সাময়িকী.কম
লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের প্রতিবেদন
জীবিকার সন্ধানে বিদেশে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অনেক গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে যাচ্ছে। মানবপাচার নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসে প্রকাশিত এক দীর্ঘ প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় পাওয়া বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের সঙ্গে কথা বলে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস গত বুধবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা কেন, কীভাবে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে- তার বিবরণ এবং সমুদ্রযাত্রাপথে তাদের ওপর পাচারকারীদের নির্মম নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অনেক গ্রাম রয়েছে যেগুলো পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। পুরুষরা সবাই বিদেশে চলে যাচ্ছে। ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আটর্সের সহকারী প্রভাষক জালাল উদ্দিন শিকদার এ তথ্য দেন। তিনি অভিবাসী নিয়ে গবেষণা করছেন। জালাল উদ্দিন বলেন, পাচারকারীরা একবার বিদেশযাত্রীদের নৌকায় তুলতে পারলে খরচ ২০ থেকে ৩০ গুণ পর্যন্ত বাড়ায়। বাড়তি টাকা দিতে না পারলে তাদের জেলে দেওয়া এবং মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গার্মেন্টের পর বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আসে প্রবাসীদের কাছ থেকে। কিন্তু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন প্রশাসনের দুর্নীতিগ্রস্ত লোকজন এ পাচারব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মানবপাচার বিষয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সম্প্রতি সবচেয়ে করুণ অবস্থার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। পাচারের শিকার হাজার হাজার মানুষ আন্দামান সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে। তাদের কাছে নেই কোনো খাদ্য ও পানীয়। কিন্তু তাদের কূলে ভিড়তে দিচ্ছে না তীরের দেশগুলো। কারণ তারা এসব দরিদ্র ও অশিক্ষিত মানুষের কোনো দায়িত্ব নিতে চায় না।
মিয়ানমারে নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে অনেকে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের ভাগ্যে জুটেছে নৌকায় নিষ্ঠুর নির্যাতন। এরপর পাচারকারীরা তাদের রেখে পালিয়ে গেছে। তারা ২০ দিন পর্যন্ত সাগরে অসহায় অবস্থায় ভেসে বেড়িয়েছে। এ সময় কখনও তাদের নৌকা ইন্দোনেশিয়া আবার কখনও মালয়েশিয়ার তীরে ভেড়ার পর আবার সাগরের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে তাদেরকে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে ২৫ হাজার লোক অবৈধভাবে সমুদ্রপথে পাড়ি জমিয়েছে অন্য দেশে। এদের মধ্যে অনেকে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা মুসলিম। চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে তারা নিজ দেশ থেকে পালিয়েছে। দারিদ্র্য ও রাজনৈতিক অস্থিতার কারণে বাংলাদেশ থেকেও লোকজন এভাবে দেশ ছাড়ছে।
দেশ থেকে এভাবে পালিয়ে আসা অন্তত আট হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান এখনও সাগরে ভাসছে। রোহিঙ্গাবোঝাই পাঁচটি জাহাজ দেখা গেছে সাগরে। এ ধরনের জাহাজ আরো থাকতে পারে। গত মঙ্গলবার ও বুধবার ৩৭০ জনেরও বেশি ভাসমান লোককে তুলে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়।ইন্দোনেশিয়ার একটি ক্যাম্পে ২৪০ জন বাংলাদেশি রয়েছে যারা কয়েক মাস পর্যন্ত সাগরে একটি নৌকায় ভাসমান অবস্থায় ছিল। নৌকায় তাদের খাবার দেওয়া হয়নি বরং চলেছে নির্যাতন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের যারা বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে তাদেরকে হয়তো শিগগিরই দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের আরো অনেক দিন ক্যাম্পে থাকতে হতে পারে। জাতিসংঘ শরণার্থী এজেন্সির মুখপাত্র মিত্র সালিমা সুরিয়োনো বলেন, তাদের পরিচয় চিহ্নিত করার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এটা অনেক সময় নেবে কারণ প্রত্যেকটি ঘটনা আলাদা।
১৮ বছরের রোহিঙ্গা যুবক মোহিদ শরিক বাংলাদেশের একটি ক্যাম্পে বাস করতেন। বর্তমানে ইন্দোনিশয়ার একটি ক্যাম্পে রয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের ক্যাম্প থেকে পালানোর বিষয়ে মোহিদ শরিক বলেন, "আমরা খুব গরিব। আমাদের টাকা দরকার। তাই আমি পালিয়ে এসেছি। আমি আর সেখানে ফিরে যেতে চাই না।" কালের কন্ঠ
লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের প্রতিবেদন
সাবেদ সাথী, নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি
জীবিকার সন্ধানে বিদেশে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অনেক গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে যাচ্ছে। মানবপাচার নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসে প্রকাশিত এক দীর্ঘ প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় পাওয়া বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের সঙ্গে কথা বলে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস গত বুধবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা কেন, কীভাবে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে- তার বিবরণ এবং সমুদ্রযাত্রাপথে তাদের ওপর পাচারকারীদের নির্মম নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অনেক গ্রাম রয়েছে যেগুলো পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। পুরুষরা সবাই বিদেশে চলে যাচ্ছে। ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আটর্সের সহকারী প্রভাষক জালাল উদ্দিন শিকদার এ তথ্য দেন। তিনি অভিবাসী নিয়ে গবেষণা করছেন। জালাল উদ্দিন বলেন, পাচারকারীরা একবার বিদেশযাত্রীদের নৌকায় তুলতে পারলে খরচ ২০ থেকে ৩০ গুণ পর্যন্ত বাড়ায়। বাড়তি টাকা দিতে না পারলে তাদের জেলে দেওয়া এবং মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গার্মেন্টের পর বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আসে প্রবাসীদের কাছ থেকে। কিন্তু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন প্রশাসনের দুর্নীতিগ্রস্ত লোকজন এ পাচারব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মানবপাচার বিষয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সম্প্রতি সবচেয়ে করুণ অবস্থার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। পাচারের শিকার হাজার হাজার মানুষ আন্দামান সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে। তাদের কাছে নেই কোনো খাদ্য ও পানীয়। কিন্তু তাদের কূলে ভিড়তে দিচ্ছে না তীরের দেশগুলো। কারণ তারা এসব দরিদ্র ও অশিক্ষিত মানুষের কোনো দায়িত্ব নিতে চায় না।
মিয়ানমারে নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে অনেকে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের ভাগ্যে জুটেছে নৌকায় নিষ্ঠুর নির্যাতন। এরপর পাচারকারীরা তাদের রেখে পালিয়ে গেছে। তারা ২০ দিন পর্যন্ত সাগরে অসহায় অবস্থায় ভেসে বেড়িয়েছে। এ সময় কখনও তাদের নৌকা ইন্দোনেশিয়া আবার কখনও মালয়েশিয়ার তীরে ভেড়ার পর আবার সাগরের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে তাদেরকে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে ২৫ হাজার লোক অবৈধভাবে সমুদ্রপথে পাড়ি জমিয়েছে অন্য দেশে। এদের মধ্যে অনেকে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা মুসলিম। চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে তারা নিজ দেশ থেকে পালিয়েছে। দারিদ্র্য ও রাজনৈতিক অস্থিতার কারণে বাংলাদেশ থেকেও লোকজন এভাবে দেশ ছাড়ছে।
দেশ থেকে এভাবে পালিয়ে আসা অন্তত আট হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান এখনও সাগরে ভাসছে। রোহিঙ্গাবোঝাই পাঁচটি জাহাজ দেখা গেছে সাগরে। এ ধরনের জাহাজ আরো থাকতে পারে। গত মঙ্গলবার ও বুধবার ৩৭০ জনেরও বেশি ভাসমান লোককে তুলে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়।ইন্দোনেশিয়ার একটি ক্যাম্পে ২৪০ জন বাংলাদেশি রয়েছে যারা কয়েক মাস পর্যন্ত সাগরে একটি নৌকায় ভাসমান অবস্থায় ছিল। নৌকায় তাদের খাবার দেওয়া হয়নি বরং চলেছে নির্যাতন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের যারা বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে তাদেরকে হয়তো শিগগিরই দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের আরো অনেক দিন ক্যাম্পে থাকতে হতে পারে। জাতিসংঘ শরণার্থী এজেন্সির মুখপাত্র মিত্র সালিমা সুরিয়োনো বলেন, তাদের পরিচয় চিহ্নিত করার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এটা অনেক সময় নেবে কারণ প্রত্যেকটি ঘটনা আলাদা।
১৮ বছরের রোহিঙ্গা যুবক মোহিদ শরিক বাংলাদেশের একটি ক্যাম্পে বাস করতেন। বর্তমানে ইন্দোনিশয়ার একটি ক্যাম্পে রয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের ক্যাম্প থেকে পালানোর বিষয়ে মোহিদ শরিক বলেন, "আমরা খুব গরিব। আমাদের টাকা দরকার। তাই আমি পালিয়ে এসেছি। আমি আর সেখানে ফিরে যেতে চাই না।" কালের কন্ঠ