আমরা একেকজন একেক ভঙ্গিমায় শুয়ে ঘুমিয়ে থাকি। বাঁকা হয়ে, কুঁজো হয়ে, গুটিসুটি মেরে, পাশ ফিরে বা কখনো উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে থাকি আমরা। আমাদের ঘুমের স্থানও নির্দিষ্ট নয়। আমরা শুধু বিছানাতেই ঘুমুতে যাই না। আমরা কখনো টিভি দেখতে দেখতে সোফায় শুয়ে পড়ি বা কাজ করতে করতে মেঝেতেও ঘুমিয়ে যাই।
কিন্তু এই কাজগুলো কি আদৌ ঠিক? বিজ্ঞানী এবং হেলথ এক্সপার্টদের মতে এইসব প্রাত্যহিক কাজে কর্মে সামান্য উনিশ বিশ হলেই আমাদের বেশ বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে থাকে। বেশির ভাগ মেরুদণ্ড ও পেশি জনিত ব্যথার মূল কারণ হচ্ছে আমাদের শোয়া-বসা সহ দৈনন্দিন কাজ কর্ম সংক্রান্ত কিছু বাজে অভ্যাস। এই অভ্যাসগুলো দূর করতে পারলে আমাদের মেরুদণ্ড, হাড় এবং পেশি জনিত নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি। চলুন তবে দেখে নিই এমনই কিছু বাজে অভ্যাস ও এর প্রতিকার।
(১) নরম তুলতুলে বিছানায় ঘুমুতে সকলেই পছন্দ করেন। কিন্তু ঘুমানোর জন্য মোটামুটি শক্ত বিছানা বা গদিই ভালো। বেশি নরম তুলতুলে বিছানায় ঘুমালে মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক ‘কার্ভ’ বা বক্রতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যাদের পিঠে ও ঘাড়ে ব্যথা রয়েছে তারা গদির নিচে শক্ত কার্ডবোর্ড ব্যবহার করুন।
(২) অনেকেই দুই তিনটি বালিশ মাথার নিচে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু এটি একেবারেই উচিৎ নয়। বালিশের পুরুত্ব হতে হবে স্বাভাবিক। খুব মোটা নয় আবার খুব পাতলাও নয়। বালিশের সঠিক পুরুত্ব বুঝতে চাইলে বালিশে মাথা দিয়ে পাশ ফিরে শোবেন, দেখুন মুখটা বিছানার সঙ্গে সোজা বা সমান্তরাল আছে, নাকি উঁচু বা বেশি নিচু হয়ে গেছে। যদি দেখেন সমান্তরালে রয়েছে তবে বুঝবেন বালিশের পুরুত্ব সঠিক, নতুবা নয়।
(৩) চিত হয়ে ঘুমানো মেরুদণ্ডের জন্য ভালো। কিন্তু চিত হয়ে শোবার কারণে অনেকের শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা যায়, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে এবং নাক ডাকার অভ্যাস তৈরি হয়, বিশেষ করে মোটা মানুষদের। তাই চিত হয়ে ঘুমানো মেরুদণ্ডের জন্য ভালো হলেও নিঃশ্বাসের সমস্যার কারণে তা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
(৪) ডান পাশ ফিরে শোবার ফলে পাকস্থলীর ওপর চাপ পড়ে ও গলা জ্বলে, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যায়। তাই শোবার সময় বেশি সময় বা শুরুতেই ডান দিকে শুয়ে ঘুমানো উচিৎ নয়। বাম পাশ ফিরে ঘুমান।
(৫) যারা একপাশে ফিরে ঘুমাতে অভ্যস্ত, তারা দুই হাঁটুর মাঝে একটি কোল বালিশ অবশ্যই নেবেন। এতে করে দেহ বিছানার সাথে সমান্তরালে থাকবে।
(৬) অনেকেই পেটের ওপর ভোর দিয়ে উপুড় হয়ে ঘুমান। এটি অনেক খারাপ মেরুদণ্ড ও স্নায়ুরজ্জুর জন্য। ঘাড়ে ব্যথা হওয়ার মূল কারণ এটি। এছাড়াও উপুড় হয়ে ঘুমালে পাকস্থলীর ওপর চাপ সৃষ্টি হয় যা পাকস্থলীর স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
(৭) ঘুমানোর জন্য সব সময় আপনার বেডরুম, বিছানা ও বালিশ ব্যবহার করাই ভালো। সোফায়, মেঝেতে বা যেখানে- সেখানে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়া স্বাস্থ্যের জন্য একেবারেই ভালো নয়। এতে করে মেরুদণ্ড ও ঘাড়ের পেশিতে সমস্যা দেখা দেয়।
(৮) শুয়ে অথবা আধশোয়া হয়ে টিভি দেখা, লেখালেখির কাজ করা, কম্পিউটারে কাজ করা খুবই খারাপ একটি অভ্যাস। এগুলোর জন্য সোজা হয়ে বসে কাজ করা উচিৎ। তা না হলে মেরুদণ্ডের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।