আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল সময়। কথায় আছে, সময় একবার অতিবাহিত হয়ে গেলে তা আর কোনোদিন ফিরে আসে না। একটি দিন সম্পূর্ণ হয় ২৪ ঘণ্টায়, আর একটি সপ্তাহে পাওয়া যায় ১৬৮ ঘণ্টা। আমরা আমাদের জীবনের এই মূল্যবান সময়গুলো নানাভাবে অতিবাহিত করি। কেউ কেউ এই মহামূল্যবান সময়গুলো পার করেন জীবনের সাথে জড়িত কিছু গঠনমূলক কাজ করে যা তার ভবিষ্যত জীবনে এনে দেয় অনাবিল এক সুখ। আর কেউ কেউ এই সময়গুলোকে নষ্ট করেন কিছু অনাকাঙ্খিত কাজ করে।
এমন অনেক সফল ব্যক্তি আছেন যারা তাদের জীবনের প্রতিটি সেকেন্ডকে কিছু ভালো এবং গঠনমূলক কাজের জন্য ব্যবহার করেছেন। তারা জানেন প্রতিটি সেকেন্ডের মূল্য কতখানি। তারা শিখে নিয়েছেন কীভাবে সময়কে কাজে লাগাতে হয়, জানেন কীভাবে সময়কে অপচয়ের হাত থেকে বাঁচাতে হয়।
প্রত্যেকদিন দিন পার হয়ে যায় দৌড়াতে দৌড়াতে? না নিজের জন্য একটু সময় বের করতে পারেন, আর না পারেন একটু আরাম করতে? বেশ, তাহলে জেনে রাখুন এটা হচ্ছে আপনারই ভুলে। গতিময় এই জীবনে ব্যস্ততা থাকবেই। কিন্তু সেই ব্যস্ততার ফাঁক ফোকর থেকেই নিজের আরামের জন্য একটু সময় বের করে নেয়াতা কিন্তু খুব সহজ, যদি সাথে থাকে একটু বুদ্ধি। কীভাবে প্রতিদিন সময় বাঁচাবেন? আসুন, জেনে নেয়া যাক এমন কিছু কৌশল যা নারী-পুরুষ সকলের কাজে লাগবে!
১. কীভাবে সময় অতিবাহিত করবেন পরিকল্পনা করুন
এর জন্য আপনি এক সপ্তাহ সময় নিতে পারেন। অনেকেই তাদের জীবনের মূল্যবান সময়কে অনেক বাজে কাজ করে নষ্ট করেন। লক্ষ্য ছাড়া প্রতিদিন তারা শুধু সময় অতিবাহত করার জন্য কিছু মূল্যহীন কাজ করে থাকেন। যার খুব বাজে প্রভাব তাদের ভবিষ্যত জীবনে পড়ে থাকে। এর জন্য আপনাকে জানতে হবে আপনি কিভাবে কোন কাজ করে সময় অতিবাহিত করবেন। আপনাকে একটি পরিকল্পনা করে এগুনো উচিৎ। নির্দিষ্ট কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময় ভাগ করে নিতে হবে।
২. কাজগুলোকে ভাগ করুন
আপনার প্রতিদিনের কাজগুলোকে ভাগ করে নিন। যেগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সেগুলো আগে করে ফেলুন বিশেষ করে দিনের প্রথম ভাগে। এর পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো তার পরে করুন। খুব কম গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সবার পরে করুন। এভাবে প্রতিদিনের কাজগুলোকে সময়ের সাথে সাজিয়ে নিন।
৩. সকালে একটু আগেই ঘুম থেকে উঠুন
আপনি সচরাচর সকালের যে সময়টাতে ঘুম থেকে ওঠেন তার চেয়ে কিছুটা আগে ওঠার চেষ্টা করুন। এতে হতে পারে আপনার একটি সম্পূর্ণ সপ্তাহে অতিরিক্ত ৭৫ মিনিট সময় বেশি পেতে পারেন যা আপনার নিত্যদিনের কাজগুলোকে আরও সহজ করে দিতে পারে অর্থাৎ আরও কিছু সময় বাঁচিয়ে দেবে।
৪. সীমিত সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করুন
