রুপম আহমেদ মঈন
সাময়িকী.কম
এই সাত সকালেই জানালার গ্রিল ধরে অনেক্ষণ হলো বাইরে তাকিয়ে আছে রিমাl
দিহান ঘুম থেকে উঠেই দেখে রিমা জানালার গ্রিল ধরে বাইরে তাকিয়ে আছেl
মন খারাপ না থাকলে রিমা কখনোই জানালার গ্রিল ধরে এভাবে বাইরে তাকিয়ে থাকেনাl
দিহান দেরি না করে এগিয়ে গেলো রিমার পাশেl
তিন তলার রুমের জানালা দিয়ে দিহান বাইরে দেখতে পেলো স্কুলের ছোট ছোট শিশু গুলো সুন্দর সুন্দর পাজামা পাঞ্জাবি আর শাড়ি পরে স্কুলে যাছে বাঙ্গালী জাতির এক অনন্য সংস্কৃতি পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতেl কি সুন্দর তাদের পথ চলা, কেউ যাচ্ছে মায়ের কোলে কেউবা আবার বাবার হাত ধরেl ছোট্ট মেয়ে বাচ্চা গুলোর পায়ের নুপূর থেকে কি সুন্দরই না শব্দ ভেসে আসছেl
এবার দিহান সবই বুঝতে পেরে রিমার দিকে তাকাতেই রিমা হু হু করে কেঁদে উঠে দিহান কে জড়িয়ে ধরলোl
দিহানের চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলোl বুকের ভেতর টা নাড়া দিয়ে উঠলো তারl বাইরে শিশুদের নুপূরের শব্দ গুলি যেন তার বুকে ছোট ছোট কাঁচের টুকরো হয়ে লাগছেl
কি নিস্প্রভ ছিলো মেয়েটি, যেন তাজা ফুলের মতোই পবিত্রl
রিমা আদর করে তার নাম রেখেছিলো পুস্পিতাl সারা পৃথিবীর আনন্দ হয়ে তাদের বিয়ের এক বছর পর পুস্পিতা এসেছিল রিমা আর দিহানের জীবনেl
সারা বাসাটা পুস্পের মতোই সৌরভ ছড়িয়ে দিয়ে মাতিয়ে রাখতো সাত বছরের মেয়েটা
ওর জন্য কেনা নুপূর গুলো এখনো আলমারিতে পড়ে আছে,
লাল টুক টুকে শাড়িট, রং বেরংয়ের চুড়ি এগুলোর কথা মনে পরতেই রিমার খুব আদর করে পুস্পিতা কে পড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছেl
ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে রিমাl
দিহান শক্ত হয়ে রিমার দুচোখে জল মুছে দিতেই শোক সামলাতে না পেরে চিৎকার করে বলে ওঠে
- তুমি আমার পুস্পিতা কে এনে দাও, আমিও ওকে লাল টুক টুকে শাড়ি পড়িয়ে দেবো, হাতে চুড়ি পড়িয়ে দেবো, পায়ে নুপুর পড়িয়ে দেবো..
আমার পুস্পিতা কে তু ....মি... আমার কাছে এনে দাও........এ....নে... দাও.....এনে ..দাও........ রিমার এভাবে কান্না দেখে
দিহানের দুচোখ দিয়ে টল টল করে জল ঝড়তে থাকেl
দেয়ালে টাঙানো পুস্পিতার ছবিগুলো তাদের মা বাবার আর্তনাদ করে কান্নার শব্দ শুনতে পায়,
শুনতে থাকে পুস্পিতার শত আদরের পুতুল গুলো সেই বুক ফাটা আর্তনাদl
বাইরের পুস্পিতার মতো বয়ের শত শত শিশু পায়ে নুপুর পড়ে যেই রাস্তা দিয়ে আজ পহেলাবৈশাখ উৎযাপন করতে যাচ্ছে সেই রাস্তা দিয়েই একদিন পুস্পিতা তার গ্রাম থেকে আসা নানুর সাথে হাত ধরে নানু বাড়িতে রওয়ানা হয়েছিলl
কিন্তু কে জানতো এই তাজা দুটো প্রাণ পেট্রোল বোমায় পুড়ে ছাড়খার হয়ে এ ভাবে সারাজীবনের জন্য তাদের কাঁদিয়ে যাবে?
