"সোলমেট" শব্দটি এখন আর কারো কাছে অপরিচিত নয়। যুগে যুগে লালিত বিশ্বাস পৃথিবীর সকল মানুষের মাঝেই কম-বেশি আছে যে কোথাও না কোথাও কাউকে না কাউকে তাঁর জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এমনকি যে কোন ধর্মের দিকে তাকালেই দেখবেন যে প্রত্যেক মানুষকেই জোড়ায় সৃষ্টি করার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ আপনি যেমন আছেন, ঠিক তেমন আরও একজন মানুষ আছেন এই পৃথিবীর কোথাও না কোথাও যিনি কিনা আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনী। যার সাথে আপনার মনটা একদম খাপে খাপে মেলানো।
কিন্তু কীভাবে চিনবেন এই সোলমেট? কীভাবে খুঁজে পাবেন তাঁকে? গল্প-উপন্যাসে যেমন দেখা যায়, সেভাবেই কি খুঁজে পাওয়া যায় সে পারফেক্ট মানুষটিকে? আসলেই কি মেলে মনের মানুষ? কিংবা যার সাথে আপনি এই মুহূর্তে জীবন কাটাচ্ছেন, তিনি কি আপনার সোলমেট?
সোলমেট পরিমাপের কোন হিসাব-নিকাশ তো নেই। তবে হ্যাঁ, কিছু লক্ষণ আছে। আপনারা দুজন যদি সোলমেট হয়ে থাকেন, তাহলে এই লক্ষণগুলোর মাঝে বেশিরভাগই মিলে যাবে। আসুন জানি সেই লক্ষণ গুলো।
তাঁকে পাবার পর বাকি সব তুচ্ছ মনে হয়
এটা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষনের একটা। জীবনে হয়তো অনেক আকর্ষণীয় নারী-পুরুষ আপনি দেখেছেন, সে হয়তো তাঁদের তুলনায় একদম সাদামাটা। কিন্তু তাঁকে পাবার পর আর কাউকেই আকর্ষণীয় লাগে না। এমনকি নিজের আজন্ম লালিল স্বপ্ন, বা অনেক বড় অর্জনকেও তুচ্ছ মনে হয়। এতকাল যেসব খুব জরুরী ছিল, সবকিছু ছাপিয়ে সেই-ই হয়ে ওঠে সবচাইতে জরুরী।
শারীরিক আকর্ষণটা গৌণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়
তীব্র একটা শারীরিক আকর্ষণ সম্পর্কে থাকবেই। কিন্তু সত্যিকারের সেই মানুষটির ক্ষেত্রে সেটাই মুখ্য ব্যাপার থাকে না। বরং তাঁকে মমতা নিয়ে স্পর্শ করতে, আলতো একটু চুমু খেতে, কিংবা স্রেফ তাকিয়ে থাকতেও ভীষণ ভালো লাগে।
ব্যাপারটা খুব গভীর অনুভবের
একটা ব্যাখ্যাহীন আবেগ আছন্ন করে ফেলে সমগ্র চেতনাকে। একটা অদ্ভুত বন্ধ অনুভূত হয় নিজের মাঝে, যার জন্ম মনের খুব গভীরে কোথাও। মানুষটিকে জড়িয়ে ধরলে মনে হয় সমস্ত পৃথিবী যেন কেবল তাঁর মাঝেই।
অতীত স্মৃতিগুলো মনেও পড়ে না
অতীতে হয়তো কেউ আপনার মন ভেঙেছে, প্রতারণা করেছে, কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু অভিজ্ঞতাগুলো যত কষ্টেরই হক না কেন, আসল মনের মানুষটিকে পেয়ে যাওয়ার পর সেগুলো আর কষ্ট দেয় না। মন থেকে যেন ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে যায় সব।
চোখের পলকে সময় পার হয়ে যায়
হয়তো অনেক দিনের সম্পর্ক আপনাদের। তারপরেও দুজনে যখন একসাথে থাকেন, সময়টাকে বর অল্প মনে হয়। কখনোই বোর বা বিরক্ত লাগে না।
ত্রুটিগুলোও খারাপ লাগে না
মানুষ যাকে মন থেকে ভালোবাসে, তাঁর কোন দোষ ত্রুটিকেও তখন আর খারাপ লাগে না। বরং সেই দোষগুলো সহই তাঁকে ভালো লাগে।
কাছে এলেই ঝগড়া মিটে যায়
ভীষণ ভীষণ ঝগড়া। কিন্তু দেখা হলেই বা পরস্পরকে একটু ছুঁয়ে দিলেই মিটে যায় ঝগড়া। পৃথিবীর কোন ইস্যুই সম্পর্কের সামনে বড় মনে হয় না।
আপনারা দুজন বাকি পৃথিবীর বিপরীতে
বাকি পৃথিবী আপনাদের না বুঝলেও আপনারা সবসময় পরস্পরকে বুঝতে পারেন।
সংকোচ বা দ্বিধা হয় না কোন প্রকার
তিনি যেমনই হোক না কয়েন, তাঁকে নিজের মনের মানুষ পরিচয় দিতে আপনি কোন প্রকার সংকোচ বা দিশা অনুভব করেন না।
অদ্ভুত সেই মানসিক যোগাযোগ
হয়তো ফোনটা হাতে নিয়েছেন তাঁকে কল করবেন, তাঁর আগেই বেজে উঠলো ফোন। তিনি ফোন করেছেন! কিংবা হয়তো কিছু একটা বলতে যাবেন, তার আগেই তিনি বলে ফেললেন আপনি যা বলতে চাইছেন। তিনি কি আপনার আওয়াজ শুনেই বুঝতে পারে আপনার মন খারাপ কিনা, চেহারা দেখে বলে দিতে পারে আপনার ক্ষুধা পেয়েছে কিনা? তাহলে জেনে রাখুন, তিনিই সেই সোলমেট।
নিজের সবটুকু তাঁর ভরসায় ছেড়ে দেয়া যায়
নিজেরে সর্বস্ব দিয়ে, সম্মান-অর্থ-জীবন তাঁর হাতে তুলে দিয়েও নিশ্চিত বোধ করেন আপনি।
জীবনের ছোট ছোট ব্যাপারেও জড়িয়ে আছে সে
আপনার জীবনের একটা আলপিনের খবর হতে শুরু করে সব চাইতে বড় স্বপ্ন, সবই জানেন তিনি। এবং আপনিও জানেন তাঁর সবকিছু।
চোখের যে মনের কথা বলে
আপনার বেশিরভাগ সময় চোখের ভাষায় কথা বলেন, চোখের দিকে তাকিয়ে পরস্পরকে স্পর্শ করেন।
তাঁকে সামান্য কষ্ট দিতেও আপনার কষ্ট হয়
নিজেকে কষ্ট দিয়ে হলেও তাঁকে কষ্ট হতে দূরে রাখতে চান আপনি। আর সেও ঠিক তাই করে।
কোন কিছু গোপন করার ইচ্ছাই জাগে না
তিনি এত আপন যে কিচ্ছু গোপন করতে হয় না তাঁর সামনে। যা মন চায় কিছু না ভেবেই বলে ফেলেন। কারণ আপনি জানেন যে তিনি বুঝবে।
মডেল- সামি ও আঁচল
ফটোগ্রাফার- নেওয়াজ রুহুল
ফটোগ্রাফার- নেওয়াজ রুহুল