প্রথমেই একটু ভূমিকা দিয়ে নেই। আমি যখন এই বিষয়টি নিয়ে লেখা শুরু করি, এবং বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সাজিয়ে দিয়ে বলেছিলাম, মুসা ইব্রাহীমকে আদালতে কোন কোন বিষয়গুলোর মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে, তারপর অনেকেই আমাকে বলেছেন, এনালাইসিসটি নির্মোহ ছিল। আমি আজও চেষ্টা করবো, নির্মোহ থাকার জন্য।
তবে নির্মোহ থাকাটা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। আমি এটার কোনও বেনিফিশিয়ারি নই (যারা বেনিফিশিয়ারি, তারাই ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছেন, যুক্তি ফেলে উল্টা-পাল্টা কথা বলছেন), আমি তার শত্রুও নই। বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে দেখলেই যত ঝামেলা। এবং আমাদের অনেক নামীদামী ব্যক্তিরাও বিষয়টিকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তথ্য ভিত্তিক হননি। ফলে, তারাও অনেকটা গ্রহনযোগ্যতা হারিয়েছেন বলেই আমি মনে করি।
আপনারা খেয়াল করবেন, আমি একটি বারের জন্যেও কোথাও বলিনি যে, মুসা ইব্রাহীম হিমালয়ের চূড়ায় ওঠেননি। তিনি উঠেছেন বলে দাবি করেছেন। তাই প্রমাণ তাকেই দিতে হবে। কিন্তু অজস্র জায়গায় তথ্যের গরমিল রয়েছে, কিংবা বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে, যা তার অর্জনকে খাটো করে ফেলার জন্য যথেষ্ঠ। সেই বিষয়ে আজ আর বিস্তারিত লিখছি না। এটা একটি জাতীয় ইস্যু। তবে অবশ্যই সর্বোচ্চ প্রায়োরিটির নয়। এর চেয়ে অনেক বেশি প্রায়োরিটির বিষয় বাংলাদেশে রয়েছে। যেহেতু বিষয়টির ভেতর একটু ঢুকে গেছি, তাই এর যতটা তথ্য-উপাত্ত বের করা যায়, সেটুকুই করছি। সময় নষ্ট করছি ভেবে কেউ বিরক্ত হয়ে থাকলে নিজ গুণে ক্ষমা করে দেবেন। তবে ক্লাস ফাইভের পাঠ্য বইতে যে ভুল তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে, সেটা ঠিক হোক, সেটা আমি চাই।
এবারে আসল কথায় আসি।
মুসা ইব্রাহীম এভারেস্টে উঠেছিলেন তার অন্যতম প্রমাণ হিসেবে দেখানো হয়েছে হিমালায়ন ডাটাবেজ - যেখানে আপাতভাবে মনে হতে পারে, যারা এভারেস্টে উঠেছে তাদের সবার নাম এবং উপরে উঠার সময়টি লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এবং সেখানে মুসা ইব্রাহীমের নাম রয়েছে। যদিও সময়টা নিয়ে একটু ঝামেলা আছে। ওই ডাটাবেজে বলা হয়েছে ৪:৫০ মিনিট, আর সার্টিফিকেট নেয়ার সময় লেখা হয়েছে ৬:৫০মি। লিংক:http://www.himalayandatabase.com/2010%20Season%20Lists/2010%20Spring%20A...
