বিকেল বেলা। আম্মুর কাছে থেকে
বিদায় নিয়েই বাসে ওঠি। উদ্দেশ্য সিলেটের জিন্দাবাজের যাওয়া। বাসে লোক পরিপূর্ণ
ছিল। কোথাও বসার খালি সিট নেই। বাধ্য হয়েই ব্যাগ কাঁধে বাসের হাতল ধরে দাঁড়িয়ে
রইলাম। বাস যখন ছেড়ে দেবে এমন সময় বাসের ডান দিকের দ্বিতীয় সিটে বসা এক লোক
ড্রাইভারকে উৎকণ্ঠিত স্বরে বলল- ডাইভার সাব, বাসাত ভুলে পাসপোর্ট রাকি আইছি, আমার
এখটুতা নামা লাগবো। লোকটি উঠতেই আমি সে আসনটি সাথে সাথেই দখল করে ফেললাম। এখন
বেশ আরাম ও নির্ভার মনে হচ্ছে নিজেকে।
গাড়ি চলতে থাকে।
একটু পর ব্যাগ থেকে কবি জফির
সেতুর ‘সিন্ধুদ্রাবিড়ের ঘোটকী’ কবিতার বইটি বের করে পড়তে থাকি। কিছুক্ষণ পড়ার পরই
কেমন যেন তন্দ্রাভাব আসে। ডান হাত দিয়ে মুখ মুছি। মুছা শেষ হওয়া মাত্রই সামনের
মহিলা আসনে বসা এক সুন্দরী তরুণী অদ্ভুত শব্দ করে হেসে ওঠল। বিষয়টি আমার দৃষ্টি
এড়াল না। আমি তার দিকে তাকিয়ে ভ্রু একটু উপরে তুলে চোখের ভাষায় জিজ্ঞেস করলাম
হাসার কারণ কী।
মহিলা আসনে বসা অন্য সকল
যাত্রীরা ছিল বয়োবৃদ্ধ। তরুণীর কর্মকাণ্ডে খুব একটা দৃকপাত করল বলে মনে হল না। তরুণীর
গায়ে বহুল আলোচিত পাখি ড্রেস। ছিপছিপে গড়নের। দেখতে বেশ সুন্দর। আমি ইশারা করে
প্রশ্ন করার পর সে তার নিজের ডান হাত তার ডানদিকের গাল দেখিয়ে আঙুলটি পরে আমার
দিকে তাক করল। আমি বুঝলাম আমার গালে কোন
সমস্যা।
আমি গালে হাত দেই, হাত চোখের
সামনে নামাই। দেখি আমার হাত লাল হয়ে গেছে। মনে হল লিপিস্টিক জাতীয় কিছু। মনে পড়ল
ছোট বোনটার কথা। গতরাতে
সে এই বইটি পড়তে নিয়েছিল এবং নিজ দায়িত্বেই ব্যাগে রেখে দিয়েছে। হয়ত সেখান থেকেই... । আমি
বিষয়টি বুঝতে পেরে তাকে বোবা ভাষায় ধন্যবাদ দিলাম। সে বেশ প্রসন্ন হাসি হাসল।
এরপর চোখের ভাষাতে চলল অনেক কথা। শেষটায় আমি বাংলালিংকের মডেলদের মত হাতের ইশারায়
মোবাইল বুঝিয়ে নাম্বার চাইলাম।
মেয়েটি তখন হাত গোল করে গোল
দেখাল। বুঝলাম প্রথম সংখ্যা শূন্য। পরে এক আঙুল তুলল। বুঝলাম শূন্যের পর এক। এভাবে
সপ্তম অষ্টম নবম দশম ডিজিট পর্যন্ত সে ইঙ্গিত করতেই গাড়ি স্টেশনে থামল। আমার ঠিক
পিছনের সিটে বসা ছেলেটি দাঁড়িয়ে তখন আমার দিকে মুচকি হেসে বলল- ভাইজান ওনি এনগেজড!
তারপর দুজনেই হাত ধরে গাড়ি থেকে নামার আগে আমার দিকে তাকিয়ে ভিলেনের হাসি দিয়ে বলল- মফিজ! অনেক ক্ষণ
পর্যন্ত তাদের সম্মিলিত অট্টহাসি কানে বিষের মত পীড়া দিতে লাগল। কপালের ঘাম মুছতে
মুছতে আমিও বলি-যাহ্! ব্যাপার না। গাড়ি চলছে তো চলছেই।
মুনশি আলিম
টিলাগড়, সিলেট
টিলাগড়, সিলেট