আজ পহেলাবৈশাখ প্রতিবারের মতো এবারও পহেলাবৈশাখের জন্য অনেক আগে থেকেই নতুন শাড়ি, নতুন চুড়ি আর রং বেরংয়ের শত সাজগোজ করার জিনিস কিনে আলমারিতে যত্ন করে রেখে দিয়েছিলো রিমা এবং দিহানl মেয়েকে আজ মনের মতো করে সাজিয়ে স্কুলে নিয়ে যাবেl স্কুলের অনুষ্ঠানে প্রতিবারের মতো এবারও পুস্পিতা প্রথম হলে পুরুস্কারের জন্য মা মেয়েকে নতুন কিছু গিফট কিনে দেবে, নতুন জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যাবে, এ রকম শত আশা বুকে জমা হয়ে ছিল আজকের এই দিনের জন্যl কিন্তু এখন আর সেই স্বপ্ন নেইl
আছে শুধু বুক ফাটা কান্না, যে কান্নার কোনো শেষ নেইl
দিহান এবার কাঁদতে কাঁদতে রিমা কে বল্লো - চলো আমরা আজ আমরা গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাই,
পুস্পিতা আর বাবার কবরের পাশে গিয়ে দেখে আসি ওরা কেমন করে ঘুমিয়ে আছেl
চলো রিমা, আমার আত্মা টা আর কিছুই মানছে না..
ড্রাইভার কে গাড়ি বের করতে বলে রিমা আর দিহান তৈরী হয়ে যায়l
রওনা হয়ে যায় গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যেl
গাড়ির দু পাশের জানালার কাঁচ দিয়ে হাজারো মানুষের যত আনন্দ উল্লাস দেখতে পাচ্ছে, রিমা আর দিহানের অন্তরের মধ্যে ততটাই চাপা কষ্ট উড়ে এসে ভর করছে, আস্তে আস্তে গাড়ির গতি যতই বাড়ছে রিমা আর দিহানের চোখের জলের গতিও ততটাই বাড়ছেl
হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ চতুর্থ বর্ষ
সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ
সাময়িকী.কম
অাঁকা : অপূর্ব খন্দকার |
এই সাত সকালেই জানালার গ্রিল ধরে অনেক্ষণ হলো বাইরে তাকিয়ে আছে রিমাl
দিহান ঘুম থেকে উঠেই দেখে রিমা জানালার গ্রিল ধরে বাইরে তাকিয়ে আছেl
মন খারাপ না থাকলে রিমা কখনোই জানালার গ্রিল ধরে এভাবে বাইরে তাকিয়ে থাকেনাl
দিহান দেরি না করে এগিয়ে গেলো রিমার পাশেl
তিন তলার রুমের জানালা দিয়ে দিহান বাইরে দেখতে পেলো স্কুলের ছোট ছোট শিশু গুলো সুন্দর সুন্দর পাজামা পাঞ্জাবি আর শাড়ি পরে স্কুলে যাছে বাঙ্গালী জাতির এক অনন্য সংস্কৃতি পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতেl কি সুন্দর তাদের পথ চলা, কেউ যাচ্ছে মায়ের কোলে কেউবা আবার বাবার হাত ধরেl ছোট্ট মেয়ে বাচ্চা গুলোর পায়ের নুপূর থেকে কি সুন্দরই না শব্দ ভেসে আসছেl
এবার দিহান সবই বুঝতে পেরে রিমার দিকে তাকাতেই রিমা হু হু করে কেঁদে উঠে দিহান কে জড়িয়ে ধরলোl
দিহানের চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলোl বুকের ভেতর টা নাড়া দিয়ে উঠলো তারl বাইরে শিশুদের নুপূরের শব্দ গুলি যেন তার বুকে ছোট ছোট কাঁচের টুকরো হয়ে লাগছেl
কি নিস্প্রভ ছিলো মেয়েটি, যেন তাজা ফুলের মতোই পবিত্রl
রিমা আদর করে তার নাম রেখেছিলো পুস্পিতাl সারা পৃথিবীর আনন্দ হয়ে তাদের বিয়ের এক বছর পর পুস্পিতা এসেছিল রিমা আর দিহানের জীবনেl
সারা বাসাটা পুস্পের মতোই সৌরভ ছড়িয়ে দিয়ে মাতিয়ে রাখতো সাত বছরের মেয়েটা
ওর জন্য কেনা নুপূর গুলো এখনো আলমারিতে পড়ে আছে,
লাল টুক টুকে শাড়িট, রং বেরংয়ের চুড়ি এগুলোর কথা মনে পরতেই রিমার খুব আদর করে পুস্পিতা কে পড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছেl
ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে রিমাl
দিহান শক্ত হয়ে রিমার দুচোখে জল মুছে দিতেই শোক সামলাতে না পেরে চিৎকার করে বলে ওঠে
- তুমি আমার পুস্পিতা কে এনে দাও, আমিও ওকে লাল টুক টুকে শাড়ি পড়িয়ে দেবো, হাতে চুড়ি পড়িয়ে দেবো, পায়ে নুপুর পড়িয়ে দেবো..
