ঢাকা, শুক্রবার ২৪ জুলাই : বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে প্রায় শতাধিক ছাত্রনেতা ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ করছেন। তবে নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আওয়ামী লীগ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে ৫ জনকে নিয়ে আলোচনা চলছে। সূত্র মতে, এই ৫ ছাত্র নেতা হলেন কিশোরগঞ্জের আজিজুল ইসলাম রানা, গোপালগঞ্জের আনোয়ার হোসেন আনু, পাবনার শাহেদ আলী, সিরাজগঞ্জের ইমতিয়াজ বুলবুল বাপ্পী ও মৌলভীবাজারের জাকির হোসেন। ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কী নির্বাচন হবে নাকি সিলেকশন করা হবে তা চূড়ান্ত হবে শনিবার রাতে। শনিবার সকাল দশটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন শুরু হবে। রোববার সম্মেলনের শেষ দিন। বিগত ৩টি সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে সরাসরি ভোটে নির্বাচন করা হয়েছে।
দীর্ঘ চার বছর পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলন সুষ্ঠু করতে গঠন করা হয়েছে ৪৪ সদস্যবিশিষ্ট প্রস্তুতি উপ-কমিটি। অন্যদিকে, সম্মেলনের মূল এজেন্ডা নতুন নেতৃত্ব বাছাই প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক ধাপ মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও সংগ্রহ কার্যক্রম চলছে তোড়জোড়ে। নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থিতার জন্য ২৫৩টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে, যেগুলোর অধিকাংশই জমা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্মেলনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ ততই বাড়ছে। সংগঠনের সাবেক নেতা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের উচ্চ মহলের সঙ্গে চলছে লবিং, গ্রুপিং ও তদ্বির। ব্যক্তিগত সম্পর্কের পাশাপাশি আঞ্চলিক সম্পর্কের টানেও এগিয়ে চলছে প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে এবারো কাঙ্ক্ষিত পদ পেতে বয়সের যোগ্যতা নিয়ে হিসাব কষছেন পদপ্রত্যাশী ছাত্রনেতারা।
ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, এবারে ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটিতে শুদ্ধি অভিযান চালানোর মাধ্যমে দলে ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের স্থান দেয়া হবে। সেই সঙ্গে অনুপ্রবেশকারীদেরও সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হবে। এজন্য পদপ্রত্যাশীর একাডেমিক যোগ্যতা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতির ব্যাকগ্রাউন্ড, অভিভাবকের রাজনৈতিক মতাদর্শসহ প্রার্থীর সামগ্রিক যোগ্যতার ভিত্তিতে কাঙ্ক্ষিত পদ লাভ করবেন। এজন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সাবেক এক ছাত্রনেতা জানান, এবার বিবাহিত, চাকরিজীবী ও অছাত্র কাউকেই কমিটিতে স্থান দেয়া হবে না। ত্যাগী, পরীক্ষিত, দক্ষ ও আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রাখা নেতারাই অগ্রাধিকার পাবেন।
তবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি মনোনয়ন নাকি নির্বাচনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত জল্পনা-কল্পনা চলছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির জন্য ৮৫টি জেলা শাখার ২৫ জন করে মোট ২ হাজার ১২৫ জন কাউন্সিলর রয়েছে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরাও এ কাউন্সিলরের অন্তর্ভুক্ত হবেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের ভোটে কেন্দ্রীয় দুই নেতা নির্বাচিত হওয়ার কথা থাকলেও সিন্ডিকেটের বেড়াজালে প্রতিবারই এই প্রক্রিয়া থমকে যায়। নেতৃত্বে আসে সিন্ডিকেট মনোনীত প্রার্থীরা।
ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত কমিটির হিসাব-নিকাশ ও অঞ্চলভিত্তিক কর্মী সংখ্যা বিবেচনায় এবার বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল থেকে শীর্ষ দুই পদের একটি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। কারণ হিসেবে বিগত দুই কমিটিতে এ অঞ্চল থেকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে কেউই আসেননি। তাছাড়া ছাত্রলীগের রাজনীতিতে এ অঞ্চলটি বরাবরই ফ্যাক্টর। অন্যদিকে সদ্য গঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে বরিশাল ও বাগেরহাট অঞ্চল থেকে নেতৃত্ব আসায় কেন্দ্রীয় কমিটিতে ওই অঞ্চলটির সম্ভাবনা আরো বেড়ে গেছে।
শীর্ষ দুই পদের একটি উত্তরবঙ্গ থেকে আসার সম্ভাবনাও রয়েছে। জানা গেছে, ২০০৬ সালে গঠিত কমিটির সভাপতি মাহমুদুল হাসান রিপনের পর থেকে উত্তরবঙ্গ থেকে তেমন কোনো নেতা বের হননি। এ কারণে এ এলাকাটি থেকে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আসতে কেন্দ্র ও ঢাবির সাবেক একাধিক নেতা চেষ্টা করছেন। ছাত্রলীগের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের একটি অংশও এই প্রক্রিয়ার পক্ষে কাজ করছে। এছাড়াও ময়মনসিংহ, খুলনা ও যশোর অঞ্চল থেকেও শীর্ষ দুই পদে পদায়ন হওয়ার ঢের সম্ভাবনা রয়েছে।
জ্যেষ্ঠতা এবং দলে ত্যাগের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুল কবির রাহাত, পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ, কেন্দ্রীয় উপ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, সহ-সম্পাদক আসাদুজ্জামান নাদিম, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আনু, সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক কাজী এনায়েত, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এরশাদুর রহমান চৌধুরী, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক রাইসুল ইসলাম জুয়েল, আইন সম্পাদক ময়েজউদ্দিন শরীফ রুয়েল, মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক শাহ নেওয়াজ প্রধান শুভ ও উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক বিপ্লব হাসান পলাশ।
আবার নেতৃত্বে তারুণ্য বিবেচনায় এগিয়ে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদ্য বিদায়ী কমিটির প্রচার সম্পাদক শাহিদুল ইসলাম শাহেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচএম আল-আমীন, ঢাবি শাখার সহ-সভাপতি আরিফুজ্জামান রোহান, ঢাবির সাংগঠনিক সম্পাদক চন্দ্রশেখর হালদার।