বিশ্বের সবচেয়ে উচূ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টসহ নেপালে অবস্থিত বিভিন্ন পর্বতে আরোহনকারীদের তালিকা লিপিবদ্ধের কাজ করে থাকে নেপালের 'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ'। যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক এলিজাবেথ হারলি ১৯৬০ সাল থেকে নিরলসভাবে এই কাজ করে যাচ্ছেন। এলিজাবেথ যুক্তরাষ্ট্রের 'ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান' থেকে পড়াশোনা করে ফরচুন, টাইম এবং রয়টার্সে কাজ করেছেন। ১৯৬০ সালে তিনি প্রথম নেপালে আসেন এবং তারপর হতে নেপালে থেকে তিনি এভারেস্টসহ নেপালের বিভিন্ন পর্বত নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। ১৯৬৩ সালে আমেরিকার প্রথম এভারেস্টজয়ীর সংবাদটিও আমেরিকার জনগণের কাছে পৌছে দিয়েছিলেন এলিজাবেথ।
এলিজাবেথ তার কাজের ধারাবাহিকতায় প্রায় ৪ যুগ ধরে এই কাজ করে আসছেন। যদিও এলিজাবেথ কখনও পর্বতে ওঠেননি, তবুও এলিজাবেথের এভারেষ্ট বিষয়ক জ্ঞান সুপার কম্পিউটারকেও হার মানাবে। এলিজাবেথের এই ডাটাবেজ তৈরি এবং প্রকাশনার কাজে সহায়তা করে আসছে 'দ্য আমেরিকান আলপেলাইন ক্লাব'।
তার ডাটাবেজে শুধু যে সফল পর্বতারোহীর তথ্য থাকে তা নয়, যারা ব্যর্থ হয় এবং পর্বতে উঠতে গিয়ে মারা যায় তাদের তথ্যও থাকে। মাউন্ট এভারেস্ট, চুইও, মাকালু, কাঞ্চনজঙ্গাসহ নানা পর্বতের পর্বতারোহীদের তথ্য আছে। ১৯০৫ সাল থেকে ২০১৩ পর্যন্ত নেপালের ছোট-বড় ৩৪০টি পর্বতের তথ্য আছে ওই ডাটাবেজে।
এলিজাবেথের এই কাজের পদ্ধতিও খুবই চমকপ্রদ। কেউ নেপালে পর্বতারোহনের জন্য প্রবেশ করা মাত্রই এলিজাবেথের নেটওয়ার্কে সেটি খবর হয়ে যায়। এলিজাবেথের কাজের পদ্ধতি এবং তার এভারেস্ট সাংবাদিকতার জীবন নিয়ে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। 'আই উইল কল ইউ ইন কাঠমুন্ডু' নামের ওই বইতে এভারেস্ট বিষয়ক নানা তথ্যসহ এভারেস্ট কিভাবে নেপালিদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনীতিতে প্রভাব ফেলছে তার বর্ণনা রয়েছে।
সদ্য নেপালে আসা একজন পর্বতারোহীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে 'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ' কর্তৃপক্ষ
'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ'-এ নাম ওঠাকে অনেক পর্বতারোহীর কাছে পর্বত জয়ের সার্টিফিকেটের পাশাপাশি আরেকটি সার্টিফিকেটের মতো, বেশ সন্মানের বিষয় এটি। 'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ'-এর তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি নিয়ে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম এলিজাবেথ হারলির সহকারী জীবন শ্রেষ্ঠা'র সাথে (একদম উপরের ছবি)। তিনি যে তথ্য দেন তা এরকম-
:: নেপালে আসার সাথে সাথে পর্বতারোহীদের আগমন, তার ফোন নম্বর এবং কোন হোটেলে অবস্থান করছেন তার তথ্য বিভিন্ন ট্যুর অপারেটর এবং মাউনটেন গাইডদের মাধ্যমে 'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ'-এর অফিসে পৌছে যায়।
:: 'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ'-এর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে সাক্ষাতকারের সময় ঠিক করা হয়।
:: নির্দিষ্ট ফরমের মাধ্যমে পর্বতারোহীর বিস্তারিত তথ্য পর্বত অভিযানে যাবার আগে একবার এবং ফিরে আসার পরে আরেকবার সংগ্রহ করে 'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ' কর্তৃপক্ষ।
:: শুধু পর্বতারোহীরাই নয়, তাদের সহযোগী গাইডদের (শেরপা) তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়। সম্পূর্ণ অভিযান পরিকল্পনা (কবে যাবে, কীভাবে যাবে, কে কে যাবে এবং কবে চূড়ায় উঠবেন ..সেসবের সম্ভাব্য/বিস্তারিত) ফরমে লিখে রাখা হয়।
:: পর্বতারোহীদের পর্বতে ওঠার আগের অভিজ্ঞতা সর্ম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়। কোন উচ্চতার পর্বতে সে উঠতে এসেছে এবং তার কাছাকাছি উচ্চতার পর্বতে ওঠার তার অভিজ্ঞতা আছে কিনা, সেসব তথ্য চাওয়া হয়।
