ওরিয়েন্টেশ
ক্লাসে তাড়াতাড়ি ঢুকতে গিয়ে পিছন থেকে এক মেয়ে আমার উপর হুমরি খেয়ে পড়ল। কোমল স্পর্শে মুহূর্তেই আমার শরীরে বিদ্যুতের
ঢেউ খেলে যায়। মনে মনে ভাবলাম কয়েকশ শতাব্দী এভাবে আমার উপর কেউ যদি পড়ে থাকত! কতই না মজা হত! আমি সোজা হয়ে কিছু বলার আগেই মেয়েটি করজোর
করে বলল- sorry, পিছন থেকে কেউ হয়ত-
-it’s ok.
- আপনার পিঠে লিপিস্টিক... এই নিন টিস্যু
- দেবরাজ
ইন্দ্রের মত কি আমার সহস্র লোচন আছে? পিঠে কীভাবে দেখব?
- ও হ্যা, তাই তো!
- থাকনা, চলুন ক্লাসে।
প্রথমটায় কেমন
যেন অসস্তি অনুভব করল তারপর অস্পষ্ট স্বরে বলল-চলুন। দীর্ঘক্ষণ ক্লাস চলল। ছাত্রছাত্রী কানায়
কানায় পূর্ণ। ভরা জোয়ারের সময় নদী যেমন কানায় কানায় পূর্ণ থাকে তেমনি ওরিয়েন্টেশন
ক্লাসেও থাকে ছাত্রছাত্রী! ক্লাস শেষে বিদায় নেওয়ার সময় অবনত নেত্রে পুনরায় বললেন- sorry. একটু কষ্ট করে লন্ড্রিতে দিয়ে ধুয়ে নিবেন।
- সুমিতা, যদি না ধুয়ে স্মৃতি স্বরূপ রেখে দিই?
ও তখন লজ্জায়
রাঙা হয়ে ওঠে। কিন্তু তার চেয়েও বেশি বিষ্মিত হয়ে বলে- আপনি আমার নাম জানলেন কী করে?
- সে না হয় আরেক
দিন জানলেন। ভাল থাকবেন। পরে আবার কথা হবে।
আমি দ্রুত
বেরিয়ে আসি। সকাল থেকেই আম্মুর শরীরের অবস্থা খুব বেশি খারাপ। হাসপাতালে না নিলেই
নয়। এজন্যই তড়িঘড়ি করে বিদায় নেয়। আম্মুকে হসপিটালে যাই। নানাবিধ ডাক্তারি পরীক্ষা-নীরিক্ষা, ঔষধ সেবন ও নিয়মিত শুশ্রূষার পর প্রায়
সপ্তাহখানেকের মধ্যেই ওনি সুস্থ হন। প্রায় সপ্তাহখানেক পর আমি ভার্সিটিতে যাই। দরজার সামনেই সে দাঁড়ানো ছিল।
হেসে জিজ্ঞেস করল- এতদিন এলেন না
যে? এভাবে মিস করলে তো রেজাল্ট খারাপ করবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি অবাক হয়ে যাই। মেয়েটি যে আমার উপড় রীতিমত
অধিকার নিয়ে খবরদারি করছে! আমি তাকে ধীরে ধীরে সব খুলে বলি। এভাবে তার সাথে আমার ভাল বন্ধুত্ব হয়ে
যায়। বন্ধুত্ব থেকে ধীরে ধীরে প্রেম।
ভার্সিটিতে
ভর্তির প্রায় মাস চারেক পরে হঠাৎ আম্মু একটু বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ডাক্তাররা
বললেন- মাদ্রাজ নিতে
হবে। যেই কথা সেই
কাজ। পাসপোর্ট আগেই করা ছিল বলে
বেশ একটা ঝামেলা হল না। কয়েকদিনের মধ্যেই মাদ্রাজ চলে গেলাম। খুব তাড়াতাড়ি
প্রসেসিং করার কারণে সুমিতাকে আর বিষয়টি জানানো হয়ে ওঠে নি। মাদ্রাজে প্রায় মাস
দুয়েক চিকিৎসার পর আম্মু সম্পূর্ণ সুস্থ হলেন। আম্মুকে নিয়ে দেশে ফিরে আসি। দেশে ফিরতে না ফিরতেই লন্ডন থেকে মামা এসে
হাজির। এসেই পরিকল্পনা
করলেন বাড়ির সবাইকে নিয়ে পার্কে বেড়াতে যাবেন। কোথায় যাওয়া
যায়? কেউ কোন সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে ওনি নিজেই
সিদ্ধান্ত নিলেন ‘এডভেঞ্চার
ওয়াল্ডে’ যাবেন। আম্মুও
আপত্তি করলেন না।
আমরা সপরিবারে ‘এডভেঞ্জার ওয়াল্ডে’ ঢুকলাম। তখন প্রায় বিকেল চারটা। এই পার্কের প্রাকৃতিক
পরিবেশ বেশ মনোরম। তাছাড়া মিউজিকের উচ্চ শব্দও যে কোন ভ্রমণপিপাসুদের হদয় হরণ
করে নেওয়ার মত। আমি খানিক
এগিয়ে যেতেই সবুজ জামা পরিহিত এক প্রেমিক জুটির দিকে আমার চোখ পড়ল। মেয়েটিকে খুব চেনা
চেনা মনে হচ্ছে। ওরা বেশ অন্তরঙ্গ অবস্থায় খুনসুটি করে হেঁটে আসছে। আমার মনে সন্দেহ দানা বাঁধে। সুমিতার মত লাগছে, কিন্তু সে এখানে আসতে যাবে কেন? তাও আবার অন্য ছেলের সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায়! মনের মধ্যে নানা প্রশ্ন ঢেউ খেলে যায়। কাছে
আসতেই সব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আরে! এ তো সুমিতা। মুহূর্তেই মাথা গরম হয়ে ওঠে। চিন্তাগুলো এলোমেলো হয়ে যায়। চোখ
জুড়ে আলো-ছায়া খেলা করে। আমি দূর আকাশের দিকে তাকাই। একটি
চিল দূর থেকে দূরান্তের পথে ওড়ছে। আমি অস্ফুস্ট স্বরে বলি-ওহে চিল, তুইও কি
আমার মত একা?
সময়
এগিয়ে চলে।
মুনশি আলিম
টিলাগড়, সিলেট