সাময়িকী.কম
আমি নরওয়েতে অবস্থান করছি আজ পাঁচ বছর ও পাঁচ দিন। ২০১০ সালের ৩০ শে নভেম্বর সকাল ৬ টায় নরওয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলাম ঢাকা থেকে। ঢাকা থেকে দুবাই, দুবাই থেকে ফ্রাঙ্কফুট এবং ফ্রাঙ্কফুট থেকে নরওয়ে, সব মিলিয়ে প্রায় ১৮ ঘন্টার ভ্রমন।
আর ১ লা ডিসেম্বর ছিল নরওয়েতে আমার প্রথম দিন। চারিদিকে প্রচুর তুষার, মাইনাস ২০ ডিগ্রী ঠান্ডা।
সব কিছু তুষারে মোড়ানো রূপকথার রাজ্যের মত লাগছিল।
প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতাম, কখনো বা পত্রিকা, রেডিও বা টিভিতে ইন্টারভিউ কখনো কখনো টিভিতে গিয়ে স্বশরীরে গিয়ে সংবাদের মাঝে সাক্ষাত্কার দিতে হয়েছে। বিষয় গুলো আমি খুব উপভোগ করেছি।
১ লা ডিসেম্বর এখানে পরিচিত হলাম স্থানীয় মেয়রের সাথে।
মেয়রের নাম থোরে ভেস্তবি, খুব আন্তরিক একজন মানুষ। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি আমাকে দাপ্তরিক ভাবে অভ্যর্থনা জানালেন, মেয়রের সঙ্গে একটা পত্রিকায় একটা ইন্টারভিউ দিলাম এবং মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য আমন্ত্রণ জানালেন।
মধ্যাহ্ন ভোজের সময় তিনি আমাকে জানালেন আগামী ২০ ডিসেম্বর ২০১০ নরওয়ের রাজা এবং রানী দ্রবাক শহর ভ্রমনে আসছেন। এই উপলক্ষ্যে তিনি বিশেষ কিছু করতে চান এবং তার পরিকল্পনার কথা আমাকে জানালেন, যে রাজা-রানীর আগমন উপলক্ষ্যে আমাকে সহ সাত জন কে সঙ্গে নিয়ে কেক বা পিঠা বানাতে চান এবং রাজা-রানীর সাথে মধ্যাহ্ন ভোজে আমন্ত্রণ জানালেন।
আমি তো শুনে খুব খুশি, ব্যাপারটা আমার কাছে রূপকথার মত লাগছিল। যাই হোক পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা সাতজন মিলে রাজা-রানীর জন্য পিঠে বানালাম। সবাই সবার মত বানালো আর আমি বানিয়েছিলাম বাংলাদেশী পুলি পিঠা।
এরপর দিন ঘনিয়ে এলো, আর রাজা-রানী-ও এই শহর ভ্রমনে এলেন, আর আমিও তাদের সাথে যোগ দিলাম মধ্যাহ্ন ভোজে।
রাজা-রানীর সাথে করমর্দন করলাম, এরপর মেয়র আমাকে রাজা-রানী'র সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। এরপর এক সঙ্গে খাবার খেলাম, মনে হচ্ছিল আমি যেন এই রূপকথার রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অতিথি।
এক প্রবীন দম্পতি আমাকে নাতনি সম্বোধন করে মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। এই রকম আরো অনেকেই আমাকে তাদের পরিজন সম্বোধন করতে লাগলেন। এখানে আসার পর পরিচিত হয়েছি অনেক উদার ও মহত হৃদয়ের সাথে, যারা আমাকে তাদের পরিবারের একজন মনে করে। আমি খুব মুগ্ধ এবং সুখী এদের স্নেহ- ভালবাসায়।
এরপর টানা দুই বছর নরওয়েজিয়ান ভাষা শেখার পর নরওয়েজিয়ান হিউমানেটিস একাডেমিতে ক্রিয়েটিভ আর্ট নিয়ে এক বছর লেখাপড়া করেছি।