:: পর্বতারোহন অভিযান শেষে হোটেলে আবার হাজির হয়ে থাকে 'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ' কর্তৃপক্ষ। কোনো কারণে পর্বতে সফলভাবে ওঠার পরে বা উঠতে পারলে বা আহত/নিহত হলেও তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়। এক্ষেত্রে পর্বতারোহী যে তথ্য দেন তাই সত্য বলে মেনে নেওয়া হয়। দেওয়া তথ্য কোনো ধরণের যাচাই-বাছাই এর সুযোগ/সামর্থ্য নেই 'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ' কর্তৃপক্ষের। যেহেতু পর্বতারোহন একটি ঝুঁকিপূর্ণ ক্রীড়া তাই পর্বতারোহীরা সত্য বলছেন বলেই ধরে নেওয়া হয়। তবে কোনো ধরণের অভিযোগ/মিথ্যা প্রমানিত হলে ডাটাবেজ থেকে তথ্য বাদ দেওয়া হয়।
:: এই কাজটি 'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ' কর্তৃপক্ষ বিনামূল্য করে থাকে। সংগৃহীত তথ্য 'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ' কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে থাকে। ওই তথ্য এভারেস্ট বিষয়ক শিক্ষার্থী, গবেষক এবং পর্বতারোহীরা নির্দিষ্ট অর্থমূল্যের বিনিময়ে সংগ্রহ এবং ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া কিছু নির্দিষ্ট সময়ের তথ্য 'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ' এ প্রকাশিত হয়ে থাকে। এলিজাবেথ হারলির 'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ' পর্বতারোহীদের তথ্য সংগ্রহ এবং সংরক্ষণে যে কাজ করে যাচ্ছে তা পর্বতারোহন সেক্টরে এক মাইলফলক।
কিন্তু এই ডাটাবেজটিই সব নয়। এর তথ্য শতকরা ১০০ ভাগ সঠিক নাও হতে পারে। কেউ এভারেস্টের অর্ধেক পথ গিয়ে নীচে নেমে এসে যদি বলে, তিনি উপরে উঠেছেন, এই ডাটাবেজ কর্তৃপক্ষ তা বিশ্বাস করে তাদের ডাটাবেজে ঢুকিয়ে রাখবেন। তাদের কাছে এর বাইরে সত্যতা যাচাই করার আর কোনো পদ্ধতি নেই। তাই এই ডাটাবেজে নাম আছে, এটাই যথেষ্ঠ প্রমাণ নয়। আরো শক্তিশালী তথ্য-উপাত্ত ছাড়া এই বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চত হওয়ার সুযোগ নেই, যদি না আপনি কারো চোখে চোখ রেখে বলা কথা বিশ্বাস করেন!
লেখক: জেড স্বপন, উত্স: প্রিয়.কম
২৭ এপ্রিল ২০১৪
ঢাকা, বাংলাদেশ
তবে নির্মোহ থাকাটা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। আমি এটার কোনও বেনিফিশিয়ারি নই (যারা বেনিফিশিয়ারি, তারাই ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছেন, যুক্তি ফেলে উল্টা-পাল্টা কথা বলছেন), আমি তার শত্রুও নই। বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে দেখলেই যত ঝামেলা। এবং আমাদের অনেক নামীদামী ব্যক্তিরাও বিষয়টিকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তথ্য ভিত্তিক হননি। ফলে, তারাও অনেকটা গ্রহনযোগ্যতা হারিয়েছেন বলেই আমি মনে করি।
আপনারা খেয়াল করবেন, আমি একটি বারের জন্যেও কোথাও বলিনি যে, মুসা ইব্রাহীম হিমালয়ের চূড়ায় ওঠেননি। তিনি উঠেছেন বলে দাবি করেছেন। তাই প্রমাণ তাকেই দিতে হবে। কিন্তু অজস্র জায়গায় তথ্যের গরমিল রয়েছে, কিংবা বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে, যা তার অর্জনকে খাটো করে ফেলার জন্য যথেষ্ঠ। সেই বিষয়ে আজ আর বিস্তারিত লিখছি না। এটা একটি জাতীয় ইস্যু। তবে অবশ্যই সর্বোচ্চ প্রায়োরিটির নয়। এর চেয়ে অনেক বেশি প্রায়োরিটির বিষয় বাংলাদেশে রয়েছে। যেহেতু বিষয়টির ভেতর একটু ঢুকে গেছি, তাই এর যতটা তথ্য-উপাত্ত বের করা যায়, সেটুকুই করছি। সময় নষ্ট করছি ভেবে কেউ বিরক্ত হয়ে থাকলে নিজ গুণে ক্ষমা করে দেবেন। তবে ক্লাস ফাইভের পাঠ্য বইতে যে ভুল তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে, সেটা ঠিক হোক, সেটা আমি চাই।
এবারে আসল কথায় আসি।
মুসা ইব্রাহীম এভারেস্টে উঠেছিলেন তার অন্যতম প্রমাণ হিসেবে দেখানো হয়েছে হিমালায়ন ডাটাবেজ - যেখানে আপাতভাবে মনে হতে পারে, যারা এভারেস্টে উঠেছে তাদের সবার নাম এবং উপরে উঠার সময়টি লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এবং সেখানে মুসা ইব্রাহীমের নাম রয়েছে। যদিও সময়টা নিয়ে একটু ঝামেলা আছে। ওই ডাটাবেজে বলা হয়েছে ৪:৫০ মিনিট, আর সার্টিফিকেট নেয়ার সময় লেখা হয়েছে ৬:৫০মি। লিংক:http://www.himalayandatabase.com/2010%20Season%20Lists/2010%20Spring%20A...
