দেশের রাজনীতিতে আগাম নির্বাচনের সম্ভাব্যতা নিয়ে অনেক পর্যারোচনা চলছে। চলছে সরকার ও অন্যান্য দলের মাঝে কথা ছোঁড়াছুড়ি। কিন্তু যে যাই বলুক- আগামী দেড় থেকে দু’বছরের মাথায় মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়ার কথা সরকার ভাবছে বলে দাবি করা হয়েছে দৈনিক যুগান্তরের এক প্রতিবেদনে। সরকারের এক নীতিনির্ধারক সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর হাতে এ বিষয়ে নতুন একটি প্রস্তাবনা তুলে দিয়েছেন।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার ব্যাপারে সাংবিধানিক ও আইনগত বাধা না থাকলেও একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসে স্বস্তিতে নেই সরকার। আগামী এক-দেড় বছর পর থেকে বিএনপি কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে। সম্ভাব্য ওই আন্দোলন, একতরফা নির্বাচনের দুর্নাম ঘোচানো এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের চাপের কারণে আগাম নির্বাচনের কথা সরকারের শীর্ষ মহলে আলোচনা হচ্ছে। পরিস্থিতি প্রতিকূলে না হলে প্রধানমন্ত্রীরও এ ব্যাপারে সম্মতি আছে বলে ওই সূত্র দাবি করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেয়া প্রস্তাবনায় বিগত ৫ বছরের বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়ম, কেলেংকারি ও বদনাম ঘুচিয়ে সুশাসন নিশ্চিতের মাধ্যমে সরকারের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরির পর মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎসহ যেসব সমস্যার কারণে জনগণের বড় একটি অংশ সরকারের ওপর বিক্ষুব্ধ সেগুলো খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে জনগণের যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে তা কমিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ফলাফল ভালো করার জন্য প্রস্তাবনায় এসব উদ্যোগ নেয়ার সুপারিশ রয়েছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটভুক্ত দলগুলোকে নির্বাচনের জন্য তৈরি থাকার কথা বলা হয়েছে।
সূত্র মতে, এ ধরনের ভাবনা থেকেই সাম্প্রতিককালের মন্ত্রিসভার বৈঠকগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রী ও সচিবদের বারবার সতর্ক করে দিচ্ছেন। তিনি হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলছেন, তাদের কারোরই চাকরি স্থায়ী নয়। কোনো কাজ যেন ফেলে রাখা না হয়। সবার কাজ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কাজ ভালো না করলে সরকারের বদনাম হলে তিনি কাউকে ছাড় দেবেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রিসভার এক সদস্য জানান, ‘কেউ যেন হারামের পয়সা না খান’ এ ধরনের কথাও প্রধানমন্ত্রী এখন মন্ত্রীদের বলা শুরু করেছেন। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ যাতে পড়ে না থাকে তা তদারকির জন্য একাধিক উপদেষ্টাকেও দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, নানা বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে একটি নির্বাচন হয়ে গেছে এটা সত্য। কিন্তু আমরা ৫ বছরই থাকব এ ধরনের অহংবোধ থাকা উচিত নয়।
প্রধানমন্ত্রীর প্রভাবশালী এক উপদেষ্টা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আসলে দেশের জনগণ এ মুহূর্তে নির্বাচন চাইছে না। নির্বাচনের পর সব পেশাজীবী নিজ নিজ পেশায় ফিরে গেছেন। ব্যবসায়ীরা ব্যবসায় মনোনিবেশ করেছেন। কিন্তু দেশের সচেতন নাগরিক গোষ্ঠীসহ সবাই বলছে, আওয়ামী লীগের মতো গণতান্ত্রিক একটি শক্তি কেন প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকবে!
এক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রকাশ্য সখ্য বা বৈঠক না হলেও ‘মিলিট্যান্ট ফোর্স’ হিসেবে পরিচিত জামায়াতের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখার একটি উদ্যোগ সরকারের রয়েছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপিকে একঘরে করার উদ্দেশ্যেই এসব করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সূত্র: দৈনিক যুগান্তর