মুছাদুল ইসলাম
সাময়িকী.কম
সময়টা ছিল ঈদের আগের দিন। ঢাকা হতে বাসায় ফিরছি। ফোনের সুইচটা অন করে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। ঘড়িতে তখন এগারোটা বাজে। আমাদের বাসটা আরিচার ফেরির উপর এসে থেমেছে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই একটা হাত আমার দিকে এগিয়ে এলো। "ভাইয়া পাঁচটা টাকা দেবেন? সকাল থেকে কিছু খাইনি।" মেয়েটার বয়স সাত কি আট হবে। খুব একটা আঁচ করতে পারলাম না। অবহেলা-দারিদ্রের গ্লানি তার বয়সের উপর যে ছাপ ফেলেছে তাতে ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক। চুল গুলো এলোমেলো। পরনের ফ্রকটাও জায়গায় জায়গায় ছেড়া। গায়ের রং অনেকটা ধূসর তামাটে। আঁচড় কাটলে ময়লা উঠে আসে। কিন্তু তার চোখ দুটো এতটাই মায়ায় ভরা যে কোনো শত্রুও তাকে আঘাত করতে এলে হাত কেঁপে উঠবে। ওকে দেখে খুব মায়া হল। আমি ওকে ওখানে থাকতে বলে বাস হতে নেমে এলাম। কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলাম‚"নাম কি তোমার?" নিচু কণ্ঠে উত্তর এলো‚"মিনি।" আমি মিনিকে বললাম‚"পাঁচ টাকায় কি খাওয়া হবে?" মিনি উত্তরে বলল‚"ভাইয়া যা হয়‚আধপেট খাব।" আমি মিনিকে ফেরির উপর রেস্টুরেন্টে ডেকে নিয়ে টেবিলে বসিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম‚"তুমি কি খাবে?" ও বলল‚ভাইয়া আমি কিছু খাব না।" "তাহলে?" ও বলল‚"আমাকে পঞ্চাশটা টাকা দেন।" "পঞ্চাশ টাকা দিয়ে কি হবে?" ও বলল‚"বাসায় আমার অসুস্থ মা আর ছোট ভাই না খেয়ে আছে। ওদের জন্য চাল আর ডাল কিনে নিয়ে যাব।" পরিবারের প্রতি ভালবাসা-মমত্ববোধ যে দরিদ্রতাকে ছাপিয়ে এই ছোট্ট মেয়েটির মধ্যেও চেতনাকে নাড়া দেয় তা সত্যিই বিষ্ময়কর। আমি ওর বাবার কথা শুনতে ও বলল‚"বাবা নেই। বছরখানিক হল বাবা মইরা গ্যাছে। আমি ভিক্ষা কইরা মা আর ছোট ভাইরে খাওয়াই।" আমি মিনিকে জিজ্ঞাসা করলাম‚"ঈদের জন্য জামা কাপড় কিনেছ?" ও বলল‚"ভাইয়া আমাগো আর ঈদ। তিনবেলা ঠিক মতন খাওনই তো জোটে না।" বুঝতে পারলাম এদের অভিধানে বিনোদন শব্দটি নেই। যা আছে তা হল প্রতিনিয়ত দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকার চিন্তা। ওর বয়সের আমারও একটি ছোট বোন আছে। নাম লুনা। আমি লুনার জন্য ঢাকা হতে ঈদের জামা কাপড় কিনে বাসায় ফিরছিলাম। আমি মিনির মুখে লুনার সেই আদুরে ডাক শুনতে পেয়েছিলাম। আমি মিনিকে লুনার জন্য কেনা জামা আর পকেট হতে দুইশ টাকা বের করে দিলাম। এই দুইশ টাকা তার জন্য হয়তো যথেষ্ট ছিলনা। কিন্তু আমি তার চোখে যে আবেগের অশ্রু আর মুখের কোনায় একটুকরো আনন্দের হাসি দেখতে পেয়েছিলাম তা আজো আমার মনে দাগ কেটে যায়। বছর ঘুরে আবার ঈদ ফিরে আসছে। আজো হয়তো শত শত মিনি কোনো ফেরি ঘাট বা বাস টার্মিনালে আমার মত কারো জন্য অপেক্ষায় আছে। তাদের এ অপেক্ষা দুঃখকে ভাগ করে নেওয়ার জন্য নয়‚ একটু সহানুভূতি পাবার জন্য।
