![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhj8lbTk9bKUqUOIa4gUqnXr-_zZAjk7pNtgBMRyxrmqimZxGSc8fjjv-a92iR2Pto6xmXP0JziLI3YygccqZcyseri5Azb7hEOL8JnhgFZBTrG9u77K77F2-NpEkgCJ4HfcPryFKkDVd0/s1600/sakib.jpg)
সাময়িকী.কম
সাকিব আল হাসানকে ৬ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি আরো যে সাজা দেয়া হয় তা হচ্ছে ‘২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশি কোনো লীগে খেলার জন্যও অনাপত্তিপত্র (এনওসি) দেওয়া হবে না তাকে। এখন থেকে বিজ্ঞাপনের শুটিংসহ যে কোনো ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে অংশ নিতে হলে বিসিবির অনুমতি নিতে হবে’। এছাড়াও বিসিবি জানিয়েছে এখন থেকে সাকিব যদি কোন বিজ্ঞাপন চিত্রে কাজ করতে চায় তাতেও আগে থেকে বিসিবির অনুমুতি নিতে হবে। আর যদি সাকিব এসব নিয়মের কোন ভঙ্গ করে তবে তাকে আজীবন নিষিদ্ধ করা হবে।
তবে গত সোমবার বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই অবিস্মরণীয় নজিরবিহীন ঘটনার পুরনাঙ্গ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সাকিবের প্রতি বিসিবির এই শাস্তি প্রয়োগ যতটা না ক্রিকেটিও তার থেকে অনেক বেশি ব্যক্তিগত। আর এই ব্যক্তিগত বিষয়টি অনেকটা ক্রোধ হিসেবেই উঠে এসেছে যখন বিসিবি সভাপতি ও সরকারদলীয় সাংসদ নাজমুল হাসান পাপন সংবাদ সম্মেলনে সাকিবের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করছিলেন। এসময় পাপন সাকিবের বিষয়ে কথা বলতে যেয়েই বারবার সাকিবকে তুই তাকারি এবং ও, ও বলে সম্বোধন করছিলেন। যা ব্যক্তিগত ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই মনে হয়েছে। এসময় পাপনের দেহভঙ্গিতে ছিল প্রতিশোধ চরিতার্থ করার আত্মতৃপ্তি।
এসময় পাপন একবার বলেন, ‘ওর বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো শুনেছি…কতগুলো…এত অমানবিক মনে হয়েছে যে আমরা অনেকে ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম। কীভাবে একটা মানুষ এমন করতে পারে!
এখন জনগনের প্রশ্ন হচ্ছে সাকিব এমন কি কাজ করেছে যা ক্রিকেটের মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে অমানবিক মনে হতে পারে? খেলার সাথে মানবিকতা অমানবিকতার সম্পর্কই বা কোথায়?
এছাড়াও পাপন বলেন ‘আর বাড়তে দেওয়া যাবে না’? এই বিষয়টি অনেকেটা সিনেমার ডায়লগ মনে হয়েছে সবার কাছে।
এদিকে পাপন বলতে না বলতে অবশ্য সাকিবের পেছনে বোর্ডের কর্তাদের নাখোশ হয়ার কারণ বলবনা বলবনা করে বলেই দিলেন, তিনি আমতা আমতা করতে করতে সাংবাদিকদের বলেন, ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশের তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচের খেলা দেখতে গিয়ে সাকিবের স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশিরকে ইভটিজিংকে কেন্দ্র করে যা ঘটেছে তার খণ্ডাংশ।
ওই দিন কি হয়েছিলো গ্যালারীতে? ভিআইপি গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডে বসে খেলা দেখতে আসা চার জন তরুণ সাকিবের স্ত্রীকে ইভটিজিং করে। নিপীড়নের ঘটনা জেনে বউকে হেফাজত করতে ছুটে যান সাকিব। এক অপরাধীকে ঘটনাস্থলেই কিল-ঘুষি দেন তিনি। এ ঘটনায় চার অপরাধীর বিরুদ্ধে মামলাও করেন অলরাউন্ডার সকিব।
আবার চলুন জেনে নেয়া যাক ঘন্টনার নেপথ্যে আসল ঘটনাই বা কি?
