সাময়িকী.কম
ঢাকা : টকশোতে অংশ নিয়ে আলোচনায় নারায়ণগঞ্জের এমপি শামীম ওসমান ও সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। এ টকশোতে দু'জনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য-বিনিময় নাটকীয় বলে মনে হলেও তা ঘটেছে বাস্তবে।
মঙ্গলবার রাতে একাত্তর টেলিভিশনে প্রচারিত এক টকশোতে পুরো সময়ই তারা একে অপরের প্রতি উত্তেজিত আচরণ করেন। একে অপরকে অভিহিত করেন বেদায়ব হিসেবে। তাদের আচরণে বিব্রত হন অপর আলোচক 'সাপ্তাহিক' সম্পাদক গোলাম মোর্তজা ও টকশো সঞ্চালক শাকিল আহমেদ।
এ টকশোতে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডার এর ঘটনা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েই তাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্কের সূত্রপাত হয়। তারপর বিজ্ঞাপন বিরতির সময়েও একে অপরের সাথে বাকতর্ক করেছেন।
এ বিষয়ে সাপ্তাহিক সম্পাদক গোলাম মোর্তজা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, 'বেশ কয়েকবার শামীম-আইভী বিরতিতে যেভাবে উত্তেজিত বাক্যবিনিময় করেছেন, শামীম ওসমান আইভীকে প্রায় আক্রমণ করতে উদ্যত হয়েছেন, তাতে স্টুডিওতে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল।' শামীম ওসমান আইভীকে বলেছেন, 'তুই নারায়ণগঞ্জে চল, তোরে দেখাইতেছি...।' আইভী বলেন, 'চল নারায়ণগঞ্জে... কী করবি?'
একাত্তর টেলিভিশনের ষ্টুডিও থেকে প্রচারিত টকশোতে প্রথমেই মেয়র আইভী বলেন, নারায়ণগঞ্জের গডফাদার একজনই সেটা এ কে এম শামীম ওসমান এবং তার সৃষ্টি আরও কিছু গডফাদার। নূর হোসেনকে প্রথমে গণমাধ্যমের সঙ্গে কেন কথা বলতে দেওয়া হলো না? গণমাধ্যমকে ফেস করল কে? নজরুলের মৃত্যুর পরও যখন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান সাহেব ওখানে গিয়ে বক্তৃতা করলেন তখন উনিই বললেন, নূর হোসেনই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। তার পরদিনই উনি টেলিফোনে বলছেন, 'তুমি চলে যাও'। তাহলে গডফাদার বলাটা তো আমার ভুল হয়নি। আমি আমার অবস্থানে অনড়।
জবাবে শামীম ওসমান বলেন, সে গডফাদার মিন করেছে শামীম ওসমানকে। এটা ওর মিনিংয়ের ব্যাপার না। যাকে আমি দেখি করাপশনের একজন নায়িকা হিসেবে তার ব্যাকগ্রাউন্ড, তার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড সবকিছু মিলে তার প্রশ্নের উত্তর আমি সরাসরি তাকে অ্যাটাক করতে চাই না। এটা আমার রুচিতে বাধে। প্রতিটা জিনিসের একটা সৌজন্যতা, একটা ভদ্রতা, কথা বলার স্টাইল- সবকিছুর মধ্যে একটা মানুষের ব্লাডের পরিচয় পাওয়া যায়। সে এখানে বলল, 'তাকে (শামীম ওসমান) গডফাদার মিন করি'। সঞ্চালকের দিকে তাকিয়ে বলেন, আপনি বলেছেন কী কী প্রমাণ আপনার কাছে আছে? উনি প্রমাণ দেননি। উনি কিছু কথা বলেছেন।
এ পর্যায়ে টকশো নিয়েও রেগে যান শামীম ওসমান।
তিনি বলেন, আপনারা বইলা আনছেন এক গেস্টের নামে, আনছেন আরেক গেস্ট। কথাও শেষ করতে দেবেন না- তাহলে তো হবে না ভাইজান। এটা খুব সেনসিটিভ একটা জায়গা।
শামীম ওসমানের কথা পুরোটা শেষ না করতেই কথা কেড়ে নিয়ে আইভী বলেন, 'আমি তাহলে চলে যাব। এক্সকিউজ মি... এক্সকিউজ মি... সঞ্চালক সাহেব আমি জানতে চাচ্ছি আপনি কি উনাকে অন্যের কথা বলে এখানে নিয়ে এসেছেন? তাহলে আমি উনার সঙ্গে বসব না। বলেই ফাইল হাতে উঠে দাঁড়ান আইভী।