বিশ্বের সবচেয়ে উচূ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টসহ নেপালে অবস্থিত বিভিন্ন পর্বতে আরোহনকারীদের তালিকা লিপিবদ্ধের কাজ করে থাকে নেপালের 'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ'। যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক এলিজাবেথ হারলি ১৯৬০ সাল থেকে নিরলসভাবে এই কাজ করে যাচ্ছেন। এলিজাবেথ যুক্তরাষ্ট্রের 'ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান' থেকে পড়াশোনা করে ফরচুন, টাইম এবং রয়টার্সে কাজ করেছেন। ১৯৬০ সালে তিনি প্রথম নেপালে আসেন এবং তারপর হতে নেপালে থেকে তিনি এভারেস্টসহ নেপালের বিভিন্ন পর্বত নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। ১৯৬৩ সালে আমেরিকার প্রথম এভারেস্টজয়ীর সংবাদটিও আমেরিকার জনগণের কাছে পৌছে দিয়েছিলেন এলিজাবেথ।
এলিজাবেথ তার কাজের ধারাবাহিকতায় প্রায় ৪ যুগ ধরে এই কাজ করে আসছেন। যদিও এলিজাবেথ কখনও পর্বতে ওঠেননি, তবুও এলিজাবেথের এভারেষ্ট বিষয়ক জ্ঞান সুপার কম্পিউটারকেও হার মানাবে। এলিজাবেথের এই ডাটাবেজ তৈরি এবং প্রকাশনার কাজে সহায়তা করে আসছে 'দ্য আমেরিকান আলপেলাইন ক্লাব'।
তার ডাটাবেজে শুধু যে সফল পর্বতারোহীর তথ্য থাকে তা নয়, যারা ব্যর্থ হয় এবং পর্বতে উঠতে গিয়ে মারা যায় তাদের তথ্যও থাকে। মাউন্ট এভারেস্ট, চুইও, মাকালু, কাঞ্চনজঙ্গাসহ নানা পর্বতের পর্বতারোহীদের তথ্য আছে। ১৯০৫ সাল থেকে ২০১৩ পর্যন্ত নেপালের ছোট-বড় ৩৪০টি পর্বতের তথ্য আছে ওই ডাটাবেজে।
এলিজাবেথের এই কাজের পদ্ধতিও খুবই চমকপ্রদ। কেউ নেপালে পর্বতারোহনের জন্য প্রবেশ করা মাত্রই এলিজাবেথের নেটওয়ার্কে সেটি খবর হয়ে যায়। এলিজাবেথের কাজের পদ্ধতি এবং তার এভারেস্ট সাংবাদিকতার জীবন নিয়ে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। 'আই উইল কল ইউ ইন কাঠমুন্ডু' নামের ওই বইতে এভারেস্ট বিষয়ক নানা তথ্যসহ এভারেস্ট কিভাবে নেপালিদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনীতিতে প্রভাব ফেলছে তার বর্ণনা রয়েছে।
সদ্য নেপালে আসা একজন পর্বতারোহীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে 'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ' কর্তৃপক্ষ
'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ'-এ নাম ওঠাকে অনেক পর্বতারোহীর কাছে পর্বত জয়ের সার্টিফিকেটের পাশাপাশি আরেকটি সার্টিফিকেটের মতো, বেশ সন্মানের বিষয় এটি। 'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ'-এর তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি নিয়ে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম এলিজাবেথ হারলির সহকারী জীবন শ্রেষ্ঠা'র সাথে (একদম উপরের ছবি)। তিনি যে তথ্য দেন তা এরকম-
:: নেপালে আসার সাথে সাথে পর্বতারোহীদের আগমন, তার ফোন নম্বর এবং কোন হোটেলে অবস্থান করছেন তার তথ্য বিভিন্ন ট্যুর অপারেটর এবং মাউনটেন গাইডদের মাধ্যমে 'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ'-এর অফিসে পৌছে যায়।
