মহাজোট সরকারের নৌপরিবহণমন্ত্রী শাজাহান খান জাহাজ কেনায় অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জন্য উচ্চমূল্যে নতুন ৬টি জাহাজ কেনার প্রস্তাবে সম্মত করতে কর্মকর্তাদের চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে দৈনিক আমাদের সময়ের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১৫৬ মিলিয়ন ডলারের জাহাজ কিনতে প্রস্তাবনা তৈরি করা হচ্ছে ১৮৮ মিলিয়ন ডলারের। এ নিয়ে নৌসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গড়া কমিটির সঙ্গে মন্ত্রীর টানাপড়েন চলছে। ফলে কমিটির অনেক প্রতিনিধি এ বিষয়ের সভায় অংশ নিচ্ছেন না।
এক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ৬টি নতুন জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। শিপিং করপোরেশনের কর্মকর্তাসহ ওই কমিটির সদস্যরা চীন সফর করে একটি জাহাজ প্রস্তুতকারী ডকইয়ার্ড পরিদর্শন করে আসেন। সে সময় ওই সংস্থাটি ৬টি জাহাজ নির্মাণে ১৫৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে বলে তাদের জানায়। কমিটি সে অনুযায়ী একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। কিন্তু মন্ত্রী নিয়ম অনুযায়ী উন্মুক্ত দরপত্র না দিয়ে কমিটির সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে চীনা একটি কমিশনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সিএমসির মাধ্যমে জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে মূল্য ধরে দেন ১৭৫ মিলিয়ন ডলার। পরে তিনি ওই মূল্য আবার বাড়িয়ে ১৮৬ মিলিয়ন ডলার করার জন্য কর্মকর্তাদের চাপ দেন। গতকাল ওই জাহাজগুলোর মূল্য আরও ২ মিলিয়ন বাড়িয়ে ১৮৮ মিলিয়ন ডলার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। নৌমন্ত্রীর ১৭৫ মিলিয়ন ডলার প্রস্তাবনায় এর আগের কমিটির কয়েক কর্মকর্তা সম্মত না হওয়ায় তাদের (মোস্তফা কামালউদ্দিন ও গোলাম মওলা) ওএসডি করা হয়। এ কারণে বর্তমান কমিটির কর্মকর্তারাও আতঙ্কে রয়েছেন।
রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী জাহাজ কেনার জন্য মন্ত্রণালয়ভিত্তিক কমিটি গঠন ও উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করতে হয়। ৫০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে কেনার কোনও প্রস্তাব ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠাতে হয়। আইন মন্ত্রণালয়েরও সম্মতি নিতে হয়। এক্ষেত্রে কোনওটিই করা হয়নি। বরং ৩০ এপ্রিলের মধ্যে চীনা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ৩০ এপ্রিলের পরই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। তাই এ সভার আগেই কমিশনভিত্তিক এই চীনা সরবরাহকারী কোম্পানির সঙ্গে উচ্চমূল্যে চুক্তি করার জোর চেষ্টা চলছে।
অতিরিক্ত মূল্যে জাহাজ কেনার প্রসঙ্গে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে লোনে এ জাহাজ কেনা হচ্ছে। এক বছর ধরে বার্গেনিং (দরকষাকষি) করছি। এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এর চেয়ে কমে কেনার চেষ্টা করছি। এখনও দাম কমানোর সুযোগ থাকলে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে তা-ই করা হবে। তবে যারা লোন দিচ্ছে, এ ক্ষেত্রে যদি তাদের কমিশনের কোনও ব্যাপার থাকে, তা তো আমার জানা নেই।
সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়