নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে ২৭ এপ্রিল দুপুরে নাসিকের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও তার ৪ সঙ্গীকে অপহরণ করা হয়। এর আগে ১৬ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হয়েছিলেন স্থানীয় একটি পোশাক কারখানার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক। তিনি পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী রিজওয়ানা হাসানের স্বামী। এ নিয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হলে তাকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা। রিজওয়ানার স্বামী এবি সিদ্দিক ভাগ্যবান ব্যক্তি নিঃসন্দেহে। তিনি জীবিত ফিরে এসেছেন। কিন্তু যারা অপহরণ শেষে লাশ বা গুম হয়েছেন, তাদের স্বজন-পরিজনের জন্য সান্ত্বনার ভাষা কী? এক রিজওয়ানার স্বামীকে ফিরিয়ে দিলেই চলবে না। অসংখ্য স্ত্রী, মা, সন্তান এখনও অপহৃত স্বজনের ফেরার অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছে। তাদের দিন কাটে চোখের জল ফেলে। তাদেরও সুসংবাদ দিতে হবে। ফিরিয়ে দিতে হবে তাদের স্বজনদের।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ২৬৮ জন অপহৃত হয়েছেন। এর মধ্যে ৪৩ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে, ফিরে এসেছেন ২৪ জন এবং নিখোঁজের সংখ্যা ১৮৭। অপহরণ ও গুম-খুন এখন বাংলাদেশের রাজনীতির অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। বছরের পর বছর অপেক্ষায় থেকেও মেলে না নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ অনেকের ক্ষেত্রেই এটি সত্য হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মী ছাড়াও ব্যবসায়ী, ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক, নারী, এমনকি শিশুরাও বর্তমানে অপহরণ বা গুমের শিকার হচ্ছে। প্রশ্ন হল- দেশ থেকে অপহরণ ও গুম-খুন কি বন্ধ হবে না?
এবি সিদ্দিক অপহরণের ঘটনায় একটা বিষয় স্পষ্ট- সরকার, প্রশাসন ও মিডিয়া চাইলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। সবার সম্মিলিত প্রয়াসেই এবি সিদ্দিক অক্ষত অবস্থায় তার পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন। কিন্তু কোথায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে? ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর চৌধুরী আলমই বা কোথায় আছেন? সাবেক সংসদ সদস্য ও লাকসাম বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির এখন কোথায়? ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাজধানীর বনানী থেকে নিখোঁজ হন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালক। দুই বছরের বেশি সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালকের কোনো সন্ধান মেলেনি। চৌধুরী আলম ২০১০ সালের ২৫ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর ফার্মগেট ইন্দিরা রোডের এক আÍীয়ের বাসা থেকে প্রাইভেট কারযোগে ধানমণ্ডি যাওয়ার পথে তিনি নিখোঁজ হন। পরে পরিবারের তরফ থেকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ফার্মগেট থেকে সাদা পোশাকধারী একদল ব্যক্তি নিজেদের আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে চৌধুরী আলমকে তুলে নিয়ে যায়। অদ্যাবধি তার কোনো হদিস মেলেনি। তিনি জীবিত, না মৃত সে ব্যাপারে কারও স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসার পথে কে বা কারা সাবেক সংসদ সদস্য ও লাকসাম বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবিরকে তুলে নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তাদের খোঁজ মেলেনি। দেশে এ রকম অসংখ্য অপহরণ ও গুম-খুনের ঘটনা ঘটেছে।
পত্রিকান্তরে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই অপহরণ ও গুমের শিকার হয়েছেন অন্তত ৩৮ জন। বিচারহীনতার সংস্কৃতিই অপহরণ ও গুমের ঘটনা বাড়ার মূল কারণ। ভাবনার বিষয়, অপহরণ ও গুমের ঘটনা বাড়লেও দু-একটি ছাড়া কমছে তদন্তের অগ্রগতি। পুলিশ সদর দফতরের গত ৫ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অপহরণ ও গুমের ঘটনায় ৪ হাজার ২৫০টি মামলা ও জিডি হয়েছে। অপহরণ ও গুম-খুনের ঘটনার দায়ভার অবশ্যই সরকারকে নিতে হবে। নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। অপহৃত বা গুম-খুনের শিকার কোনো ব্যক্তির পরিবার ও স্বজনরা রাষ্ট্রের কাছে অভিযোগ করার পর তাকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র কি তার দায়িত্ব পালন করছে?
মীর আবদুল আলীম
newsstore13@gmail.com
বিভাগ:

Author Name

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.