:: 'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ'-এর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে সাক্ষাতকারের সময় ঠিক করা হয়।
:: নির্দিষ্ট ফরমের মাধ্যমে পর্বতারোহীর বিস্তারিত তথ্য পর্বত অভিযানে যাবার আগে একবার এবং ফিরে আসার পরে আরেকবার সংগ্রহ করে 'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ' কর্তৃপক্ষ।
:: শুধু পর্বতারোহীরাই নয়, তাদের সহযোগী গাইডদের (শেরপা) তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়। সম্পূর্ণ অভিযান পরিকল্পনা (কবে যাবে, কীভাবে যাবে, কে কে যাবে এবং কবে চূড়ায় উঠবেন ..সেসবের সম্ভাব্য/বিস্তারিত) ফরমে লিখে রাখা হয়।
:: পর্বতারোহীদের পর্বতে ওঠার আগের অভিজ্ঞতা সর্ম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়। কোন উচ্চতার পর্বতে সে উঠতে এসেছে এবং তার কাছাকাছি উচ্চতার পর্বতে ওঠার তার অভিজ্ঞতা আছে কিনা, সেসব তথ্য চাওয়া হয়।
:: পর্বতারোহন অভিযান শেষে হোটেলে আবার হাজির হয়ে থাকে 'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ' কর্তৃপক্ষ। কোনো কারণে পর্বতে সফলভাবে ওঠার পরে বা উঠতে পারলে বা আহত/নিহত হলেও তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়। এক্ষেত্রে পর্বতারোহী যে তথ্য দেন তাই সত্য বলে মেনে নেওয়া হয়। দেওয়া তথ্য কোনো ধরণের যাচাই-বাছাই এর সুযোগ/সামর্থ্য নেই 'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ' কর্তৃপক্ষের। যেহেতু পর্বতারোহন একটি ঝুঁকিপূর্ণ ক্রীড়া তাই পর্বতারোহীরা সত্য বলছেন বলেই ধরে নেওয়া হয়। তবে কোনো ধরণের অভিযোগ/মিথ্যা প্রমানিত হলে ডাটাবেজ থেকে তথ্য বাদ দেওয়া হয়।
:: এই কাজটি 'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ' কর্তৃপক্ষ বিনামূল্য করে থাকে। সংগৃহীত তথ্য 'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ' কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে থাকে। ওই তথ্য এভারেস্ট বিষয়ক শিক্ষার্থী, গবেষক এবং পর্বতারোহীরা নির্দিষ্ট অর্থমূল্যের বিনিময়ে সংগ্রহ এবং ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া কিছু নির্দিষ্ট সময়ের তথ্য 'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ' এ প্রকাশিত হয়ে থাকে। এলিজাবেথ হারলির 'দ্য হিমালায়ান ডাটাবেজ' পর্বতারোহীদের তথ্য সংগ্রহ এবং সংরক্ষণে যে কাজ করে যাচ্ছে তা পর্বতারোহন সেক্টরে এক মাইলফলক।
কিন্তু এই ডাটাবেজটিই সব নয়। এর তথ্য শতকরা ১০০ ভাগ সঠিক নাও হতে পারে। কেউ এভারেস্টের অর্ধেক পথ গিয়ে নীচে নেমে এসে যদি বলে, তিনি উপরে উঠেছেন, এই ডাটাবেজ কর্তৃপক্ষ তা বিশ্বাস করে তাদের ডাটাবেজে ঢুকিয়ে রাখবেন। তাদের কাছে এর বাইরে সত্যতা যাচাই করার আর কোনো পদ্ধতি নেই। তাই এই ডাটাবেজে নাম আছে, এটাই যথেষ্ঠ প্রমাণ নয়। আরো শক্তিশালী তথ্য-উপাত্ত ছাড়া এই বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চত হওয়ার সুযোগ নেই, যদি না আপনি কারো চোখে চোখ রেখে বলা কথা বিশ্বাস করেন!
লেখক: জেড স্বপন, উত্স: প্রিয়.কম
২৭ এপ্রিল ২০১৪
ঢাকা, বাংলাদেশ