বর্তমানে থ্রিডি এনিমেশন নিয়ে লেখাপড়া করছি নরওয়ের একটি বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, সেই সাথে ফ্রিল্যান্স কার্টুনিস্ট হিসাবে আঁকা আঁকি করছি নরওয়ের কিছু স্থানীয় পত্রিকায়। এছাড়া একটি সুইডিস ও জার্মান ম্যাগাজিনের জন্য সাম্প্রতিক কার্টুন করেছি।
এবং নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একটি প্রকল্পের অধীনে বাংলা ভাষার শিক্ষক হিসাবে কাজ করেছি। নরওয়ের দুটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় দুটি ওয়েব সাইট এবং নরওয়ের বৌদ্ধ এসোসিয়েশনের একটি ওয়েবসাইট আমার হাতে ডেভলপ করা ।
চলতি বছর বেস্ট অফ অনলাইন অ্যাক্টিভিজম অ্যাওয়ার্ড-২০১৫ বিজয়ী হয়েছি, পিপলস চয়েচ ফর বেঙ্গলী বিভাগ-এ, জার্মানি'র ডয়চে ভেলের দ্য বব্স থেকে টুনস ম্যাগের বাংলা ভাষা বিভাগকে এই পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হয়।
যুদ্ধের শিশু নামক একটি আন্তর্জাতিক কার্টুন প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলাম টুনস ম্যাগের ব্যানারে পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল নরওয়েজিয়ান কার্টুনিস্ট হাউজ এবং ফ্রিত অর্দ নামের দুইটি নরওয়েজিয়ান সংগঠন। উক্ত প্রদর্শনী ব্যাপক সারা ফেলেছিল, স্কুল কতৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসতেন এই প্রদর্শনী দেখাতে, আর প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত কার্টুন সমূহের উপরে আমি বক্তব্য দিতাম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে, এরপর শিক্ষার্থীরা যেকোনো একটি কার্টুন বাছাই করে তার উপরে একটি রচনা লিখত। এই প্রদর্শনীর কারণে অনেক ইতিবাচক সারা পেয়েছি অনেক জায়গা থেকে।
ইতোমধ্যে নরওয়ের বেশ কিছু শহরে ও সুইডেনের একটি শহরে প্রদর্শিত হচ্ছে এবং আগামীতে আরো বেশ কিছু স্থানে প্রদর্শিত হবে।
গত বছর ড্রয়িং গ্রুপ নামে একটা সংগঠন দার করিয়েছি যাতে বর্তমানে ১৭ জন নরওয়েজিয়ান পেশাদার ও অপেশাদার শিল্পী সদস্য রয়েছেন। এই সংগঠনের ব্যানারে আমরা সপ্তাহের একটি বিশেষ দিনে ও বিশেষ স্থানে মিলিত হয়ে ছবি আঁকি।
টুনস ম্যাগের ব্যানরে আগামী বছর মার্চে নারী অধিকার বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক কার্টুন প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করতে যাচ্ছি।
কার্টুনিস্ট আরিফ ফান্ড নামে একটি ফান্ড গঠনের উদ্যোগ হাতে নিয়েছি, যেখান থাকে বাংলাদেশের দরিদ্র কার্টুনিস্ট, চিত্রশিল্পী, স্বল্প দৈর্ঘ্য ও এনিমেশন নির্মাতাদের অনুদান দেয়া হবে। এই অনুদানের অর্থ সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব তহবিল থেকে প্রদান করা হবে।
বিগত পাঁচ বছরে একক ও যৌথ, নরওয়ে, সুইডেন সহ অন্যান্য দেশে সব মিলিয়ে ত্রিশ-এর উপরে কার্টুন প্রদর্শনীতে অংশগ্রহন করেছি।
নরওয়েজিয়ান কার্টুনিস্ট হাউজে আজ সন্ধায় আমার পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে এই শহরের সাবেক ও বর্তমান মেয়র সহ অনেক গন্য মান্য ব্যাক্তি বর্গ উপস্থিত হয়েছিলেন।
