সেদিন ছিল শক্রবার। মামার অফিস বন্ধ, আমার কলেজও ছুটি। মামা রুবজ এ রহমান ঘুমের মধ্য দিয়ে বিশ্বরেকর্ডের তুমুল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সারারাত ঘুমানেরা পরও বিকেল ৪ টা পর্যন্ত চলল তার সে বিরতিহীন ঘুম। শেষপর্যন্ত মনে হয় আর পেরে ওঠলেন না! পেটের নিম্নচাপের কারণে (পায়খানার বেগ!) তাকে উঠতেই হল। নতুবা সত্যি সত্যি হয়ত তিনি গিনেজ বুক অব ওয়াল্ডে নাম লেখাতে পারতেন!

আমি কিন্তু সেই সকাল থেকেই উঠে নানামুখী পায়চারি করছি। কারণও আছে- আজ জালালাবাদ থেকে পাত্রী পক্ষের লোক আসবে আমাকে দেখতে। একটু একটু টেনশনও হচ্ছে। যদি পছন্দ না হয়! তার চেয়েও বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হল মামা এখনো প্রস্তুত হননি। ওদিকে সকাল থেকেই মামি বিভিন্ন রকমের রান্নার আয়োজন করছেন। তার যেন আর শ্বাস ফেলারও আজ ফুরসুরত নেই। সারাদিন তো কাজ করেই আবার রাতেও থাকে মামার সাথে কাজ! বেচারি! কুলুর বলদের মত খেটেই যাচ্ছে তবু মামার মন রক্ষা করতে পারছে না!

এদিকে পাত্রীপক্ষের লোকও চলে আসলো। আমি তাদের বিনয়ের সহিত সালাম দিলাম। এইরকম বিনয়ের সহিত সালাম মনে হয় আর কোনদিনও দেই নি। আর প্রফেসার মানুষ তো খালি সালাম পেতে পেতেই অভ্যস্থ। সালাম দেওয়ার কথা ভুলেও মনে আসে না। প্রফেসার মানে প্রভাষক আর কি! এলাকার সব লোকজন তো আর বুঝে না প্রভাষক আর প্রফেসরের পার্থক্য। সবাই গণহারে ডাকতে ডাকতে আমি নিজেও এখন আমাকে প্রফেসারই ডাকি!

যাই হোক, আমি তাদের বসতে দিলাম। চা পানেরও ব্যবস্থা করলাম। ওদিকে পাত্রির বাবা, চাচা, মামা, খালু এবং পাত্রীর ছোট বোনও এসেছে। ওরা ঘনঘন আমার দিকে তাকাচ্ছে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত নিরীক্ষণ করছে। নিজেকে তখন বাজারের পশু হাটের পশু বলে মনে হচ্ছিল। পশু ক্রেতারা যেমন পশু কেনার সময় সব কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে তেমনি অবস্থা হয়েছে আমার! আমি সাধারণত গরমের দিনেও বেশি ঘামি না, কিন্তু সেদিন যেন ১০৫ ডিগ্রি জ্বরের রোগীর মত আমার সারা শরীর ঘামে ভিজে যাচ্ছে। পাত্রীর মামা জিজ্ঞেস করলেন - বাবাজি চাকরির কয় বছর হয়েছে?
-আমি বললাম দুই বছর
ভাইবোন কয়জন?
ভাইবোনের সংখ্যা বলতে গিয়ে আমি তখন একটু বেশি ইতস্থত করতে লাগলাম। বিষয়টি বুঝতে পেরে মামাজি কৌশলী প্রশ্ন করলেন- না মানে বলছিলাম কী, ভাই বোনের মাঝে আপনি কত নম্বর?
আমি বললাম -২য়
আচ্ছা আপনার মামা কোথায়? আপনার মামাকে তো দেখছি না। এতক্ষণ পরে আমারও মনে হলো- তাই তো! মামা সেই যে বাথরুমে ঢুকলেন আর তো বেরুনোর নাম নেই। উনার দেরির কারণে আমার ইন্টারভিউয়ের সময়ও বেড়ে যেতে থাকলো। স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ইন্টারভিউয়ে কখনো আমার ঘাম ছুটেছিলো বলে মনে পড়ে না। মামার উপর খুব রাগ হতে লাগলো। মনে মনে হাজার বার গালি দিতে থাকলাম। খামখেয়ালির তো একটা সময় আছে! আজকের এমন একটা শুভ দিনে এমন বেখেয়ালি হলে চলে!
কথাটি মনে মনে বলতে বলতেই দেখি মামা বাথরুম থেকে বেরিয়ে সোজা ড্রয়িংরুমের দিকে আসছেন। আমার খুশি আর দেখে কে! মামা, অতিথিদের দূর থেকে দেখেই বলতে বলতে আসলেন, ও আপনারা তাহলে এসে পড়েছেন? পাত্রীর বোন তখন চিৎকার বলে উঠলো, আব্বু, আব্বু দেখ, উনি ল্যাংটা হয়ে এসেছেন! সবারই তখন চোখ পড়ল তার দিকে। চোখ যেন কপালে উঠার অবস্থা! আরে হ্যাঁ। তাই তো। এ ও কী সম্ভব? আমি লজ্জায় তখন রাধার সেই বিখ্যাত উক্তি মনে মনে আওড়াতে লাগলাম- ধরণী দ্বিধা হও পসিয়া লুকাই! ছোট মেয়েটি তখনও বলে চলছে, ছি! ছি!! ছি!!! ওনার বুঝি লজ্জা-শরম নেই?কত বড় ব্যাট্যা মানুষ! ছি! ছি!! ছি!!!
লজ্জার মাথা খেয়ে আমি কৌশলে হাত দিয়ে মামাকে তার পড়নে যে প্যান্ট নেই তা বুঝানোর চেষ্টা করলাম। দেখলাম ততক্ষণে মামার চেতনা ফিরে এসেছে। কালির মত জিহ্বায় কামড় দিয়ে ওনার শিশ্ন ধরে অন্দরমহলের দিকে দিলেন দৌঁড়। মামার এমন অবস্থা দেখে পাত্রী পক্ষ উঠে দাঁড়াল। পাত্রীর চাচা তো রাগের স্বরে বলেই ফেললেন এমন অসভ্য মামার ভাগনার কাছে কিছুতেই আমার ভাতিজিকে তুলে দিতে পারি না। প্রফেসার না মহা প্রফেসার হোক! চলেন সবাই। তারা উঠে পড়লেন।

আমি কিছু বলতে গিয়েও আর বলতে পারলাম না। লজ্জায় আমারও মাথা নুয়ে আসতে লাগলো। কেবল তাদের প্রস্থানের দিকে তাকিয়ে নির্লিপ্ত প্রলাপের স্বরে বলতে লাগলাম- ছি! মামা! এটা ঠিক না।

মুনশি আলিম
বোরহানবাগ, শিবগঞ্জ, সিলেট

Author Name

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.