খুলনা
সাময়িকী.কম
সময়টা ছিল ঈদের আগের দিন। ঢাকা হতে বাসায় ফিরছি। ফোনের সুইচটা অন করে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। ঘড়িতে তখন এগারোটা বাজে। আমাদের বাসটা আরিচার ফেরির উপর এসে থেমেছে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই একটা হাত আমার দিকে এগিয়ে এলো। "ভাইয়া পাঁচটা টাকা দেবেন? সকাল থেকে কিছু খাইনি।" মেয়েটার বয়স সাত কি আট হবে। খুব একটা আঁচ করতে পারলাম না। অবহেলা-দারিদ্রের গ্লানি তার বয়সের উপর যে ছাপ ফেলেছে তাতে ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক। চুল গুলো এলোমেলো। পরনের ফ্রকটাও জায়গায় জায়গায় ছেড়া। গায়ের রং অনেকটা ধূসর তামাটে। আঁচড় কাটলে ময়লা উঠে আসে। কিন্তু তার চোখ দুটো এতটাই মায়ায় ভরা যে কোনো শত্রুও তাকে আঘাত করতে এলে হাত কেঁপে উঠবে। ওকে দেখে খুব মায়া হল। আমি ওকে ওখানে থাকতে বলে বাস হতে নেমে এলাম। কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলাম‚"নাম কি তোমার?" নিচু কণ্ঠে উত্তর এলো‚"মিনি।" আমি মিনিকে বললাম‚"পাঁচ টাকায় কি খাওয়া হবে?" মিনি উত্তরে বলল‚"ভাইয়া যা হয়‚আধপেট খাব।" আমি মিনিকে ফেরির উপর রেস্টুরেন্টে ডেকে নিয়ে টেবিলে বসিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম‚"তুমি কি খাবে?" ও বলল‚ভাইয়া আমি কিছু খাব না।" "তাহলে?" ও বলল‚"আমাকে পঞ্চাশটা টাকা দেন।" "পঞ্চাশ টাকা দিয়ে কি হবে?" ও বলল‚"বাসায় আমার অসুস্থ মা আর ছোট ভাই না খেয়ে আছে। ওদের জন্য চাল আর ডাল কিনে নিয়ে যাব।" পরিবারের প্রতি ভালবাসা-মমত্ববোধ যে দরিদ্রতাকে ছাপিয়ে এই ছোট্ট মেয়েটির মধ্যেও চেতনাকে নাড়া দেয় তা সত্যিই বিষ্ময়কর। আমি ওর বাবার কথা শুনতে ও বলল‚"বাবা নেই। বছরখানিক হল বাবা মইরা গ্যাছে। আমি ভিক্ষা কইরা মা আর ছোট ভাইরে খাওয়াই।" আমি মিনিকে জিজ্ঞাসা করলাম‚"ঈদের জন্য জামা কাপড় কিনেছ?" ও বলল‚"ভাইয়া আমাগো আর ঈদ। তিনবেলা ঠিক মতন খাওনই তো জোটে না।" বুঝতে পারলাম এদের অভিধানে বিনোদন শব্দটি নেই। যা আছে তা হল প্রতিনিয়ত দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকার চিন্তা। ওর বয়সের আমারও একটি ছোট বোন আছে। নাম লুনা। আমি লুনার জন্য ঢাকা হতে ঈদের জামা কাপড় কিনে বাসায় ফিরছিলাম। আমি মিনির মুখে লুনার সেই আদুরে ডাক শুনতে পেয়েছিলাম। আমি মিনিকে লুনার জন্য কেনা জামা আর পকেট হতে দুইশ টাকা বের করে দিলাম। এই দুইশ টাকা তার জন্য হয়তো যথেষ্ট ছিলনা। কিন্তু আমি তার চোখে যে আবেগের অশ্রু আর মুখের কোনায় একটুকরো আনন্দের হাসি দেখতে পেয়েছিলাম তা আজো আমার মনে দাগ কেটে যায়। বছর ঘুরে আবার ঈদ ফিরে আসছে। আজো হয়তো শত শত মিনি কোনো ফেরি ঘাট বা বাস টার্মিনালে আমার মত কারো জন্য অপেক্ষায় আছে। তাদের এ অপেক্ষা দুঃখকে ভাগ করে নেওয়ার জন্য নয়‚ একটু সহানুভূতি পাবার জন্য।
খুলনা