আমার পুস্পিতা কে তু ....মি... আমার কাছে এনে দাও........এ....নে... দাও.....এনে ..দাও........ রিমার এভাবে কান্না দেখে
দিহানের দুচোখ দিয়ে টল টল করে জল ঝড়তে থাকেl
দেয়ালে টাঙানো পুস্পিতার ছবিগুলো তাদের মা বাবার আর্তনাদ করে কান্নার শব্দ শুনতে পায়,
শুনতে থাকে পুস্পিতার শত আদরের পুতুল গুলো সেই বুক ফাটা আর্তনাদl
বাইরের পুস্পিতার মতো বয়ের শত শত শিশু পায়ে নুপুর পড়ে যেই রাস্তা দিয়ে আজ পহেলাবৈশাখ উৎযাপন করতে যাচ্ছে সেই রাস্তা দিয়েই একদিন পুস্পিতা তার গ্রাম থেকে আসা নানুর সাথে হাত ধরে নানু বাড়িতে রওয়ানা হয়েছিলl
কিন্তু কে জানতো এই তাজা দুটো প্রাণ পেট্রোল বোমায় পুড়ে ছাড়খার হয়ে এ ভাবে সারাজীবনের জন্য তাদের কাঁদিয়ে যাবে?
আজ পহেলাবৈশাখ প্রতিবারের মতো এবারও পহেলাবৈশাখের জন্য অনেক আগে থেকেই নতুন শাড়ি, নতুন চুড়ি আর রং বেরংয়ের শত সাজগোজ করার জিনিস কিনে আলমারিতে যত্ন করে রেখে দিয়েছিলো রিমা এবং দিহানl মেয়েকে আজ মনের মতো করে সাজিয়ে স্কুলে নিয়ে যাবেl স্কুলের অনুষ্ঠানে প্রতিবারের মতো এবারও পুস্পিতা প্রথম হলে পুরুস্কারের জন্য মা মেয়েকে নতুন কিছু গিফট কিনে দেবে, নতুন জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যাবে, এ রকম শত আশা বুকে জমা হয়ে ছিল আজকের এই দিনের জন্যl কিন্তু এখন আর সেই স্বপ্ন নেইl
আছে শুধু বুক ফাটা কান্না, যে কান্নার কোনো শেষ নেইl
দিহান এবার কাঁদতে কাঁদতে রিমা কে বল্লো - চলো আমরা আজ আমরা গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাই,
পুস্পিতা আর বাবার কবরের পাশে গিয়ে দেখে আসি ওরা কেমন করে ঘুমিয়ে আছেl
চলো রিমা, আমার আত্মা টা আর কিছুই মানছে না..
ড্রাইভার কে গাড়ি বের করতে বলে রিমা আর দিহান তৈরী হয়ে যায়l
রওনা হয়ে যায় গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যেl
গাড়ির দু পাশের জানালার কাঁচ দিয়ে হাজারো মানুষের যত আনন্দ উল্লাস দেখতে পাচ্ছে, রিমা আর দিহানের অন্তরের মধ্যে ততটাই চাপা কষ্ট উড়ে এসে ভর করছে, আস্তে আস্তে গাড়ির গতি যতই বাড়ছে রিমা আর দিহানের চোখের জলের গতিও ততটাই বাড়ছেl
হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ চতুর্থ বর্ষ
সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