সবাই যদি খেলা করেন তবে দেখতে পাবেন বিসিবি সভাপতি হয়েও পাপন দেশের একজন ক্রিকেটারের স্ত্রীকে অপমান করার ঘটনার বিষয়টি আমলে নেন নি, তিনি কেবল সাকিবের ইভটিজার দের গায়ে হাত দেয়াটাই আমলে নিয়েছেন। অথচ দেশের ক্রিকেট সংস্থার প্রধান হিসেবে খেলার মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে যদি ক্রিকেটারের পরিবারের উপর হুমকি আসে তবে তা বোর্ডের সচেতন থেকেই দেখা উচিত। কিন্তু বিসিবি সভাপতি একজন জঘন্য ইভটিজারের অপরাধ চেপে রাখতে চাইলেন।
অপরদিকে পাপন বলেন সাকিবের ওই সময়ে গ্যালারীতে যাওয়া এবং ‘একটি ছেলে’র নিপীড়ন থেকে স্ত্রীকে হেফাজত করতে যাওয়া নাকি পাপনের চোখে ‘ধৃষ্টতা’! আর এই ধৃষ্টতাকে ‘আর প্রশ্রয় দেওয়া যায় না’ বলে বিসিবি প্রধানের সে কি দৃঢ়তা!
আসলে এই ঘটনার পেছনে মূল ইতিহাস আমরা ওই অনলাইন পোর্টালের তদন্ত অনুযায়ী তুলে ধরলাম আপনাদের জন্য-
“সাকিবের স্ত্রীকে নিপীড়ন করার সাথে জড়িত চার তরুণই কথিত অভিজাত পরিবারের সদস্য। তাদের একজন রাহিদ রহমানকে (২৩) গত ১৮ জুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীর ১০ নম্বর রোডের নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতার হওয়া তরুণ ইভটিজিংয়ের মত ফৌজদারি অপরাধে জড়িত হলেও তিনি অভিজাত পরিবারের সন্তান। তার বাবা দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বজলুর রহমান।
এছাড়া অন্য তিন জন ইভটিজারও অভিজাত পরিবারেরই সন্তান। তাদের একজন হলেন চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত সরকারদলীয় এক সাংসদের ছেলে।
ঘটনাচক্রে এই অভিজাত টিজারদের একজনের বাবা বিসিবি প্রধান পাপনের বন্ধু। পাপন যেই ক্লাবের হয়ে ক্রীড়া সংগঠক পরিচয়ে বিসিবির সভাপতি হয়েছেন, ইভটিজারের বাবা আবার সেই ক্লাবের একজন পরিচালক।
বিশ্বের খ্যাতিমান ক্রিকেটার হয়েও স্ত্রীর নিপীড়িত হওয়ার ঘটনায় তিনি বিসিবিকে পাশে পাননি। বরং বিসিবির পক্ষপাত ছিল ইভটিজারদের পক্ষে। এই পক্ষপাতের কারণেই জাতীয় ক্রিকেট দলের টিম হোটেলে গিয়ে ব্যবসায়ী বজলুর রহমান ও তার স্ত্রী সাকিবকে মামলা তুলে নিতে চাপ দিতে পেরেছেন।
অবশ্য সাকিব অপরাধীদের চাপ সত্ত্বেও মামলা চালানোর ব্যাপারে অটল থাকেন। এতে তিনি বিসিবির চাপের মুখে পড়েন, পাশে দাঁড়ানোর বদলে তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তুলে শাস্তি দেয়ার পায়তারা করে বিসিবি।
তবে বাংলাদেশের অভিজাতরা যতখানি অভিজাত হোন না কেন সাকিবকে দেখে নেয়াটা তাদের জন্য রিক্সাঅলাদের চড় মারার মত সহজ ব্যাপার নয় কখনোই। সাকিব বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক। দেশ-বিদেশের ক্রিকেটপ্রেমীর অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে তার প্রতি।
