বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদন
সাময়িকী.কম
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- বগুড়া : যমুনা নদীর পানি গতকাল আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। সারিয়াকান্দি পয়েন্টে বর্তমানে পানি বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, সারিয়াকান্দি উপজেলার গোদাখালীতে নির্মাণাধীন বাঁধের ধসে যাওয়া প্রায় ৭০ মিটার অংশের মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। তবে আগাম বন্যা ও নদীভাঙনের আশঙ্কায় উপজেলার বহু পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। গাইবান্ধা : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঘাঘট নদীর পানি গতকাল সকালে বিপদসীমা স্পর্শ করেছে। করতোয়ার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও তা বিপদসীমার নিচে রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোল রুম। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, হরিপুর, সদর উপজেলার মোল্লারচর, ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি, ফজলুপুর, গজারিয়া, এরেন্ডাবাড়ি, উদাখালি, উড়িয়া ও সাঘাটা উপজেলার হলদিয়ার ইউনিয়নের তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও বিস্তীর্ণ চরের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে ফুলছড়ি উপজেলার সিংড়িয়া, সদর উপজেলার মিয়াপাড়া ও কুটিপাড়া এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আউয়াল মিয়া জানান, ফুলছড়ি উপজেলার সিংড়িয়া-রতনপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের এক কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। নীলফামারী : ভারিবর্ষণ আর উজানের ঢলে তিস্তার নদীর পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ১৬টি চরগ্রামের অন্তত সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে এবং নদী-তীরবর্তী এলাকা ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে কি না খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। ডিমলা উপজেলার পূর্ব-ছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান জানান, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিয়নের বাইশপুকুর, কিসামত ছাতনাই, পূর্বছাতনাই, ঝাড়শিঙ্গেরশ্বর চরগ্রাম প্লাবিত হয়। লালমনিরহাট : উজানের ঢলে ফুঁসে উঠেছে তিস্তা। বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই তিস্তা নদের পানি দুটি চ্যানেলে প্রবাহিত হওয়ায় চরাঞ্চলের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তিস্তার উজান ও ভাটি অঞ্চল এখন পানিতে ভাসছে। ডুবে গেছে উজান-ভাটির ৪২টি চর। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ওই সব চরের লক্ষাধিক মানুষ। তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৩ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল চর পারুলিয়া গ্রামের অধিবাসীরা জানান, তিস্তার পানি শনিবার রাতে বৃদ্ধি পাওয়া এবং দুটি চ্যানেলে নদী প্রবাহিত হওয়ায় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, উজানের ঢলের পরিস্থিতি সামাল দিতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান জানান, উজান থেকে পানি ধেয়ে আসার কারণে চরাঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ : এক সপ্তাহ ধরে পাহাড়ি ঢলে যমুনার পানি বৃদ্ধি পেলেও গতকাল সকাল থেকে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে পানি কমতে শুরু করেছে। এদিকে, পানি কমলেও কাজীপুর মেঘাই ঘাট, সদর উপজেলা ইটালী, বালিঘুগরী, পাঁচঠাকুরী এবং দক্ষিণ চৌহালী উপজেলার চৌহালী উপজেলার স্থলচর থেকে পাতরাইল পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, শনিবার বিকালে সদর উপজেলার বালিঘুগরীতে বাঁধের ২৫০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে শতাধিক বসত-ভিটা বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে ৫ গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কয়েক হাজার একর আবাদি জমি। এক সপ্তাহে চৌহালীতে চার শতাধিক ঘরবাড়ি, চয়টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসহ শত শত একর আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। স্থলচর থেকে পাথরাইল পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন অব্যাহত থাকায় প্রায় ১৭টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, আড়াই হাজার বাড়িঘর, কাঁচাপাকা বিভিন্ন স্থাপনাসহ কয়েক হাজার একর জমি হুমকির মুখে রয়েছে। কাজিপুর মেঘাইঘাটে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ময়মনসিংহ : ভারিবর্ষণে ময়মনসিংহ অঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল পানি বেড়েছে ৪ সেন্টিমিটার। এতে ব্রহ্মপুত্র প্রমত্তা রূপ নিয়েছে। শনিবারের ভারিবর্ষণের ফলে শহর রক্ষা বাঁধের ২৫টি স্থানে কমপক্ষে ৪০০ মিটার বাঁধ ধসে পড়েছে। ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন অফিসার সোহেল রানা জানান, গতকাল পানির প্রবাহ বেড়েছে ৪ সেন্টিমিটার। টাঙ্গাইল : যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি ও ভারিবর্ষণের ফলে চার দিনে পাঁচ শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ভুয়াপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়নে নতুন করে যমুনা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। ফলে ভুয়াপুর-তারাকান্দি সড়ক হুমকির মুখে রয়েছে। উপজেলার অর্জুনা, গাবসারা, নিকরাইল ও গোবিন্দাসী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, যমুনা নদীর ভাঙনে ইতিমধ্যে ঘর-বাড়ি ছাড়াও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন কবলিত গ্রামগুলো হলো- গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুরবাড়ি, কষ্টাপাড়া, চর চিতুলিয়া ভালকুটিয়া ও চিতুলিয়াপাড়া, অর্জুনা ইউনিয়নের কুঠিবয়ড়া, অর্জুনা, চুকাই নগর, শুশুয়া ও গোবিন্দপুর, গাবসারা ইউনিয়নের রুলীপাড়া, রেহাই গাবসারা, রামপুর, চণ্ডীপুর ও মেঘারপটল, নিকরাইল ইউনিয়নের কোনাবাড়ী ও বাইনতাইন। হুমকির মুখে রয়েছে চারটি ইউনিয়নের স্কুল, কলেজ, নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি, মসজিদ, মন্দির, পোল্ট্রি খামারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কষ্টাপাড়া গ্রামের শিক্ষক মজিদ সরকার ও আবদুস ছবুর জানান, যমুনা নদীতে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। অনেক পরিবার তাদের ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। অর্জুনা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মকবুল খাঁ, সাদিক, তবু খাঁ ও বাছেদ খাঁ জানান, গ্রামে ১০০ বছর পর যমুনা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। ভুয়াপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল হালিম অ্যাডভোকেট বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সাময়িকী.কম
টানা বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বগুড়া, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের নদী-তীরবর্তী শত শত গ্রাম প্লাবিত এবং লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার সিংড়িয়া, সদর উপজেলার মিয়াপাড়া ও কুটিপাড়া এলাকার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ। সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে চার শতাধিক ঘরবাড়ি, ছয়টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসহ শত শত একর আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।