গ্রিক পুরাণে যেমন রয়েছে প্রেম ও বিরহের উপাখ্যান। আছে যুদ্ধ-বিগ্রহ, বিদ্রোহ। তেমনি রয়েছে অনেক অত্যাচার নিপীড়নের উপাখ্যানও। পারিবারিক নির্যাতনের এক করুণ উপাখ্যান ফিলোমেলার উপাখ্যান।
এথেন্সের রাজা পেন্ডিয়ন বিয়ে করেছিলো তার খালা জেউকসাইপকে। তাদের ঘরে জন্ম নেয় দুই কন্যা প্রকনি ও ফিলোমেলা আর জমজ দুইপুত্র ইরেখথিউস ও বুতেস। কিন্তু পেন্ডিয়নের ছেলেমেয়েদের প্রতি কোন খেয়াল ছিলো না। তাকে পেয়ে বসেছিলো রাজ্য বিস্তারের নেশা। যখন পেন্ডিয়ন এ্যাবদাকাস আক্রমন করতে যাবে তখন প্রতিবেশী থ্রাস রাজ্যের রাজা তেরেউসের সাহায্যকামনা করেন। এবং তেরেউসের সহায়তায় পেন্ডিয়ন যুদ্ধে জিতে যায়। সেই কৃতজ্ঞতা থেকে এবং ভবিষ্যতে আরো সাহায্য পাওয়ার চিন্তা থেকে পেন্ডিয়ন তেরেউসের সাথে তার বড় কন্যা প্রকনির বিয়ে দিয়ে দেন।
প্রকনি-ফিলোমেলা দুই বোনের আত্মার বন্ধন ছিঁড়ে তেরেউস প্রকনিকে নিয়ে গেলেন সুদূর থ্রাসে। থ্রাসেই কাটছিলো প্রকনির দিনগুলো। থ্রাসে তেরেউসের প্রাসাদটি এজিয়ান সমুদ্রের কাছে নিবিড় অরণ্যো ঘেরা। বোন ফিলোমেলার জন্য মন খারাপ নিয়েই কেটে যাচ্ছিলো প্রকনির দিন। এরমাঝে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেয় প্রকনি। নাম রাখে ইতিস। ছেলেটিকে প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসতো তেরেউস।
প্রকনির অনেকদিন হয়ে যায় থ্রাস বাস। তার মন কাঁদে প্রাণের বোন ফিলোমেলার জন্য। সে তেরেউসের কাছে এথেন্স যাওয়ার কথা তোলে, বলে বোনের জন্য তার মনের টান, ভেতরের কান্নার কথা। তেরেউস বলে, প্রকনির যাওয়ার দরকার নাই। সে-ই যাবে এথেন্স, ফিলোমেলাকে নিয়ে আসবে। যেই কথা সেই কাজ। তেরেউস এথেন্স যায় ফিলোমেলাকে আনতে। বোনের সাথে দীর্ঘদিন পর দেখা হবে এই আনন্দে সাগ্রহে রাজী হয় ফিলোমেলা। কিন্তু সুন্দরী ফিলোমেলাকে দেখে তেরেউস মোহিত হয়। কী রূপ তার! সমুদ্রপথে জাহাজে করে যাওয়ার সময় তেরেউস ফেলোমেলাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ফিলোমেলা বোনের সংসার ভাঙতে রাজী হয় না। যখন কিছুতেই পাওয়া যাচ্ছিলো না রূপসী ফিলোমেলাকে তখন জাহাজ থ্রাসের উপকূলে থামার সাথে সাথে ছলে
তেরেউস তাকে টেনে নিয়ে যায় গভীর অরণ্যে আর ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর ফিলোমেলা চিৎকার করে বলে যে সে সব বলে দিবে তার বোনকে, এই অরণ্যকে, পাখিকে, আকাশকে এবং দেবতাদেরকেও। প্রচণ্ড রেগে গিয়ে তেরেউস ফিলোমেলার জিভ কেটে দেয়। তারপর তাকে একটা পোড়াবাড়িতে আটকে রেখে চলে যায়। নিজের যন্ত্রণার কথা বোন প্রকনিকে উদ্দেশ্য করে ফিলোমেলা নিজের কাপড়ে সেলাই করে লিখে রাখে। সেই কাপড় থ্রাসের কোন শিকারী বনে শিকার করতে এসে পায় আর গোপনে পৌঁছে দেয় প্রকনিকে। প্রকনি এসে উদ্ধার করে ফিলোমেলাকে। প্রতিশোধ নেয়ার জন্য প্রকনি তার নিজের ছেলে ইতিসকে হত্যা করে তার মাংস রান্না করে খেতে দেয় তেরেউসকে। তেরেউস না জেনেই নিচের ছেলের মাংস খায় প্রাণ ভরে। খাওয়ার পর ইতিসের কাটা মস্তক এনে দেয় প্রকনি। তেরেউস তা দেখে ক্ষোভে প্রকনিকে তাড়া করে মারার জন্য। প্রকনি বোন ফিলোমেলাকে নিয়ে দৌড়ে পালাতে থাকে। আর দেবতাদের কাছে প্রার্থনা করে পাখি করে দেয়ার জন্য যেন উড়ে পালিয়ে যেতে পারে। দেবতারা সব দেখছিলেন। যেহেতু নিজপুত্রকে হত্যার দায় ছিলো প্রকনির। তাই দেবতারা তাদের তিনজনকেই পাখি বানিয়ে দেয়। প্রকনিকে রূপান্তর করে নাইটেঙ্গেল পাখিতে। সে তার পুত্র ইতিসকে ডেকে ডেকে কাঁদে- ‘ইতু-ইতু’ বলে। তাই নাইটেঙ্গেলের সুর এতো করুণ। ফিলোমিলাকে বানায় নির্বাক চাতক পাখি। আর তেরেউসকে রূপান্তর করে হুপি পাখিতে। হুপি পাখি ডাকে ‘পৌ’ ‘পৌ’ রবে। গ্রিক ভাষায় যার অর্থ ‘কোথায়’ ‘কোথায়’?