একবার হিসেব করে দেখুন আমরা প্রতিদিন কতটা সময় ইন্টারনেটে বসে কাটাই। এর বেশিরভাগ সময়ই আমরা অপ্রয়োজনীয় কাজ করে কাটাই, প্রয়োজনীয় কাজ খুব কমই করি। দেখা যায় বেশিরভাগ সময় আমরা ফেসবুকে বসে থেকে বন্ধুদের সাথে অপ্রয়োজনীয় আড্ডা দিয়ে থাকি। এতে সময় নষ্ট হয় অনেক, বিনিময়ে শিক্ষনীয় কিছু পাই না। এর জন্য কিছু মুহূর্ত নির্দিষ্ট করুন যেটাতে আপনি আপনার ইচ্ছাও মেটাতে পারবেন সাথে সাথে কোনো সময়ও অপচয় হবে না।
৫. পরিকল্পনা করুন
আপনার জীবনের সময়গুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য একটি পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করুন। অর্থাৎ একটি রুটিন তৈরি করুন যে সারাদিনে আপনি কি কি কাজ করবেন এবং এগুলোর জন্য কতটুকু সময় ব্যয় করবেন। প্রয়োজনে আপনি পুরো সপ্তাহের রুটিন তৈরি করে ফেলতে পারেন। রুটিন অনুযায়ী কাজ করার পর আপনি আগামি দিনের রুটিন তৈরি করে ফেলুন।
৬. ইমেইল বা সামাজিক মাধ্যমে বিরতি দিন
ইমেইল বা সামাজিক বিভিন্ন মাধ্যমগুলোতে আমরা সবসময় লগ ইন এ থাকতে হয়তবা বেশিই পছন্দ করি। এটি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে ব্যাঘাত ঘটায়। এজন্য একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুয়ায়ী এই মাধ্যমগুলো ব্যবহার করা উচিৎ।
৭. আপনার কাজগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন
সবার আগে ভেবে নিন আপনি যে কাজগুলো করতে যাচ্ছেন তা আপনার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ? যেমন ধরুন আপনি কি জিমে যেতে চাইছেন, আপনি কি আপনার বাচ্চাদের স্কুলে যেতে সহায়তা করতে চাইছেন, আপনি কি আপনার কাপড়গুলোকে লন্ড্রিতে দিতে চাইছেন অথবা আপনি কি নির্দিষ্ট সময়ে হাঁটতে যেতে চাইছেন। আপনি আগে আপনার কাজগুলোকে গুরুত্ব অনুযায়ী সাজিয়ে নিন। তারপরে সেগুলো সময় মিলিয়ে করে ফেলুন।
৮. আপনার চিন্তাগুলোকে পরিবর্তন করুন
আমরা প্রায়শই বলে থাকি ‘আমি অনেক ব্যস্ত’, ‘অন্য কিছু করা আমার কোনো সময় নেই’। এই ধরনের চিন্তা ভাবনা আপনার মাঝে থাকলে তা আজই পরিবর্তন করুন। এগুলো আপনার কাজের উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এগুলোর পরিবর্তে আপনি বলুন, ‘ আমি আমার সময়ের উপযুক্ত ব্যবহার করব এবং আমি এই কাজটি অবশ্যই করব।’ অথবা ‘ আমি একদিনে সর্বোচ্চ কাজ করব।’ এই ধরনের চিন্তা ভাবনা আপনার কাজের গতিকে বাড়িয়ে দেবে এবং এর ফলে আপনি সময়ের উপযুক্ত ব্যবহার করতে পারবেন।
৯. এক ঢিলে দুই পাখি মারুন
ভাবছেন সময় বাঁচাতে এটা আবার কেমন কাজ। না সত্যি সত্যি আপনাকে পাখি মারতে হবে না। ধরুন আপনি একটি কাজে শহরে যাচ্ছেন, এক্ষেত্রে শহরেই করতে হবে এমন আরও একটি কাজ আপনি ঐ একই সময়ের মধ্যে করে ফেলতে পারেন। এর ফলে আপনি একই সময়ে দুটি কাজ একইসাথে করে ফেলতে পারবেন। ফলে আপনার অতিরিক্ত সময় বেঁচে যাবে।
১০. আপনার চারপাশ পরিস্কার এবং গুছিয়ে রাখুন
সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন এবং গোছানো থাকলে মন ভালো থাকে এবং ব্রেন সঠিকভাবে কাজ করে। কিন্তু অগোছানো থাকলে আপনার মাঝে অলসতা চলে আসতে পারে। ফলে আপনার কাজের গতি কমিয়ে দিতে পারে এবং কাজের সময়ও অনেক বেশি লেগে যায়। এজন্য সবসময় গোছানো থাকার চেষ্টা করুন এবং ঠিক সময়ে ঠিক কাজটি করার চেষ্টা করুন।