আরিফুর রহমান, টুনস ম্যাগের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক , নরওয়ে প্রবাসী বাংলাদেশী কার্টুনিস্ট
আর ১ লা ডিসেম্বর ছিল নরওয়েতে আমার প্রথম দিন। চারিদিকে প্রচুর তুষার, মাইনাস ২০ ডিগ্রী ঠান্ডা।
সব কিছু তুষারে মোড়ানো রূপকথার রাজ্যের মত লাগছিল।
প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতাম, কখনো বা পত্রিকা, রেডিও বা টিভিতে ইন্টারভিউ কখনো কখনো টিভিতে গিয়ে স্বশরীরে গিয়ে সংবাদের মাঝে সাক্ষাত্কার দিতে হয়েছে। বিষয় গুলো আমি খুব উপভোগ করেছি।
১ লা ডিসেম্বর এখানে পরিচিত হলাম স্থানীয় মেয়রের সাথে।
মেয়রের নাম থোরে ভেস্তবি, খুব আন্তরিক একজন মানুষ। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি আমাকে দাপ্তরিক ভাবে অভ্যর্থনা জানালেন, মেয়রের সঙ্গে একটা পত্রিকায় একটা ইন্টারভিউ দিলাম এবং মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য আমন্ত্রণ জানালেন।
মধ্যাহ্ন ভোজের সময় তিনি আমাকে জানালেন আগামী ২০ ডিসেম্বর ২০১০ নরওয়ের রাজা এবং রানী দ্রবাক শহর ভ্রমনে আসছেন। এই উপলক্ষ্যে তিনি বিশেষ কিছু করতে চান এবং তার পরিকল্পনার কথা আমাকে জানালেন, যে রাজা-রানীর আগমন উপলক্ষ্যে আমাকে সহ সাত জন কে সঙ্গে নিয়ে কেক বা পিঠা বানাতে চান এবং রাজা-রানীর সাথে মধ্যাহ্ন ভোজে আমন্ত্রণ জানালেন।
আমি তো শুনে খুব খুশি, ব্যাপারটা আমার কাছে রূপকথার মত লাগছিল। যাই হোক পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা সাতজন মিলে রাজা-রানীর জন্য পিঠে বানালাম। সবাই সবার মত বানালো আর আমি বানিয়েছিলাম বাংলাদেশী পুলি পিঠা।
এরপর দিন ঘনিয়ে এলো, আর রাজা-রানী-ও এই শহর ভ্রমনে এলেন, আর আমিও তাদের সাথে যোগ দিলাম মধ্যাহ্ন ভোজে।
রাজা-রানীর সাথে করমর্দন করলাম, এরপর মেয়র আমাকে রাজা-রানী'র সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। এরপর এক সঙ্গে খাবার খেলাম, মনে হচ্ছিল আমি যেন এই রূপকথার রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অতিথি।
এক প্রবীন দম্পতি আমাকে নাতনি সম্বোধন করে মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। এই রকম আরো অনেকেই আমাকে তাদের পরিজন সম্বোধন করতে লাগলেন। এখানে আসার পর পরিচিত হয়েছি অনেক উদার ও মহত হৃদয়ের সাথে, যারা আমাকে তাদের পরিবারের একজন মনে করে। আমি খুব মুগ্ধ এবং সুখী এদের স্নেহ- ভালবাসায়।
এরপর টানা দুই বছর নরওয়েজিয়ান ভাষা শেখার পর নরওয়েজিয়ান হিউমানেটিস একাডেমিতে ক্রিয়েটিভ আর্ট নিয়ে এক বছর লেখাপড়া করেছি।
বর্তমানে থ্রিডি এনিমেশন নিয়ে লেখাপড়া করছি নরওয়ের একটি বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, সেই সাথে ফ্রিল্যান্স কার্টুনিস্ট হিসাবে আঁকা আঁকি করছি নরওয়ের কিছু স্থানীয় পত্রিকায়। এছাড়া একটি সুইডিস ও জার্মান ম্যাগাজিনের জন্য সাম্প্রতিক কার্টুন করেছি।
