এবং দশ ভাই ষড়যন্ত্র করে তাদের সৎ ভাই যোসেফকে ইসমাইলীয়দের কাছে বিক্রী করে দিয়ে পিতা যাকবের কাছে বলে যে তাদের ভাইকে বাঘে খেয়ে ফেলেছে। আর ইসমাইলীয়রা যোসেফকে নিয়ে যায় মিশরে। তারা মিশরের বাজারে নিয়ে যোসেফকে দাস হিসেবে বিক্রী করার ঘোষণা দেয়। সেখানে উপস্থিত ছিলো পোটীফর নামে ফেরাউনের একজন মিসরীয় কর্মচারী। পোটীফর দেখলো একটি চমৎকার বালককে বিক্রী করে দেয়া হচ্ছে। আর যেহেতু পোটীফরের কোন সন্তান নেই। সে এই বালকের প্রতি স্নেহ অনুভব করে। তারপর পোটীফর যোসেফকে ১ টি স্বর্ণমুদ্রা ও ৪ টি রৌপ্যমুদ্রার বিনিময়ে খরিদ করে ঘরে নিয়ে যায়। পোটীফরের ঘরে সুন্দরী ও কম বয়েসী স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নেই। যোসেফ তাদের ঘরেই বড় হতে থাকে। ঘরের কাজকর্মে পোটীফরের স্ত্রীকে সাহায্য করা আর পোটীফরের সেবা যত্ন করাই ছিলো যোসেফের কাজ। ধীরে ধীরে যোসেফ কৈশোর অতিক্রম করে। এবং এক আকর্ষনীয় যুবক হয়ে বেড়ে ওঠে। যোসেফের গায়ের রঙ সোনালি উজ্জ্বল, চোখ মরুভূমির আকাশের মতো নীল, চুল গাঢ় অন্ধকারের চেয়েও কালো, আর সুগঠিত পেশী তাকে যে সৌন্দর্য দান করে, বৃদ্ধ পোটীফরের অল্প বয়েসী স্ত্রী তাতে মোহগ্রস্ত হয়। সে যোসেফের প্রতি কাম অনুভব করে। একদিন পোটীফর বাড়িতে না থাকলে যোসেফকে সে আহ্বান করে প্রেমে। কিন্তু যোসেফ ভয় পায়। সে অস্বীকার করে। যোসেফের এই অস্বীকার পোটীফরের স্ত্রী মেনে নিতে পারে না।
সে জোসেফকে জড়িয়ে ধরে, চুম্বন করতে চায়, জোর করে বিছানায় নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু যোসেফ তাকে ধাক্কা দিয়ে ছাড়িয়ে দেয়, ঘর থেকে ছুটে বের হয়ে যেতে চায়। তখন পোটীফরের স্ত্রী যোসেফকে পেছন থেকে ধরার জন্য আস্তিন ধরে টান দেয়। যোসেফের আস্তিন খুলে রয়ে যায় পোটীফরের স্ত্রীর হাতে আর যোসেফ দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। পোটীফরের স্ত্রী অপমানিত বোধ করে। সে যোসেফকে অপুরুষ বলে গালি দেয়। তারপর তার কী যেন হয়! সে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে দেয়। প্রতিবেশী কান্নার শব্দ শুনে ছুটে আসে। কী হয়েছে? কী হয়েছে? তখন পোটীফরের স্ত্রী বলে যে, যোসেফ, তার স্বামীর গোলাম তার সম্ভ্রমহানীর চেষ্টা করছিলো, সে কান্না জুড়ে দিলে গোলামটি আস্তিন রেখে দৌড়ে পালিয়েছে।এরপর পোটীফর বাড়ি এলে পোটীফরের স্ত্রী আরেক দফা কাঁদে আর যোসেফের নামে নালিশ করে। ছি! ছি! পুত্রতুল্য যোসেফ এইকাজ করতে পারলো! বড় আহত হয় পোটীফর। সে যোসেফকে আইনের হাতে তুলে দেয়। যোসেফের জেল হয়। আর পোটীফরের স্ত্রী পোটীফরের সংসার করতে থাকে। তারপর বহুদিন পর ভাগ্য জোরে যোসেফ জেল থেকে মুক্তি পেয়ে রাজকর্মচারি হিসাবে কাজ শুরু করে। এ দিকে পোটীফর মরে যায়। পোটীফরের স্ত্রী তখন বিধবা। অতঃপর যোসেফ পোটীফরের বিধবা স্ত্রীকে বিয়ে করে দুই সন্তানের জন্ম দিয়ে প্রমাণ করে সে ‘অপুরুষ’ নয়, পুরুষ।
এই হলো বাইবেলের যোসেফ ও পোটীফরের স্ত্রীর গল্পের সার। বাইবেলে পোটীফরের স্ত্রীর নাম উল্লেখ করা হয় নি। তবে এক স্থানে লেখা আছে, ‘যোসেফের ছেলে মানশা ও আফরাহীম মিসর দেশে জন্মেছিল। এদের মা ছিলেন হেলিওপলিস শহরের পুরোহিত পোটীফেরের মেয়ে আসনৎ।’ এটাকে সত্য ধরলে আমাদের গল্পের শেষ অংশ মেলে না। তাই আমরা গল্পের খাতিরে ঐ অংশ নেই বলে ধরে নিতে পারি। আর এ কথাও বলা উচিত, পারস্যের কবি জামি পোটীফেরের স্ত্রীর নাম দেয় জুলেইখা।