সঞ্চালক আইভীকে ম্যানেজ করতে গিয়ে বলেন, উনি কিন্তু আলোচনা শুরু করেছেন। আইভী বলেন, নো... নো... উনি শুরু করে আবার বলেছেন উনাকে একজনের কথা বলে আরেকজনকে নিয়ে আসা হয়েছে... এ ধরনের একজন মিথ্যাবাদীর সঙ্গে বসা যায় না।
পাল্টা জবাবে শামীম ওসমান বলেন, মিথ্যাবাদী তুমি। কিছু বলতে হয় অনুষ্ঠানের পরিচালককে বল, আমাকে বলবা না।
এরপর আইভী সঞ্চালকের ওপর খেপে গিয়ে বলেন, আপনি কেন আমার কথা উনাকে বলেননি? কেন মিথ্যা বলে উনাকে এনেছেন? উত্তরে সঞ্চালক বলেন, তাকে বলা হয়েছে। আপনি যখন হ্যাঁ বলেছেন তখন থেকে তার ফোনটা বন্ধ ছিল। কিছুক্ষণ আগে উনি ফোনটা ধরেছেন। এখানে আসার পরপরই জানিয়েছি আপনার কথা। পাশ থেকে শামীম ওসমান বলেন, আমি মোটেই জানি না। আইভীকে উদ্দেশ করে বলেন, তুমি উঠে যাচ্ছ উঠে যাও, বেয়াদবি করো না। ফেস কর। আইভীও খেপে গিয়ে পাল্টা জবাব দেন, 'শামীম ওসমান। বেয়াদব ইউ।' এবার সঞ্চালকের দিকে তাকিয়ে শামীম ওসমান বলেন, বুঝতে পেরেছেন তো ফ্যামিলির পরিচয়। এই ধরনের কালচারের মেয়ে... চাক্কু মারা ওহেদ আলীর নাতনি তো, চুনকার মেয়ে তো, এইজন্যই মুন্সীগঞ্জে ভেগে গিয়েছিল, চার বছর ছয় মাস ছিল ওখানে।
এক পর্যায়ে আইভী সঞ্চালকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'হোয়াই? হোয়াই? সে কেন বলল আপনি তাকে মিথ্যা কথা বলে এখানে নিয়ে এসেছেন?' শামীম ওসমান কিছুটা নিচু স্বরে জবাব দেন, মিথ্যা কথা বলি নাই। তুমি আর কোনো সময়, ফারদার এভাবে কথা বলবা না, বেয়াদবের মতো। জাস্ট বেয়াদব।
আইভী পুনরায় তার আসনে বসে বলেন, আমি দুইটা কথা বলে চলে যাব। পরে বলেন, কথা বলব না কেন? অবশ্যই বলব। এই বলে আলোচনা শুরু করেন। এ সময় শামীম ওসমান বলেন, আমি বলেছিলাম তার যে ন্যাচার এতে তো টেলিটক হয় না।
তিনি আরো বলেন, নজরুল কীভাবে খুন হলো সে ব্যাপারে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি হয়েছে। নূর হোসেনের সঙ্গে যদি আমার খাতির থাকত তাহলে তো আমি তাদের পিনপয়েন্ট করতাম না। কয়েক দিন পর পত্রিকায় এসেছে এই মেয়র ও রফিউর রাব্বি বলেছেন, র্যাব এই ঘটনা ঘটায়নি। কাকে সেভ করার জন্য? সে যদি খারাপ ছেলে হয় তাহলে নূর হোসেনকে কেন দুইটা ইমপরট্যান্ট কমিটির সভাপতি করা হলো। নজরুলকে তো দেওয়া হয়নি। এ পর্যায়ে আইভীর বিরুদ্ধে টেন্ডার নিয়ে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তোলেন শামীম ওসমান।
আইভী জবাব দেন, ওপেন ফ্লোরে কমিটি করা হয়েছে। স্বাধীনভাবে কে কোন কমিটিতে যেতে চায় সেভাবে দেওয়া হয়েছে। আমি নিজে কমিটি করে দেব এমন বিধান নেই। একাধিক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে গেলে ভোটাভুটি বা সমঝোতার মাধ্যমে হয়। তারপর তিনি শামীম ওসমানের অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন কাগজপত্র বের করেন।
এরপর শামীম ওসমান বলেন, এসব কাগজপত্রের কোনো ভিত্তি নেই। তিনিও প্যাকেট খুলে বেশকিছু কাগজ টেনে বের করে বলেন, 'এই যে... এই যে দুর্নীতির প্রমাণ'। দু'জনই যার যার কাগজপত্র আলোচনার টেবিলে রাখেন।
টেলিভিশনের পর্দায় তাদের এমন রূপে দেখে জনমনে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।