সাময়িকী.কম
বর্তমানে শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির অনেক অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। যদিও এ রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়, তবে যথোপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রেখে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব। হাঁপানি রোগীদের সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থার আওতায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়।
আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় অ্যাজমা রোগীদের মুখে খাবার ওষুধের চেয়ে ইনহেলার বেশি ব্যবহার করতে দেয়া হয়। কারণ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, কম পরিমাণ ওষুধ লাগে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এটা সঠিক নিয়মে ব্যবহার করলে খুব দ্রুত শ্বাসকষ্টের পরিমাণ কমে যায়। ইনহেলার অ্যাজমা রোগীর এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যা কিনা রোগী শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে টেনে নেয় এবং ওষুধ শ্বাসনালিতে পৌঁছায়।
হাঁপানি রোগীদের অনেকেই মনে করেন, ইনহেলার হাঁপানির সর্বশেষ চিকিৎসা। ইনহেলার একবার ব্যবহার করলে পরে শ্বাসকষ্টের পরিমাণ কমানোর জন্য আর অন্য কোনো ওষুধ কাজে আসবে না। তাদের জেনে রাখা ভালো, হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের প্রথম চিকিৎসা হচ্ছে ইনহেলার। ইনহেলার শ্বাসকষ্ট লাগবে খুব দ্রুত কাজ করে, যেখানে সেবনযোগ্য ট্যাবলেট বা বড়ি খেলে ২০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা সময় লাগে।
ইনহেলার দুভাবে ব্যবহার করা যায়। সরাসরি ও স্প্রেরের মাধ্যমে। সরাসরি ব্যবহার পদ্ধতি হলো প্রথমে ইনহেলার ঝাঁকিয়ে নিন। তারপর পুরো শ্বাস ফেলে দিয়ে শ্বাস বন্ধ রাখুন। তারপর মাউথপিসটা মুখে পুরে দিয়ে লম্বা শ্বাস নিতে শুরু করুন। যখন শ্বাস নিতে শুরু করবেন তখন ইনহেলারের কৌটায় চাপ দিন। বের হওয়া ওষুধ পুরোটা লম্বা শ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসের ভেতরে নিয়ে নিন। এরপর শ্বাস বন্ধ রাখুন কমপক্ষে ১০ সেকেন্ড। এভাবে ওষুধ নিলে প্রতি চাপে ৫ থেকে ৭ মাইক্রোগ্রাম সালবিউটামল ওষুধ শ্বাসনালিতে যায়। ওষুধ মুখের ভেতর গাল ফুলিয়ে ধরে রাখবেন না বা ঢোক গিলবেন না।
এভাবে ওষুধ ব্যবহারের ৮টা ধাপ আছে
১ম ঘাপ : ঢাকনাটি খুলে নিন, ইনহেলারটি ডান হাতের তর্জনী এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ধরুন।
২য় ধাপ : ইনহেলারটি ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিন।
৩য় ধাপ : মুখ হাঁ করে ধীরে ধীরে শ্বাস ফেলে দিন।
৪র্থ ধাপ : মাউথ পিসটি ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরুন। ক্যানিস্টারটি জোরে চাপ দিন এবং বের হওয়া গ্যাসটা ধীরে ধীরে লম্বা শ্বাস নেয়ার মাধ্যমে মুখ দিয়ে শ্বাসনালিতে নিয়ে নিন।
৫ম ধাপ : যতক্ষণ পারেন মুখ বন্ধ করে শ্বাস বন্ধ রাখুন অন্তত ১০ সেকেন্ড। এরপর ধীরে ধীরে শ্বাস ত্যাগ করুন।
৬ষ্ঠ ধাপ : কমপক্ষে ১ মিনিট স্বাভাবিক শ্বাস নিন।
৭ম ধাপ : আবার ১ম থেকে ৫ম ধাপের পুনরাবৃত্তি করুন।
৮ম ধাপ : ক্যানিস্টারের ঢাকনাটি আবার লাগিয়ে দিন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ইনহেলার ব্যবহারের নিয়ম পরীক্ষা করুন।
ইনহেলার যন্ত্রের মাধ্যমে শ্বাসের সঙ্গে ওষুধ টেনে নেয়ার সুবিধা অনেক বেশি। এভাবে ওষুধ শ্বাসনালিতে কাজ করে অনেক দ্রুত এবং অল্প পরিমাণ লাগে কাজ করার জন্য। সমস্যা হলো ঠিকমতো ওষুধ শ্বাসের সঙ্গে নিতে না পারলে কোনো উপকার তো হবেই না বরং ধীরে ধীরে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাবে। এ ইনহেলার ব্যবহার সত্ত্বেও যদি শ্বাস কষ্ট বাড়ে তখন মুখে ট্যাবলেট খেতে হবে বা বেশি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ইনজেকশন ব্যবহার করতে হবে।
পরামর্শ- ডা. একেএম মোস্তফা হোসেন
পরিচালক জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল মহাখালী, ঢাকা

Author Name

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.