রায়ান নূর
১৷
গরুর পিয়াস জাগে হিমফোয়ারায়
আর্শি জলে দেখে যখন নিজ চেহারা
ভীত হয়ে ছুটে যায় ঘোলা নর্দমায়
সেই জল পিয়ে নাকি প্রভুর পেয়ারা?
২৷
ছাগল চড়ে সবুজ মাঠে
দেখে আকাশ নীল
তাকেই ঘাসের সাগর ভাবে
হয় না সাধের মিল ৷
৩৷
মহাজ্ঞানের বারান্দায়
বিজ্ঞজনেই শুধু যায়
সকলি বোঝে ঠিক কা ঠিক
মুল বোঝে সব কো বেঠিক ৷
৪৷
ক্যাফেতে জমিদার
খাবার খায় হাতে
ভদ্রসন্তানে দেখে
মুরগীরাণ প্রাতে ৷
৫৷
ব্যাংকের ম্যানেজারে হররোজ শনিবারে
চাকরের সাথে কিছু বিড়ি খায়
সমাদরে ওঠে ফুলে সিগারেট জ্বালে পরে
প্রতি প্যাকে চাকরের দিন যায় ৷
৬৷
মানুষ তোমার জাত ভাই
কি হিন্দু কী মুসলমান
ধুকবে কেউ সামনে তোমার
হবে তোমার অসম্মান ৷
৭৷
পতিতালয়ে থাকলে যদি
বেশ্যাবৃত্তি হয়
ঘরেই যখন পরকীয়া
জাতে তবে আর কী রয় ?
৮৷
হাজার টাকার শাড়ি কিনে
এক টাকাতেই ফকির হও
কীসের বড়াই দেখাও তুমি
অন্যরে তুমি ফকির কও ৷
৯৷
গোলাপবাগে ফুল ছিল
দাম নিয়েছো সিকি 'আনা
এখন তাতে উঁই ধরেছে
ভ্রমরে তো তাও আসেনা ৷
১০৷
হাঁটু পানিতে মাছ ধরেছ
নদীর কদর বুঝবে কী
গভীর জলে লড়াই কর
বুঝবে কেমন জিন্দেগী ৷
১১৷
আকাশ যখন মেঘে ভরা
নদীতে জল থই থই
কুল বেয়ে সব উছলে পড়ে
খরায় তার জোয়ার কই ৷
১২৷
মরুভূমির বালির ঝরে
বুকটা করলে খাড়া
শরীর শুধু বিবশ হল
পারলেনা তো নড়া ৷
১৩৷
রাজা যখন সিংহাসনে
মূল্যবোধের গান গাও
নিজেই যখন রাজা হলে
বিবেকটা কি দেখতে পাও ৷
১৪৷
হাসতে তোমার বছর গেল
কাঁদার সময় পেলে কৈ
কেঁদেই একটু দেখো তুমি
জগতটাতো হাসি রৈ ৷
১৫৷
টুপিতে যদি লোক চেনা যায়
ধুতি তাতে মামুলি
পদ্য যারা মন্ত্র বানায়
তার কাছে সব আধুলী ৷
১৬৷
সংস্কৃত যদি হিন্দুয়ানী
আরবী কি এতই সোজা
ফারসী না হয় পরে দেখ
সবখানেতে তুমিই খোজা ৷
১৭৷
নিজের ঠোঁট পর কে দিয়ে
অন্যের নেকাবের খবর নাও
খোঁজ নিলেই জানবে তুমি
তোমার পেটে কয়টি ছাও ৷
১৮৷
হাটে বসে সাপের খেলা
নাম না জানা শিঁকর সব
বিদ্বান যদিও হলে তুমি
শিঁকর বলে নিরেট গর্দভ ৷
১৯৷
আজরাইল এল বলে
ভাবখানা কেন এমন
হাড়ির ভাত তোলাই রবে
সিদ্ধ চাল ফুটবে তেমন ৷
২০৷
দুইয়ে দুইয়ে চার হয়
শাস্ত্র বলে কথা
চারটাকে এক বানাও
বুঝবে কেমন ব্যথা ৷
২১৷
খাঁচার পাখি উড়ে গেলে
কারও বুঝি কষ্ট লাগে
নিজের খাঁচায় খেয়াল রাখ
পাখি যেন না যায় আগে ৷
২২৷
সাধু শুনায় প্রেমের বানী
পন্ডিতে দেয় যুক্তি
শিষ্য এখন পাগল পারা
কার কাছে হয় মুক্তি ৷
২৩৷
পুকুরে আজ হাঁস রাজা
বনে যদিও শেয়াল
ঘরে তোমার গিন্নী রাজা
সেদিকে নেই খেয়াল ৷
২৪৷
প্লেনে চড়ে স্বর্গ দেখে
এমন জ্ঞানী কোথায় আছে
সাগরতলে নরক যদিই
কেমন পন্ডিত ধায় পাছে ৷
২৫৷
গায়ে তুমি সুবাস মাখো
ঢাকতে নিজের বদনাম
গন্ধে সবাই মাতোয়ারা
এইতো সেই মেকি কাম ৷
২৬৷
ফুলবাগানে হাটলে রাতে
গায়ে লাগে সুবাস তার
বউরে সুধাও মেকি কথা
হয় কি তাতে গুপ্ত আর ৷
২৭৷
সূর্য চলে ঊষা ঠেলে
গোধূলিতে হয় পতন
যে বেশে সে আসে ছেড়ে
শেষেও সে একই মতন ৷
২৮৷
মর্গে যত লাশ মানুষের
মন তার বাজারে
কঙ্কালেতে সাধ মিটে না
গিয়ে দেখ কবরে ৷
২৯৷
মরলে কেও স্বস্তি লাগে
কাঁদো স্মৃতির তাড়নে
মরে যে সেই তো জানে
মরণ হয়না মরণে ৷
৩০৷
লুঙ্গি পড়ে বাবুয়ানা
যেন অতি ভদ্রলোক
কাছার মাঝে চলে কত
শয়তানের ইহলোক ৷
৩১৷
হাসিই সত্য জগৎ জুড়ে
কান্নার কী দাম আছে
মেকি হাসি মেকি কান্না
চক্রসূত্রে অতি কাছে ৷
৩২৷
আমার চুল তোমার বাবার মত
ঝরবে যেদিন বাতাসে
তোমাতে আমাতে মিল কত
দেখবে সেদিন হতাসে ৷
৩৩৷
পাকুর গাছে খেজুরগাছ
স্বাস্থ্য তার বাবুয়ানা
তাতেও কত খেজুর ধরে
দেখ সেসব মুন্সিয়ানা ৷
৩৪৷
গৃহস্থের রাখাল গরু খোজে
মুখে পুরে খিলিপান
তৃপ্তির তোষামুদে মালিক ভুলে
দিন করছে গুজরান ৷
৩৫৷
ভিক্ষুক কয় ভিক্ষাদারে লোকসানে কী হয় লাভ?
হেসে কয় ভিক্ষাদার লাভে কী তবে লোকসান!
সব জায়গায় জীবনের হিসাব মিলে যদি সহজে
তুমি আমি সমান তাতে হত সবার তিরোধান ৷
৩৬৷
জন্মিলেই হয়না মানুষ
পশুও হয় তো হঠাৎ
মানুষ যদি পশুরই মত
মানুষ পশুর কিবা তফাৎ ৷
রায়ান নূর,
বাংলাভাষা ও সাহিত্য,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।