এবং নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একটি প্রকল্পের অধীনে বাংলা ভাষার শিক্ষক হিসাবে কাজ করেছি। নরওয়ের দুটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় দুটি ওয়েব সাইট এবং নরওয়ের বৌদ্ধ এসোসিয়েশনের একটি ওয়েবসাইট আমার হাতে ডেভলপ করা ।
চলতি বছর বেস্ট অফ অনলাইন অ্যাক্টিভিজম অ্যাওয়ার্ড-২০১৫ বিজয়ী হয়েছি, পিপলস চয়েচ ফর বেঙ্গলী বিভাগ-এ, জার্মানি'র ডয়চে ভেলের দ্য বব্স থেকে টুনস ম্যাগের বাংলা ভাষা বিভাগকে এই পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হয়।
যুদ্ধের শিশু নামক একটি আন্তর্জাতিক কার্টুন প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলাম টুনস ম্যাগের ব্যানারে পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল নরওয়েজিয়ান কার্টুনিস্ট হাউজ এবং ফ্রিত অর্দ নামের দুইটি নরওয়েজিয়ান সংগঠন। উক্ত প্রদর্শনী ব্যাপক সারা ফেলেছিল, স্কুল কতৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসতেন এই প্রদর্শনী দেখাতে, আর প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত কার্টুন সমূহের উপরে আমি বক্তব্য দিতাম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে, এরপর শিক্ষার্থীরা যেকোনো একটি কার্টুন বাছাই করে তার উপরে একটি রচনা লিখত। এই প্রদর্শনীর কারণে অনেক ইতিবাচক সারা পেয়েছি অনেক জায়গা থেকে।
ইতোমধ্যে নরওয়ের বেশ কিছু শহরে ও সুইডেনের একটি শহরে প্রদর্শিত হচ্ছে এবং আগামীতে আরো বেশ কিছু স্থানে প্রদর্শিত হবে।
গত বছর ড্রয়িং গ্রুপ নামে একটা সংগঠন দার করিয়েছি যাতে বর্তমানে ১৭ জন নরওয়েজিয়ান পেশাদার ও অপেশাদার শিল্পী সদস্য রয়েছেন। এই সংগঠনের ব্যানারে আমরা সপ্তাহের একটি বিশেষ দিনে ও বিশেষ স্থানে মিলিত হয়ে ছবি আঁকি।
টুনস ম্যাগের ব্যানরে আগামী বছর মার্চে নারী অধিকার বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক কার্টুন প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করতে যাচ্ছি।
কার্টুনিস্ট আরিফ ফান্ড নামে একটি ফান্ড গঠনের উদ্যোগ হাতে নিয়েছি, যেখান থাকে বাংলাদেশের দরিদ্র কার্টুনিস্ট, চিত্রশিল্পী, স্বল্প দৈর্ঘ্য ও এনিমেশন নির্মাতাদের অনুদান দেয়া হবে। এই অনুদানের অর্থ সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব তহবিল থেকে প্রদান করা হবে।
বিগত পাঁচ বছরে একক ও যৌথ, নরওয়ে, সুইডেন সহ অন্যান্য দেশে সব মিলিয়ে ত্রিশ-এর উপরে কার্টুন প্রদর্শনীতে অংশগ্রহন করেছি।
নরওয়েজিয়ান কার্টুনিস্ট হাউজে আজ সন্ধায় আমার পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে এই শহরের সাবেক ও বর্তমান মেয়র সহ অনেক গন্য মান্য ব্যাক্তি বর্গ উপস্থিত হয়েছিলেন।
আরিফুর রহমান, টুনস ম্যাগের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক , নরওয়ে প্রবাসী বাংলাদেশী কার্টুনিস্ট