিকেল চারটায়।
-ঠিক আছে। আমাকে
ফোন দিও।
পরের দিন।
বিকেল বেলা। টিকিট কেটে ডাক্তারের চেম্বারের বাইরে গিয়ে বসি। সিরিয়াল মেনে একে একে অনেক রোগীই চেম্বার থেকে বের হয়ে আসছে। আমি নিরীহ
দৃষ্টিতে অর্পিতার দিকে তাকাই। সে খুব সহজেই বুঝে ফেলে আমার চোখের ভাষা। অভয় দেওয়ার জন্য আমার হাতে হাত রাখে। এরপর সিরিয়াল আসল আমার। আমি ভিতরে গিয়ে বসি।
ডাক্তার আমাকে জিজ্ঞেস করে আমার সমস্যার কথা। আমি ডাক্তারের দিকে তাকাই। ওমা! ডাক্তারের নিজেরই যে চুল নেই! উনি আমাকে কী প্রেসক্রিপশন করবে!
অধার্মিকের কাছ
থেকে ধর্মের প্রতি আসক্ত হওয়ার পরামর্শ শুনলে যেমন খটকা লাগে তেমনি টাকলু
ডাক্তারের কাছ থেকেও চুল পড়ার সমাধান নিতেও খটকা লাগে। আমি মুচকি হেসে বললাম- স্যার, ভুল করে আপনার চেম্বারে চলে এসেছি। Sorry, I am extermly sorry.
এরপর বের হয়ে আসি। প্রেসক্রিপশন হাতে না দেখে অর্পিতা অবাক হয়ে এগিয়ে আসে। আমি তার হাত ধরি, চোখে চোখ রাখি। তারপর রঙ্গ করে সিলেটী
কুট্টি ভাষায় বলি- ডাখতার নিজেও টাখলু, তাইন নিজর সমস্যারও সমাধান খরতা
পারছইন না, আমারটা খরতা খিলান?
কথাটি বলেই আমি হাসি। আমার হাসিতে অর্পিতাও যোগ দেয় কিন্তু সে হাসি বড়
পাংশুটে।
মুনশি আলিম
পূর্ব শিবগঞ্জ, সিলেট