গুরুত্বপূর্ণ হল ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সাকিব আল হাসানকে বিশেষ পছন্দ করেন। তার খেলার মুগ্ধ সমর্থক তিনি। তাই সাকিবের জ্বর হলেও তাকে হাসপাতালে দেখতে যান প্রধানমন্ত্রী।
ফলে সাকিবকে শিকার করতে দরকার ছিল চক্রান্তের। যেই চক্রান্ত সামনে রাখলে ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে তার ক্রিকেট খেলা নিষিদ্ধ করা যায়।
চক্রান্তের ধাপগুলো দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না সাকিব বিরোধীরা কত গভীর পানির রুই-কাতলা। প্রথমে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (সিপিএল) খেলতে যাওয়া নিয়ে ফাঁদ পাতা হল, তারপর অসত্য প্রচারণা চালিয়ে প্রথমে তার প্রতি জনমতের একাংশকে বিগড়ে দেয়া হল।
ব্যস, হয়ে গেল। সাকিব বধের যজ্ঞ প্রস্তুত করতে আর কোন অসুবিধা থাকল না ইভটিজার অভিজাতদের সমর্থক বিসিবির অভিজাতদের।
সাকিব সিপিএল খেলার অনাপত্তি পত্র (এনওসি) যোগার করতে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির প্রধান আকরাম খানের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি সাকিবকে বলেছিলেন বিসিবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করতে।
নিজামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি সাকিবকে ফের আকরাম খানের সাথেই যোগাযোগ করতে বলেন। এ দফার যোগাযোগে আকরাম তাকে সিপিএলে খেলতে সমস্যা নেই জানিয়ে মৌখিক অনুমতি দিলেন এবং বললেন দেশে ফিরলে এনওসি সাইন করে দেবেন।
কিন্তু আকরাম খানের আশ্বাসে অনাপত্তি ছাড়াই সিপিএল খেলতে যাওয়াই যে ফাঁদে পা দেয়া তা টেরও পাননি সাকিব।
তাই গত বুধবার স্ত্রীকে নিয়ে সাকিব দেশ ছাড়ার পরপরই কলকাঠিগুলো নড়েচড়ে ওঠে। সিপিএল খেলতে বারবাডোজ যাওয়ার পথে লন্ডনে অবস্থান কালেই তাকে যত তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে জাতীয় দলের অনুশীলনে যোগ দিতে বলে দেয় বিসিবি।
বিসিবির নোটিশ পেয়ে গত রোববার দেশে ফিরে আসেন সাকিব। কিন্তু এর মধ্যেই নয়া কোচ চন্দ্রিকা হাথরুসিংয়ের বরাত দিয়ে দেশের পক্ষে সাকিবের ক্রিকেট না খেলার হুমকিসহ নানা অভিযোগের জোরালো প্রচারণা হয়ে গেছে।
তাই দেশে ফিরে সাকিব দেশের হয়ে আরো দশ বছর ক্রিকেট খেলতে চাওয়ার কথা বলেও তার দেশপ্রেমের প্রমাণ দিতে পারলেন না। বরং ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে বসাতে তার সব অর্জনই এক ঘষাতেই মুছে দেয়া হল।
কিন্তু ঘটনার মূলে যখন উম্মে আহমেদ শিশির নামক একজন নারীর ইভটিজিংয়ের শিকার হওয়া, তখন প্রশ্নটি আসলে বাংলাদেশের নারীর নিরাপত্তার সংক্রান্ত।
এখন কথা হচ্ছে, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার যখন স্ত্রীকে নিপীড়ন থেকে রক্ষা করতে গিয়ে শাস্তির মুখোমুখি হয়ে যান তখন সাধারণ মানুষ কিভাবে স্ত্রী-বোন-বান্ধবীদের অভিজাত বখাটেদের হাত থেকে রক্ষা করবেন?